Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বন্দি পালিয়ে যাওয়ায় সাসপেন্ড শুধুই সান্ত্রি

হাওড়ায় খোলা লক-আপ থেকে আসামি পালানোর জেরে সাসপেন্ড করা হল শুধু লক-আপ সান্ত্রিকে। অথচ, ঘটনার দিন আসামি পালানোর সময়ে সান্ত্রি ছাড়াও থানায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর থেকে বেশি পদমর্যাদার অফিসার ও কর্মীরা।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

হাওড়ায় খোলা লক-আপ থেকে আসামি পালানোর জেরে সাসপেন্ড করা হল শুধু লক-আপ সান্ত্রিকে। অথচ, ঘটনার দিন আসামি পালানোর সময়ে সান্ত্রি ছাড়াও থানায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর থেকে বেশি পদমর্যাদার অফিসার ও কর্মীরা। তাই প্রশ্ন উঠেছে, অন্য অফিসারেরা ওই সময়ে থানায় দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও শুধু সান্ত্রির বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল? বাকি দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? এ রকম গুরুতর ঘটনার গুরুত্বকে লঘু করতে কি তা হলে কম পদমর্যাদার এক জনকে সাসপেন্ড করে থানার অন্য পদস্থ অফিসারদের রেহাই দেওয়া হল?

শুক্রবার দুপুরে চ্যাটার্জিহাট থানার লক-আপ খোলা পেয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল ২০১৫-এর অগস্টে ডাকাতির ঘটনায় ধৃত রহিম আলি ওরফে লালচাঁদ ও মহম্মদ জাফর। পুলিশ তাড়া করে জাফরকে পাকড়াও করলেও পালিয়ে যায় লালচাঁদ। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, লালচাঁদকে ধরতে সমস্ত রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুলিশের। কারণ লালচাঁদ ও জাফরকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারাই মেদিনীপুর থেকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে হাওড়া পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

কে এই লালচাঁদ? পুলিশ সূত্রে খবর, লালচাঁদের বাড়ি কলকাতার ট্যাংরা এলাকার ডি সি দে রোডে। বছর পঁচিশের ওই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মূলত কলকাতা-সহ রাজারহাট, নিউ টাউন এলাকায় একাধিক ডাকাতি, ছিনতাই, তোলাবাজি ছাড়া নানা অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা তাকে কলকাতায় একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার করে। জেরায় লালচাঁদ হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার জানাগেটে এক গৃহস্থ বাড়িতে লক্ষাধিক টাকা ডাকাতির ঘটনার কথা স্বীকার করে। এই তথ্য জানার পরেই হাওড়া সিটি পুলিশ তাকে ও জাফরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে।

লালচাঁদ পালিয়ে যাওয়ার পরেই শুক্রবার রাতে হাওড়া পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ ঘটনার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তবুও দোষী পুলিশ অফিসার বা কর্মীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেননি। দেবেন্দ্রপ্রকাশবাবু জানান, বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরে দেখা যাবে আর কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুরে রহস্যজনক ভাবে সান্ত্রি লক-আপের হ্যাজবোল্টে তালা দিলেও তা ঠিক জায়গায় দেননি। তার যার সুযোগে আসামি পালাতে সমর্থ হয়েছে। দেবেন্দ্রপ্রকাশবাবু আরও বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, যে সান্ত্রি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি ঠিক জায়গায় তালা লাগাননি। আসামি তা তা বুঝতে পেরে লক-আপ খুলে পালিয়েছে। তবে এটা ইচ্ছাকৃত কি না তদন্ত হচ্ছে।’’

এ দিন দুপুরে চ্যাটার্জিহাট থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানায় ঢুকতেই বাঁ দিকে রয়েছে অফিসারদের বসার ঘর। ডান দিকে ওসি-র ঘর। তার পরে একটি কাউন্টারের মধ্যে ডিউটি অফিসারের বসার জায়গা। তার বাঁ পাশে লক-আপ। সেখানেই সান্ত্রির বসার জায়গা। প্রশ্ন হল, থানার এতটা ভিতরে লক-আপ থাকা সত্ত্বেও কী করে দু’জন আসামি ডিউটি অফিসার ও সান্ত্রির চোখ এড়িয়ে থানার বাইরে বেরিয়ে গেল? লক-আপ খোলার পরেও তা কারও নজরে পড়ল না কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, বিভাগীয় তদন্তে এই দু’টি বিষয় বিশেষ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, থানার ভিতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও।

অন্য বিষয়গুলি:

lock up in charge accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy