Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কংগ্রেস-প্রশ্নে গৌতমের মন্তব্যে জলঘোলা

পরিকল্পনা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন তিনি! আর তার জেরে দলের ভিতরে-বাইরে জলঘোলা অব্যাহত! বিজেপি এবং তৃণমূলের যুগলবন্দিকে রুখতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা ভেবে দেখা যেতেই পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব।

বারুইপুরের দলীয় বৈঠকে সিপিএম নেতা গৌতম দেব। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

বারুইপুরের দলীয় বৈঠকে সিপিএম নেতা গৌতম দেব। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

পরিকল্পনা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন তিনি! আর তার জেরে দলের ভিতরে-বাইরে জলঘোলা অব্যাহত!

বিজেপি এবং তৃণমূলের যুগলবন্দিকে রুখতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা ভেবে দেখা যেতেই পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। তার জেরেই নানা প্রতিক্রিয়ার ঘনঘটা চলছে রাজনৈতিক শিবিরে! ঘটনা হল, গৌতমবাবুর মতের সমর্থক অনেকেই আছেন সিপিএমের অন্দরে। কিন্তু দু’মাস আগের পার্টি কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়া হবে অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেস দলগুলিকে নিয়ে। কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতের কোনও প্রশ্নই নেই। তার পরেই এখন আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সরাসরি সওয়াল করা মুশকিল। সেই জন্যই শ্যামল চক্রবর্তীর মতো বর্ষীয়ান নেতারা ‘হাজারদুয়ারির মতো হাজারটা দরজা খোলা আছে’ বলে কৌশলী মন্তব্য করছেন। আর এই অবস্থায় নিজের অবস্থান পুরোপুরি না বদলেও কৌশলে সামান্য পরিবর্তন এনেছেন স্বয়ং গৌতমবাবুও।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে রবিবার দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তুলোধোনা করেছেন গৌতমবাবু। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক বলেছেন, ‘‘কে আসবে, সেটা পরের কথা! কিন্তু এই সরকারকে আগে গঙ্গায় ভাসান দিতে হবে।’’ এক দিকে মমতা এবং অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদী, এই জোড়া বিপদের মোকাবিলার কথা বারবার বলেছেন তিনি। তবে এ বার সরাসরি কংগ্রেস-প্রসঙ্গে যাননি। বরং বলেছেন, ‘‘মোদীকে তাড়াতে সবাইকে একজোট হতে হবে।’’

বারুইপুরের কর্মসূচি সেরে এ দিন সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিনেও গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবু। আজ, সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হচ্ছে দলের দু’দিনের বৈঠক। সেখানে গৌতমবাবুর ওই জোট-মন্তব্যের প্রসঙ্গ ওঠা অবধারিত ধরে নিয়েই প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর উপস্থিত সদস্যেরা। দলের রাজ্য নেতৃত্ব মানছেন, গৌতমবাবু নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। কিন্তু যে ভাবে তিনি প্রকাশ্যে বলে বসেছেন বামেদের পক্ষে একক ভাবে মমতাকে হারানো সম্ভব নয়, তাতেই ক্ষুব্ধ দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁদের আশঙ্কা, এতে দলের কর্মীদের মনোবল ধাক্কা খাবে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়েই আপাতত আলোচনা করছেন রাজ্য নেতারা। গৌতমবাবুও তাঁর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন।

পাশাপাশিই বিভিন্ন মহলে বার্তা চলে গিয়েছে, দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনুমোদন নিয়েই গৌতমবাবু কংগ্রেস-তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করেছেন। যদিও ঘটনা হল, সিপিএমের অন্দরে দুই নেতার সঙ্গেই এখন গৌতমবাবুর সম্পর্ক আগের মতো মসৃণ নয়। কিন্তু অস্বস্তি এড়াতেই প্রকাশ্যে তাঁরা কেউ এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে চাননি।

দলের মধ্যে যাঁরা গৌতমবাবুর বিরোধী, তাঁরা যে এমন হাতিয়ার ছেড়ে দেবেন না, সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক যেমন এ দিনই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের দল চলে পার্টি কংগ্রেস মেনে। পার্টি কংগ্রেসে যা সিদ্ধান্ত হয়, পরের পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত তা মেনে চলতে হয়।’’ শনিবার একই কথা বলেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। শ্রীরামপুরে গিয়ে এ দিনও বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের উদার অর্থনৈতিক সঙ্কটময় নীতিকে কাজে লাগিয়েই বিজেপি কেন্দ্রের সরকারে এসেছে। আমাদের দলের পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলনে নামতে হবে সবাইকে।’’ কেন্দ্রে প্রথমে কংগ্রেস এবং এখন বিজেপি সরকারের উদাসীনতায় হুগলি জেলায় একের পর এক চটকল বন্ধ হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। একই সঙ্গে আবার বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘মোদী-মমতা কাছাকাছি এসেছেন। লক্ষণ খারাপ! ওঁরা একে অপরের পরিপূরক।’’

গৌতমবাবুর মতের সমর্থকেরা বলছেন, মোদী-মমতা যুগলবন্দির মোকাবিলার জন্যই তো বাম-কংগ্রেসের ভোটকে এক জায়গায় আনার কথা বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক। তাঁদের আরও বক্তব্য, তিন বছর আগে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসেও বিজেপি এবং কংগ্রেস থেকে দূরত্ব রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার পরেও তো সিপিএম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের মনোনীত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দিয়েছে! তাই পরিস্থিতির প্রয়োজনে কৌশলে রদবদল হতেই পারে। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি জোট সম্ভব না-ও হতে পারে বুঝে দলের একাংশ চাইছে, বাম ও অন্য দলের বৃহত্তর জোটকে কংগ্রেস যাতে বাইরে থেকে সমর্থন করতে পারে, সে ব্যবস্থা হোক।

বাস্তবে এখনও তত দূর জল না গড়ালেও এ দিন নিজের বিধানসভা কেন্দ্র সবংয়ের ভেমুয়া ও বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দলের অঞ্চল সম্মেলনে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলে রেখেছেন, “সিপিএমের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক তৈরির দিকে দল এগোলে আমাকে ভেবে দেখতে হবে দলটা করব কি না!” কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, নানা কারণেই দলের উপরে ক্ষুব্ধ মানসবাবু। গৌতমবাবুর মন্তব্যের জেরে সুযোগ পেয়ে তিনি ভবিষ্যতের জন্য বাতাবরণ তৈরি করে রাখলেন!

প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তৃণমূল শিবিরেও। দলের অনেক নেতাই একান্তে মানছেন, কংগ্রেস-বাম সত্যিই একজোট হলে তাঁদের শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিশেষত, সংখ্যালঘু ভোট তখন দোদুল্যমান হয়ে উঠবে। তবে সঙ্গত কারণেই তাঁরা প্রকাশ্যে বাম-কংগ্রেসকে তাচ্ছিল্য করছেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যেমন এ দিন বনগাঁর কর্মিসভার অবসরে বলেছেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি একজোট হলেও বিধানসভা নির্বাচনে ওদের ভরাডুবি নিশ্চিত! ওই জোট হলেও তৃণমূলের কিছু এসে যাবে না। সিপিএম তো ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। এখন ওদের উচিত ২০৫৬ সালের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করা!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy