কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বার্তা— হাজিরায় ফাঁকিবাজি আর চলবে না।
শনিবার তিনি বুঝিয়ে দেন, এ ক্ষেত্রে অধিকারের যুক্তিও মানবে না সরকার। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, হাজিরা নিয়ে খুব শীঘ্র নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
সরকারের এক কর্তা জানান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরা নিয়মিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিধিতে বায়োমেট্রিক চালুর কথা ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। যদিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ তাতে আপত্তি জানিয়েছেন। বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি নিয়ে ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের মন্তব্য, ‘‘এও এক রকম গোয়েন্দাগিরি। এই পদ্ধতিকে মেনে নেওয়া যায় না।’’
এ দিন বাম-প্রভাবিত ওয়েবকুটার রাজ্য সম্মেলনে শিক্ষকদের উদ্দেশে পার্থবাবু বলেন, ‘‘আপনারা নিয়মিত পড়ান, নিয়মিত আসুন। আমি যদি মন্ত্রী হয়ে বিধানসভায় সই করতে পারি, তা হলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? দেশের প্রধানমন্ত্রীও তো হাজিরা দিতে সই করেন। আপনি নিজে পড়ুয়াদের রোল কলের খাতা নিয়ে ক্লাসে হাজির হন। অথচ আপনার রোল কল করতে চাইলে তা অধিকারে
হস্তক্ষেপ কেন হবে!’’
গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে ওই সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, হাজিরা নিয়ে বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সরকার। ‘‘নিয়মিত কলেজে যেতে বললে শিক্ষক নেতারা বলবেন তাঁদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকারেরও নির্দিষ্ট গণ্ডি আছে’’, যুক্তি পার্থবাবুর।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেননি ওয়েবকুটার বাম শিক্ষক নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের বক্তব্য, তাঁরা শিক্ষকদের নিয়মিত হাজিরার পক্ষে। কিন্তু রাজ্যের বহু কলেজের পরিবেশ বারবার যে ভাবে অশান্ত হয়ে উঠছে, তাতে স্বাভাবিক পঠনপাঠন সম্ভব হচ্ছে না। এ দিনের সম্মেলনে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ওয়েবকুপার সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসুও ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীই তাঁকে এই সম্মেলনে নিয়ে আসেন।
হাজিরার পাশাপাশি শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা ও যোগ্যতা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষকেরা নিজেদের পেশাগত দাবিদাওয়া নিয়ে যতটা সরব, পড়ানোর ক্ষেত্রে ততটা নন।’’ পার্থবাবুর পরামর্শ, ‘‘শিক্ষকেরা যেন সবটুকু জেনেবুঝে পড়ান।’’ কেন তিনি এ কথা বলছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পার্থবাবু, ‘‘এমএ-এমএসসি পাশ করে যাঁরা বেরোচ্ছেন, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতেও তাঁদের অনেকে পাশ করতে পারছেন না। তা হলে কী শিখছেন তাঁরা!’’
শিক্ষামন্ত্রীর আগে ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মাস কয়েক আগে শান্তিপুর কলেজে তৃণমূলের এক অধ্যাপকের উপর পিস্তল নিয়ে আক্রমণের ঘটনার উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য জানিয়ে দেন, কলেজের মধ্যে যে দলই গণ্ডগোল করুক, তা রেয়াত করা হবে না। তবে শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেই কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়, তা মানতে নারাজ তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবেশ শুধু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নষ্ট হয় না। এ জন্য কলেজগুলিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরি, শৌচাগার ঠিকমতো চালাতে
হবে, কমন রুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’’
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে। শিক্ষামহল থেকে ইতিমধ্যেই তা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। কোনও কোনও মহলের বক্তব্য, এই ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, পুনর্নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কোথায় গলদ রয়েছে, তা খুঁজে বার করা হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সরকার টাকা দিচ্ছে, অথচ তারা জানবে না কে কে পুনর্নিয়োগ পেলেন?’’ পরে এ প্রসঙ্গে শ্রুতিনাথ বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগের বিষয়টি বিচার করে বিশেষ এক কমিটি। কমিটিতে থাকেন রাজ্যপাল এবং ইউজিসি’র মনোনীত প্রার্থী। এতে সরকারের হস্তক্ষেপের অর্থ অধিকারে হস্তক্ষেপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy