Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
মদের বোতল শ্রীরামপুর কলেজ মাঠেও, অভিযুক্ত টিএমসিপি

জোরে বক্স বাজানোর প্রতিবাদ, মার

পুলিশের দাবি, অভিযোগ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ মানতে নারাজ টিএমসিপির ছাত্ররা।

ছড়িয়ে: কলেজ মাঠে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। ছবি: প্রকাশ পাল

ছড়িয়ে: কলেজ মাঠে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। ছবি: প্রকাশ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share: Save:

নিয়ম ভাঙাটই যেন দস্তুর আর প্রতিবাদ করাটাই যেন অপরাধ! মাঝরাতে তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজানোর প্রতিবাদ করায় এক দম্পতি এবং তাঁদের ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠল শ্রীরামপুর কলেজের টিএমসিপির ছাত্রদের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে এমন পরিস্থিতিরই সাক্ষী রইল শ্রীরামপুরের ঝাউতলা এলাকা।

প্রহৃতদের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কেউই গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের দাবি, অভিযোগ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ মানতে নারাজ টিএমসিপির ছাত্ররা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে শ্রীরামপুর কলেজে সোশ্যাল ছিল। এই কলেজ চলতি বছরে দ্বিশতবর্ষর উদযাপন করছে। ফলে এ বারের সোশ্যাল ছিল বেশ জমকালো। ওই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঝাউতলায় সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচছিলেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অজিত যাদব, প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জিত রাম এবং প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বিভাস সিংহ। সেই সময় স্থানীয় তরুণ চক্রবর্তী নামে বছর চৌষট্টির ওই বৃদ্ধ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে জোরে বক্স বাজানোর প্রতিবাদ করেন।

অভিযোগ, হুল্লোড়ের ছন্দ নষ্ট হওয়ায় তরুণবাবুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন ওই যুবকেরা। তাঁর স্ত্রী নমিতাদেবী এলে তাঁকেও চুলের মুঠি ধরে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। এর পরে ওই দম্পতির ছেলে প্রবুদ্ধ বেরিয়ে আসেন। তাঁকেও বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তরুণবাবুর কথায়, ‘‘ওরা ছেলেকে খুব মারধর করে। আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলে আমাকে ওরা মারে।’’ ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমার হার্টের সমস্যা রয়েছে। তাই ওদের বক্স আস্তে বাজানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তা বলে ওরা এ ভাবে মারধর করবে
ভাবতে পারিনি।’’

বছর তেইশের প্রবুদ্ধ বছর দু’য়েক আগে শ্রীরামপুর কলেজ থেকে স্নাতক হন। কলেজে পড়ার সময় তিনি টিএমসিপি ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অজিতরা অন্তত ১৫ জন মিলে আমাদের উপর হামলা করে।’’ বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর থানায় এসে অজিত, বিভাস, সঞ্জিত-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তরুণবাবুরা।

অজিত অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কয়েক জন ঝাউতলায় দাঁড়িয়েছিলাম। তখন‌ মোটরবাইকে চেপে এসে কয়েকটা ছেলে মোমিন আক্রম আনসারি নামে আমাদের একটা ছেলেকে মারধর করে। আমরা কাউকে মারিনি।’’ অজিতের দাবি, ‘‘হয়তো আমার উপর ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এমন মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ শ্রীরামপুর কলেজেরই ছাত্র মোমিনের অভিযোগ, ‘‘প্রবুদ্ধ-সহ কয়েক জন আমাকে মারধর করে। আমার পোশাক ছিঁড়ে দেয়।’’

কলেজে টিএমসিপি-র আভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমীকরণে প্রবুদ্ধ এবং সঞ্জিৎ-অজিতরা ভিন্ন গোষ্ঠীর। ফলে ঘটনাটি টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে মনে করছেন তৃণমূলের কেউ কেউ। চন্দননগর কমিশনারেটের কর্তারা জানান, গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর কলেজে মাঠে গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। এসএফআইয়ের জেলা সহ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষরায় বলেন, ‘‘অনেক ছাত্রছাত্রী এসে জানিয়েছে, সোশ্যালে মদের ফোয়ারা ছুটেছে। এতে কলেজের ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ এ প্রসঙ্গে টিএমসিপি ছাত্র সংসদের এক শীর্ষ নেত্রীর অবশ্য সাফাই, ‘‘কেউ ফাঁসানোর জন্য করেছে হয়তো।’’

জেলা টিএমসিপি সভাপতি গোপাল রায়ের বক্তব্য, ‘‘ওখানে ছাত্র সংসদ নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। তা এখনও মেটেনি। তাই ওই কলেজে যাই না। তবে সোশ্যালে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি হলে ছাত্র সংসদের নৈতিক দায়িত্ব থাকা উচিত।’’ শ্রীরামপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি গৌরমোহন দে অবশ্য বলেন, ‘‘সোশ্যাল নিয়ে অভিভাবক বা ছাত্রমহলে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। মদ্যপানের কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। কলেজের চৌহদ্দিতে মদ্যপান যাতে না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশও যথেষ্ট সাহায্য করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMCP Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy