Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিয়োগ থমকে পুরসভায়

শাসকদলের গোষ্ঠী-কাজিয়ায় এক বছর ধরে নিয়োগ থমকে রয়েছে ডানকুনি পুরসভায়। ফলে, কোটি কোটি টাকা পড়ে থাকলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যত হোঁচট খাচ্ছে প্রতিদিন। পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

শাসকদলের গোষ্ঠী-কাজিয়ায় এক বছর ধরে নিয়োগ থমকে রয়েছে ডানকুনি পুরসভায়। ফলে, কোটি কোটি টাকা পড়ে থাকলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যত হোঁচট খাচ্ছে প্রতিদিন। পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে গোড়া থেকেই সিন্ডিকেট, জুলুম, তোলাবাজি, গুন্ডামির পাশাপাশি দলের গোষ্ঠী-কোন্দল কড়া হাতে দমনের সংকল্প নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে একাধিকবার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ডানকুনির তৃণমূল নেতৃত্বের কানে সেই হুঁশিয়ারি কতটা পৌঁছচ্ছে, তা নিয়ে দলেরই একাংশ প্রশ্ন তুলছে। তাঁরা বলছেন, ওই হুঁশিয়ারির পরেও পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে পাঁচ কাউন্সিলরের বিরোধ কমার লক্ষণ নেই।

ওই কাজিয়া মেটাতে সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় একটি প্রকল্প উদ্বোধনে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ডানকুনির দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু তার পরেও জট না কাটায় পুরমন্ত্রী নিয়োগ আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডানকুনি পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় আপাতত তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’

সমস্যাটা কোথায়?

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে ২০০৮ সালে মৃগলা, মনোহরপুর, ডানকুনি এবং গরলগাছা পঞ্চায়েত এলাকার একাংশকে নিয়ে তৈরি হয় ২১টি ওয়ার্ডের ডানকুনি পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে পুরসভার কাজ শুরু করা হয় পঞ্চায়েতের কর্মীদের নিয়েই। তারপর স্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে ৫০ জনকে নিয়োগ করা হয়। ২০০৯ এবং ২০১৫— দু’বারই ভোটে জিতে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। পুরপ্রধান হন হাসিনা শবনম। প্রথম বারেই অবশ্য পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি তৈরি হয়। দ্বিতীয় পুরবোর্ড গঠন হওয়ার পরে স্যানিটারি ইনস্পেক্টর, গ্রুপ-সি ক্লার্ক, গ্রুপ-ডি কর্মী-সহ ২৬টি পদের জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা একটি সংস্থাকে দিয়ে লোক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। মোট ১৪ হাজার প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেন। ১৫০ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইন্টারভিউয়ের পর ২৬ জনকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত তালিকাও তৈরি হয়।

কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরেই সব থমকে যায়। চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের বিরুদ্ধে পাঁচ কাউন্সিলর নিয়োগে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলেন। তাঁরা দাবি করেন, নিয়মমাফিক নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এ নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ চরমে পৌঁছয়। দলের তরফে পরিস্থিতি সামাল দিতে সব পক্ষকে নিয়ে বিবাদ মেটাতে স্থানীয় বিধায়ক স্বাতী খন্দকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বিরোধ ঠেকানো যায়নি। বিধায়ক বলেন, ‘‘পুরমন্ত্রীকে সব জানানো হয়েছে। তিনি কী পদক্ষেপ করেন, সেই অপেক্ষায় রয়েছি।’’

স্বজনপোষণের অভিযোগ মানেননি পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাই প্রার্থী-তালিকা চূড়ান্ত করে। এতে আমার কোনও ভূমিকা নেই। মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, পুরপ্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘পুরপ্রধান কারও সঙ্গে আলোচনা করে কিছু করেন না। নিজের মতো করে তিনি ওই সংস্থাকে প্রভাবিত করেছেন। তাই প্রার্থী-তালিকা মানা হবে না।’’

দু’পক্ষের এই টানাপড়েনে পরিষেবা যে মার খাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন এক পুর-অফিসার। তিনি জানান, নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল। তা হলে নতুন ভাবে পুরকর্মীদের বেতন সরকারই দিত। কিন্তু তা না হওয়ায় এখন যে কর্মীরা আছেন, তাঁদের বেতনের জন্য পুরসভাকেই নিজস্ব খাত থেকে প্রতি মাসে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা গুনতে হচ্ছে। ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া যাবে কী ভাবে?

অন্য বিষয়গুলি:

TMC municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy