Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুষ্কৃতীদের বাগে আনতে পুলিশ ক্যাম্প

এলাকায় খুন খারাপি লেগেই রয়েছে। দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলির লড়াইও নতুন নয়। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর সমাজবিরোধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে-এমন অভিযোগ বারবার জানিয়েছেন স্থানীয়রা!

নজরদারি: রবীন্দ্রনগরে পুলিশের নতুন ক্যাম্প। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: রবীন্দ্রনগরে পুলিশের নতুন ক্যাম্প। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

এলাকায় খুন খারাপি লেগেই রয়েছে। দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলির লড়াইও নতুন নয়। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর সমাজবিরোধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে-এমন অভিযোগ বারবার জানিয়েছেন স্থানীয়রা! অভিযোগ, শাসক দলের তাবড় নেতাদের মদতে দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় দর্শক।

নানা মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে রবীন্দ্রনগরে ক্যাম্প খুলল হুগলি জেলা পুলিশ। শনিবার থেকে চুঁচুড়া থানার অধীনে ওই পুলিশ ক্যাম্প চালু হয়েছে। পুলিশ আধিকারিকরা জানান, এক জন সাব-ইনস্পেক্টরের (এসআই) অধীনে ক্যাম্পটি চলবে। এ ছাড়াও এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই), ৬ জন সশস্ত্র কনস্টেবল এবং ১০ জন সিভিক স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার একটি ক্লাবে তাঁরা থাকবেন। মূলত মোটরবাইকে চেপে এলাকায় টহল দেবেন তাঁরা। জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, দুষ্কৃতীদের বাগে আনতেই ক্যাম্প করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে
থাকতে পারবেন।

পুলিশেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ থানায় পৌঁছতে পারেন না। অভিযোগ, দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাসের (এখন জেলে) দলবল এখানে কার্যত সমান্তরাল প্রশাসন চালায়। কিছু দিন ধরে অন্য একটা গোষ্ঠীও দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টাতেও দুষ্কৃতীদের লড়াই বন্ধ করা যাচ্ছিল না। রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ না থাকলে এ বার সেটা হবে।’’

ইদানিং রবীন্দ্রনগর এলাকার দখল নিয়ে দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ সন্ত্রস্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি রবীন্দ্রনগর বাজারে সাতসকালে অবাধে বোমা গুলি চালায় টোটনের বিরোধী বিশাল দাস গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা। টোটনের দাদা তারককে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। বাজার করে ফেরার পথে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। গত ২মে টোটনের দলবল প্রত্যাঘাত করে। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়ার রাস্তায় দু’দলের মধ্যে তুমুল গুলির লড়াই হয়। এক দুষ্কৃতী নিহত হয়। বিশাল-সহ তিন দুষ্কৃতী জখম হয়। দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া গাড়ি থেকে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়।

ওই ঘটনায় বিভিন্ন মহলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই অভিযানে নামে চুঁচুড়া থানার পুলিশ। গত কয়েক দিনে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ১২ জন দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়। এ বার সর্বক্ষণ নজরদারি চালাতে ক্যাম্প খোলা হল। রবীন্দ্রনগরের এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘রোজই দুষ্কৃতীদের মধ্যে গোলমাল লেগে থাকে। সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরোতে সাহস হয় না। পুলিশ ক্যাম্প চললে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’

দুষ্কৃতীদের আখড়া হিসেবে চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের কোঁদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের রবীন্দ্রনগরের দুর্নাম বাম আমল থেকেই। অভিযোগ, তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে। খুনখারাপি লেগেই রয়েছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনগরকে ‘ঠান্ডা’ করতে পুলিশের তরফে বিশেষ দল করা হয়। ধড়পাকড় চলে। কিন্তু কিছু দিনেই পরিস্থিতি যে কে সেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জমি-বাড়ি কেনাবেচা করলে দুষ্কৃতীদের টাকা দিতে হয়। নতুন বাড়ি-আবাসন করলে তাদের মাধ্যমেই ইমারতি দ্রব্য কিনতে হয়। ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় করে তারা।

এ বার পরিস্থিতি বদলায় কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE