আতঙ্ক: সোমবার সকালেও মেঝেতে বোমার দাগ । ছবি: তাপস ঘোষ
ফের সেই দুষ্কৃতী-তাণ্ডব। ফের ঘটনাস্থল সেই হুগলি শিল্পাঞ্চল।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পাল্টাল। কিন্তু দুষ্কৃতী-তাণ্ডব বন্ধ হল না। কলকাতার এই পড়শি জেলা এখনও যেন ‘চম্বল’ই রয়ে গেল!
রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ব্যান্ডেল মোড়ের একটি পোশাকের দোকানের সামনে বোমাবাজি করল দুষ্কৃতীরা। শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালানো হয় বলে এলাকাবাসীর দাবি। ঘটনায় কেউ হতাহত না-হলেও আতঙ্কে রাতের ঘুম উবেছে তাঁদের। দোকান-মালিক দীননাথ যাদব বলেন, ‘‘কয়েদিন ধরেই অজানা নম্বর থেকে অচেনা লোক ফোন করে তোলা চেয়ে হুমকি দিচ্ছিল। তাদের দাবিমতো তোলা দিতে অস্বীকার করার জন্যই দোকানের সামনে বোমাবাজি করে সতর্ক করল দুষ্কৃতীরা। জানি না এরপরে কী হবে!’’
এরপরে কী হবে?
এই প্রশ্ন শুধু দীননাথবাবুরই নয়। হুগলি শিল্পাঞ্চলের বহু সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, এমনকী বৃদ্ধবৃদ্ধাদেরও। কারণ, বছরের গোড়া থেকে লাগাতার দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে উত্তরপাড়া থেকে চুঁচুড়া— গঙ্গাপাড়ের ৯টি থানা এলাকার মানুষ নাজেহাল। গত মঙ্গলবার রাতে ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুনের পরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমে পড়েন। জেলার মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত এবং অনেক নেতাও পুলিশের বিরুদ্ধে অপদার্থতার অভিযোগ তোলেন।
শুক্রবারই সরিয়ে দেওয়া হয় চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে এবং তেলেনিপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ দাসকে। নতুন কমিশনার হন অজয় কুমার। সেই রাতেই উত্তরপাড়ায় একটি সোনার দোকানে চুরি হয়। শনিবার ভোরে উত্তরপাডা়তেই এক বৃদ্ধার হাতে ভোজালির কোপ মেরে বালা, আংটি ছিনতাই করে এক দুষ্কৃতী। শনিবার সন্ধ্যায় বৈদ্যবাটির একটি বাড়িতে চুরি হয়। তার পরে রবিবার রাতে ব্যান্ডেলের ঘটনা।
কমিশনার বদলের পরে অনেকে ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো দুষ্কৃতী-রাজে লাগাম পরবে! কিন্তু কোথায়? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। নতুন পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, দিন কয়েকের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যান্ডেলের ওই ব্যবসায়ীকে ভয় দেখানোর জন্যই বোমাবাজি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
দীননাথ যাদব নামে ওই ব্যবসায়ী আবার ব্যান্ডেল কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিও। তাঁর অভিযোগ, ব্যান্ডেল মোড় এলাকায় তোলাবাজদের দাপটে অনেকের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। এই বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের দাবি করেছেন তিনি।
চলতি বছরে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে চুঁচুড়া থানা এলাকার বাসিন্দাদেরই। কখনও রবীন্দ্রনগরে ভরা বাজারে এলোপাথাড়ি গুলিতে জখম হয়েছেন নিরীহ যুবক। সেখানে খুনও হয়েছে। কখনও ব্যান্ডেলের নিরীহ টোটো-চালক বা ঘরে ঢুকে একাকী বৃদ্ধাকে নলি কেটে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। কখনওবা চুঁচুড়ার গোয়ালটুলি তেতে উঠেছে বোমাবাজিতে।
সাধারণ মানুষ শঙ্কিত, তিতিবিরিক্ত, ক্লান্তও। আরও কতদিন এ সব দেখতে হবে, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
আগের জমানা
• ১ নভেম্বর— চুঁচুড়ার চকবাজারে বাড়ির সামনে গুলিতে জখম তৃণমূল নেতা।
• ৬ নভেম্বর— ডানলপ কারখানা চত্বর থেকে কৌটো বোমা উদ্ধার।
• ৯ নভেম্বর— গোয়ালটুলি এলাকার একটি ক্লাবের সামনে থেকে বোমা উদ্ধার।
• ৯ নভেম্বর— পাঙ্খাটুলির কালীতলা এলাকা থেকে রক্তমাখা টোটো উদ্ধার।
• ১২ নভেম্বর— ব্যান্ডেলের নলডাঙা এলাকার ডোবা থেকে নিখোঁজ টোটো চালকের দেহ উদ্ধার।
• ১৪ নভেম্বর— দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়।
নয়া জমানা
• ২৪ নভেম্বর— উত্তরপাড়ায় সোনার দোকানে চুরি।
• ২৫ নভেম্বর— উত্তরপাড়ায় বৃদ্ধার হাতে ছোরার কোপ মেরে সোনার বালা ছিনতাই।
• ২৫ নভেম্বর— বৈদ্যবাটিতে বাড়িতে তালা ভেঙে চুরি।
• ২৬ নভেম্বর— ব্যান্ডেল মোড়ে পোশাকের দোকানের সামনে বোমাবাজি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy