অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
টিকিট পাওয়ার জন্য তদ্বির-তদারকি চলবে না। টিকিট পেলে ভোটে জেতার জন্য গা-জোয়ারি চলবে না, জনতার ভোটে জিতে আসতে হবে। কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর এবং ব্লক সভাপতিদের উদ্দেশে বার্তা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা দলের অঘোষিত ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
পুর নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করতে মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছিলেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও (পিকে)। সেই বৈঠক থেকেই কাউন্সিলর এবং পুর নির্বাচনের হবু প্রার্থীদের উদ্দেশে অভিষেক এই বার্তা দিয়েছেন।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সোমবারই বড়সড় কর্মী সম্মেলন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘আমার গর্ব মমতা’ নামে নতুন কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গোটা দলকে। পুর নির্বাচন যে হেতু যে কোনও দিন ঘোষণা হওয়ার পথে, সে হেতু তা নিয়েও কর্মীদের প্রয়োজনীয় বার্তা ও নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়ে দিয়েছেন। তার পরের দিনই কলকাতা পুরসভার সব তৃণমূল কাউন্সিলর ব্লক সভাপতিদের ডেকে বৈঠক করে তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, পুর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি দল চাইছে না।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে হামলা অধীরের বাড়িতে, আক্রান্ত কর্মীরা, নথিপত্র তছনছ
আরও পড়ুন: সংসদীয় মর্যাদা রক্ষা করুন
এ দিনের বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর থাকলেও, খুব বেশি কথা তিনি বলেননি। বলতে নয়, কাউন্সিলর ও ব্লক সভাপতিদের কথা তিনি শুনতেই এসেছেন আজ— এমনই জানান পিকে। কলকাতার পুর নির্বাচনে দল কী ভাবে লড়বে, প্রচারে বা ভোটের দিনে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা নিয়ে বার্তা এ দিন মূলত অভিষেকই দেন।
কলকাতার পুর নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার জন্য যাঁরা বিভিন্ন নেতাকে দিয়ে তদ্বির করাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে এ দিন সতর্কবার্তা দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। তদ্বির বা ‘লবি’ করলে টিকিট মিলবে না— অভিষেক এ কথা বৈঠকে স্পষ্ট জানান বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যে ওয়ার্ডে যা কাজ বাকি রয়েছে, খুব দ্রুত তা শেষ করতে হবে— বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোর। অর্থাৎ ভোটের দিন ক্ষণ যে খুব তাড়াতাড়িই ঘোষিত হতে পারে, অভিষেক সে ইঙ্গিত দলীয় কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড স্তরের নেতৃত্বকে এ দিন দিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি— টিকিট না পেয়ে কেউ যদি ‘অন্তর্ঘাত’ করার চেষ্টা করেন, তা হলে দল কড়া পদক্ষেপ করবে। দল যে ওয়ার্ডে যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁকেই মেনে নিয়ে সবাইকে ঝাঁপাতে হবে, মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। যাঁরা তা করবেন না বা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে যে তৃণমূল নেতৃত্ব দ্বিধা করবেন না, তা অভিষেকের বার্তায় এ দিন স্পষ্ট।
ভোটে গা-জোয়ারি না করার পরামর্শকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা রাজ্যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছিল। প্রায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধী দলগুলির প্রার্থীই ছিল না। বাকি যে ৬৬ শতাংশ আসনে ভোট হয়েছিল, সেগুলি থেকেও প্রবল হিংসার ছবি উঠে এসেছিল। তার কয়েক বছর আগে বিধাননগর পুর নিগম বা দুর্গাপুর নগর নিগমের ভোটেও প্রবল কারচুপি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। তার পর থেকে যতগুলি ভোট বাংলায় হয়েছে, সেগুলির কোনওটিতেই দুর্গাপুর বা বিধাননগর পুর এলাকায় তৃণমূল আর জিততে পারেনি। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নেওয়ার ধাক্কাটা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সহ্য করতে হয়েছে তৃণমূলকে।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার তেমন কোনও ছবির জন্ম হোক, এমনটা তৃণমূলের পরামর্শদাতা পিকে একেবারেই চাইছেন না বলে খবর। পুর নির্বাচনে সন্ত্রাসের ছবি তৈরি হলে বিধানসভা নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলে তৃণমূল নেতৃত্বকে পিকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে। এ দিনের বৈঠকে নেতৃত্ব সেই সতর্কবার্তা শুনিয়ে দিলেন কাউন্সিলর ও ব্লক সভাপতিদের। ভোটের দিন যাতে গা-জোয়ারি করতে না হয়, তার জন্য এখন থেকেই জোরকদমে প্রস্তুতি নেওয়া হোক— খুব জোর দিয়ে দলের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক সে কথা কলকাতার কাউন্সিলর ও ব্লক সভাপতিদের এ দিন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে খবর। সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমরাও এ দিন অভিষেকের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy