পালে যেন বাঘ পড়ল!
টাকা দিই। সেই টাকা খরচের সবিস্তার হিসেব দাও। নইলে পরের বার থেকে বন্ধ হয়ে যাবে অনুদান।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এই হুমকি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। ফি-বছর তারা যে-আর্থিক সাহায্য দেয়, সেই টাকা ঠিকঠাক খরচ হচ্ছে কি না, এ বার তারই হিসেব চেয়েছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। সাধারণত এ-সব ক্ষেত্রে চিঠি লিখে তাগাদা দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসারকে টাকা খরচের হিসেবপত্র নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ডেকে পাঠিয়েছে ইউজিসি। তলব করা হয়েছে কলকাতা, প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, বর্ধমান-সহ রাজ্যের মোট ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
শুধু তলব করেই ক্ষান্ত হয়নি উচ্চশিক্ষার ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। হিসেব না-মিললে পরবর্তী বছরের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। হিসেব তলবের এমন ঘটনা বিরল নয় ঠিকই। তবে টাকা বন্ধ করে দেওয়ার এ-হেন হুমকি নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তারা।
হঠাৎ এমন হুমকি কেন?
ইউজিসি সূত্রের খবর, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই নিয়মিত টাকা খরচের হিসেব দিচ্ছে না। আবার কেউ কেউ হিসেব দিলেও পরে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এ বার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই টাকা খরচের ফাইলপত্র নিয়ে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এবং আর মোটেই হুমকি নয়। হিসেব দেখে সন্তুষ্ট না-হলে পরবর্তী সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোন কোন খাতে টাকা খরচের হিসেব দেয়নি, নভেম্বরেই তার তালিকা পাঠিয়েছিল ইউজিসি। ওই সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম। যারা এখনও হিসেব তৈরি করতে পারেনি, পরবর্তী টাকা পাওয়ার কোনও অধিকারই থাকতে পারে না তাদের।’’ ইউজিসি গত নভেম্বরে হিসেব না-পাওয়া অর্থের যে-তালিকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠিয়েছিল, তাতে চলতি দ্বাদশ যোজনায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কত টাকা পেয়েছে এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত টাকার হিসেব দেয়নি, তা বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ছিল অন্যান্য প্রকল্পের হিসেবের খতিয়ানও।
এ বারের তলব আর হুমকিতে প্রমাদ গুনছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কেন? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, ইউজিসি খতিয়ান চাইলে এত দিন কোনও মতে একটা হিসেব খাড়া করে দেখিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ইউজিসি এ বার এমন কড়া ভাষায় চিঠি পাঠিয়েছে যে, নড়েচড়ে বসতেই হচ্ছে। এমনিতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ইউজিসি-র টাকার হিসেব কতটা দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ বুধবার বলেন, ‘‘আমরা সব হিসেব দিয়ে দিতে পারব বলে তো মনে হচ্ছে না। তবু সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’’
আরও পড়ুন: তাণ্ডব নিন্দার, প্রশংসা পাচ্ছে না পরিষেবাও
ইউজিসি-র বৈঠকে যাওয়ার আগে তাঁরা যতটা সম্ভব হিসেব চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আসলে বেশ কিছু প্রকল্পের টাকা অধ্যাপকদের কাছেই আসে। কিন্তু তাঁরা গবেষক। আয়-ব্যয়ের হিসেব রাখতে তেমন পারদর্শী নন। তাই হিসেব হয়তো আপডেটেড থাকে না।’’ সেই জন্য তাঁরা সম্প্রতি একটি বিশেষ সেল তৈরি করেছেন বলে জানান নিমাইবাবু। সেই সেলে অর্থ বিভাগের আধিকারিকদের রাখা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন প্রকল্পে পাওয়া টাকা খরচের হিসেব তৈরিতে সাহায্য করবেন তাঁরা।
তবে ইউজিসি-র হুমকিতে তাঁরা তেমন ভাবিত নন বলে জানাচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপকুমার ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, একাদশ যোজনা পর্যন্ত তাঁদের সব হিসেব ইউজিসি-কে আগেই দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ যোজনায় যে-টাকা মিলেছে, তার হিসেব দেওয়া যাবে আগামী মাস পর্যন্ত। তাই এটা নিয়ে তাঁরা খুব একটা ভাবছেন না।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারও জানাচ্ছেন, খরচের সব হিসেব তাঁরা আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ‘‘সেই হিসেবেরই ফোটোকপি নিয়ে বৈঠকে যাব,’’ বলছেন দেবজ্যোতিবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy