আদালতের পথে ধৃত সবুর আলি ও রেহিমা বেগম। ছবি: মোহন দাস।
কথা না শুনলে দত্তক নেওয়া সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুর উপরে নির্যাতন চলত নানা ভাবে। সোমবার দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিয়ে এবং মারধর করে শিশুটিকে খুনের অভিযোগ উঠল আরামবাগের বসন্তপুরের এক দম্পতির বিরুদ্ধে।
পুলিশ সেলিমা খাতুন নামে ওই শিশুটির দেহ উদ্ধারের সময় দেখে তার দাঁত ভাঙা, সারা গায়ে ছ্যাঁকার ক্ষত, মাথা-কপাল ফোলা। পড়শিরা বেধড়ক মারধর করে অভিযুক্ত সবুর আলি এবং তার স্ত্রী রেহিমা বেগমকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। একটি শিশুর উপরে কেউ যে এ ভাবে নির্যাতন চালাতে পারে, তা জেনে স্তম্ভিত প্রতিবেশীরা। পুলিশের কাছে শিশুটিকে খুনের ঘটনায় ওই দু’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সবুরের কাকা শেখ সারাফত আলিই।
পুলিশ জানায়, গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার ধৃতদের আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রভাতকুমার দে বলেন, “দত্তক নেওয়া শিশুর উপরে এ ভাবে অত্যাচার চালানোর কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবু বিষয়টি খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সবুরের মা সোনেহার বেগম বলেন, “ছেলের বউ সারাক্ষণ নিজের মেয়েকে নিয়েই ব্যস্ত থাকত। সেলিমাকে দেখত না। কথায় কথায় খালি মারধর করত, ছ্যাঁকা দিত। এমনকী শিশুটি যাতে কাঁদতে না পারে, তার জন্য মুখ টিপে ধরে রাখত। ঠিকমতো খেতে দিত না। আমার ছেলে কিছু বলত না। কতবার ওদের বলেছি, সেলিমাকে আমায় দিয়ে দিতে। আমিই মানুষ করতাম। ওরা তা শোনেনি। এ বার একেবারে মেরে ফেলল।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সবুর রাজমিস্ত্রির কাজ করে। রেহিমা তার তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। বছর আটেক আগে সবুরের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মমতা বেগম অন্যত্র চলে যান। সেই বছরেই দ্বিতীয় বিয়ে করে সবুর। কিন্তু তাদের কোনও সন্তান না হওয়ায় বছর তিনেক আগে দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলার একটি হোম থেকে ছ’মাসের সেলিমাকে দত্তক নেয় দম্পতি। কিন্তু বছর খানেক আগে কয়েক দিনের জ্বরে সবুরের দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যান। তার দু’মাসের মধ্যে রেহিমাকে বিয়ে করে সবুর। রেহিমার আগেও বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই বিয়ে টেঁকেনি। রেহিমা তার চার বছরের মেয়েকে নিয়ে সবুরের সঙ্গে নতুন সংসার শুরু করে। এর পরেই অন্ধকার নেমে আসে একরত্তি সেলিমার জীবনে। সব সময়েই সে আতঙ্কে থাকত।
সবুর তৃতীয় বিয়ে করার পরেই সোনেহারও পাশের একটি বাড়িতে আলাদা ভাবে থাকতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, সোমবার দুপুর পর্যন্ত সেলিমাকে তিনি খেলতে দেখেছেন। বাথরুমে একবার মাথা ঠোকার মতো আওয়াজ শুনেছেন। বিকেলে দেখেন, নিথর সেলিমাকে নিয়ে ছেলে ও বউমা বেরোচ্ছে। তিনি জিজ্ঞাসা করায় ছেলে-বউমা সেলিমাকে ‘ডাক্তার দেখানো’র কথা বলে বেরিয়ে যায়। পরে ফিরে নাতনি মারা গিয়েছে বলে জানায়।
কিন্তু নাতনির শরীরে ছ্যাঁকার ক্ষত এবং আঘাতের চিহ্ন দেখে সোনেহারের সন্দেহ হয়। তাঁর চিত্কার শুনে প্রতিবেশীরা এসে দেখেন, শিশুটির অন্ত্যেষ্টির তোড়জোড় করছে সবুর এবং রেহিমা। দু’জনকে মারধর করে আটকে রেখে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন।
শেখ মোক্তার হোসেন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “আগেও শুনেছি শিশুটিকে মারধর করা হতো। মনে করতাম শাসন করছে বোধহয়। কিন্তু ঘরের ভিতরে শিশুটির উপরে যে এ ভাবে নির্যাতন চালানো হতো, বুঝতে পারিনি। মেয়েটাকে বেরোতে দেখতাম না।” শেখ রিয়াজুল নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, “একরত্তি মেয়েটাকে যে এ ভাবে খুন করতে পারে, সে কথা ভাবতেই পারছি না। চাই, ওদের উপযুক্ত সাজা হোক।”
ধৃত দম্পতিকে পুলিশ যখন থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই শোনা যাচ্ছিল পড়শিদের ধিক্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy