গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মা-বাবা দু’জনেই নতুন সংসার পেতেছেন। তবে ঠাঁইহারা হয়েছে ওই প্রাক্তন দম্পতির কিশোর ছেলে। আদালতে দাঁড়িয়ে কাতর আর্জিতেও লাভ হয়নি। কিশোরের মা-বাবার সাফ কথা, ছেলেকে সঙ্গে রাখতে পারবেন না। শেষমেশ সোমবার আদালতের নির্দেশে সরকারি হোমে আশ্রয় মিলেছে কিশোরের।
পূর্ব বর্ধমানের গলসির বাসিন্দা বছর চোদ্দর ওই কিশোরের কাহিনি শুনে বর্ধমান আদালতের আইনজীবী থেকে আদালতকর্মী— অনেকেরই মত, এ যেন নাটক-নভেলের গল্প!
ঘটনার সূত্রপাত, ওই কিশোরের নিখোঁজ হওয়ার পর। গলসির বাহিরঘন্যা গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরের মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তার পর ওই কিশোরের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। একই পথে হেঁটেছেন মা-ও। মায়ের নতুন সংসারে প্রথমে ঠাঁই হয়েছিল ওই কিশোরের। তবে তাল কাটল চলতি মাসের ১৭ সেপ্টেম্বর।
মায়ের কাছে দিন দুয়েক ধরেই একটি স্মার্টফোনের বায়না জুড়েছিল ওই কিশোর। তাতে রাজি হননি মা। উল্টে বকুনি দিয়েছিলেন ছেলেকে। সেই অভিমানে ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ঘর ছাড়ে সে। সে দিনই গলসি থানায় ছেলের নিঁখোজ হওয়ায় অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরের মা। তার ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। তবে সোমবার সকালে ওই কিশোরকে নিয়ে গলসি থানায় হাজির হন ছেলেটির বাবা। বিবাহ বিচ্ছেদের পর কর্মসূত্রে তিনি ওড়িশায় থাকতেন। পুলিশের কাছে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, মায়ের উপর অভিমানে বাড়ি থেকে পালিয়ে ওড়িশায় তাঁর কাছে চলে এসেছিল ছেলে। তবে তাকে কাছে রাখা সম্ভব নয় বলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে এসেছেন। ওই কিশোরকে তার মা-ও ঘরে ফেরাতে অস্বীকার করেন। ফলে সোমবারই ওই কিশোরকে নিয়ে বর্ধমান জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয় পুলিশ।
সোমবার আদালতে হাজির হন কিশোরের বাবা এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী-সহ তার মা। আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট কিশোরের কাছে জানতে চান, কার কাছে থাকতে চায় সে? কিশোরটি প্রথমে তার বাবাকে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হননি। ওই ব্যক্তির দাবি, সংসার থাকায় এই মুহূর্তে তিনি কিছু করতে অপারগ। ভবিষ্যতে সে ভাবনা করবেন। এর পর মায়ের কাছেও একই আর্জি জানায় ছেলেটি। তবে মা জানান, সামান্য স্মার্টফোনের জন্য বাড়ি ছেড়ে প্রথম পক্ষের স্বামীর কাছে চলে যাওয়ায় ছেলেকে ঘরে ফেরাতে চান না।
আইনি জটিলতা কাটাতে অবশেষে ওই কিশোরকে উত্তর ২৪ পরগনার আড়িয়াদহের ধ্রুবাশ্রমে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। এর পর সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের গাড়িতে চেপে ধ্রুবাশ্রমের ঠিকানায় রওনা দিতে বাধ্য হয় ওই কিশোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy