Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঘরবন্দি থেকেই খড়গপুরে ঘর আগলালেন দিলীপ ঘোষ

দিলীপের জবাব, “আমি এই বাংলোয় বসে রয়েছি। আর আমার অসংখ্য ছেলে ময়দানে খাটছে। তৃণমূলের ক্ষমতা নেই কোথাও অশান্তি করে। অশান্তির চেষ্টা করলে আমার ছেলেরাই প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজনে আমিও যাব।”

খোশমেজাজে: খড়্গপুরের রেল বাংলোয় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

খোশমেজাজে: খড়্গপুরের রেল বাংলোয় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

সকাল ৮টা: খবরের কাগজে চোখ।

বেলা ১০টা: নিয়ম মেনে প্রাতরাশ।

দুপুর ১২টা: কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক। এক ফাঁকে বাইক বাহিনীর যুবকদের ধরালেন উত্তেজনা প্রবণ বুথের তালিকা।

বেলা যত এগিয়েছে হাসিমুখেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিকেলে ভোট শেষে বাংলোর বাগানের গাছে জলও দিয়েছেন খোশমেজাজে।

‘খাসতালুক’ খড়্গপুরেই উপ-নির্বাচনের সারাটা দিন কাটালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার থেকেই তৃণমূল অভিযোগ তুলেছিল, দিলীপ বহিরাগত। ফলে, ভোটের দিন থাকতে পারেন না। দিলীপ অবশ্য ‘গড়’ ছাড়েননি। সোমবার দিনভরই ছিলেন বিএনআর গার্ডেন সংলগ্ন রেল বাংলোয় নিজের সাংসদ-নিবাসে। সকাল গড়িয়ে সন্ধে, বাংলো থেকে বেরোননি। কোনও বুথেও যাননি।

বাংলোয় বসেই ভোট করালেন তা-হলে?

দিলীপের জবাব, “আমি এই বাংলোয় বসে রয়েছি। আর আমার অসংখ্য ছেলে ময়দানে খাটছে। তৃণমূলের ক্ষমতা নেই কোথাও অশান্তি করে। অশান্তির চেষ্টা করলে আমার ছেলেরাই প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজনে আমিও যাব।”

খড়্গপুর উপ-নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝা-কে নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই ক্ষোভ ছিল। নানা মামলায় নাম জড়ানো প্রেমচাঁদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলে। প্রেমচাঁদ তাই ভোটে লড়েছেন দিলীপের প্রার্থী হিসেবেই। আর সেই প্রার্থীকে জেতাতে চেষ্টার কসুর রাখেননি দিলীপ। পড়ে থেকে প্রচার সেরেছেন। শহর ছেড়েছেন একেবারে ভোট মেটার পরে। ভোটের শহরে দিলীপের থাকা নিয়ে অবশ্য কম টানাপড়েন হয়নি। এলাকার সাংসদ হলেও খড়্গপুরের ভোটার না হওয়ায় উপ-নির্বাচনের দিন কী ভাবে দিলীপ শহরে থাকেন, সেই প্রশ্ন তুলে অভিযোগ জানিয়েছিল তৃণমূল। মহকুমাশাসক তথা খড়্গপুরের নির্বাচনী আধিকারিক বৈভব চৌধুরীর কাছে পাল্টা আবেদন করেছিলেন দিলীপ। নিজে ও আরও ৭জনের ভোটের দিন থাকার অনুমতি চেয়েছিলেন। সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। শহরও ছাড়েননি দিলীপ। তাঁর যুক্তি, “আমি ভোটার না হলেও এলাকার সাংসদ। আমার এখানে থাকার জায়গা রয়েছে। আমি ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারলেও এখানে থাকতেই পারি। মহকুমাশাসক নিজেও তো ভোটার নয়। তাহলে তিনি থাকেন কী ভাবে?”

মহকুমাশাসক বলছেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। কিন্তু কমিশন থেকে কোনও সাড়া পাইনি।” প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের নির্বাচন কমিশনের একটি নিয়মে বলা হয়েছিল, সাংসদ অন্য কেন্দ্রের ভোটার হলেও তিনি তাঁর সংসদ এলাকায় উপ-নির্বাচন বা অন্য কোনও নির্বাচনের সময় (বিধানসভা) তিনি থাকতে পারবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সাংসদ ভোটকেন্দ্রিক কোনও কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সেই মতো এ দিন দিলীপ সাংসদ-নিবাসের বাইরে পা রাখেননি। তবে তাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। সেটা কি নিয়মে আছে? এ বার মুখে কুলুপ এঁটেছেন কমিশনের কর্তারা। রেল বাংলোয় থাকলেও দিনভর ভোটেই ছিলেন দিলীপ। টিভিতে চোখ রেখেছেন, দলের নেতাদের সঙ্গে বার বার বৈঠক সেরেছেন, ফোন করে জেনেছেন খুঁটিনাটি। সামান্য গোলমালের খবর পেলেই দলের ছেলেদের সেখানে পাঠিয়েছেন।

ভোট শেষে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারের দাবি, ‘‘আমার সঙ্গে কারও স্নায়ুযুদ্ধ নেই। দিলীপ ঘোষেরও নয়। মানুষের ভোটেই আমি জিতব।’’

জয়ের দাবি করছেন দিলীপও। শুধু খড়্গপুরে নয়, বাকি দু’টি কেন্দ্রেও। তবে খড়্গপুরের লড়াইটা যে একান্তই তাঁর নিজের লড়াই, এখানে হার-জিত যে দলের থেকেও অনেক বেশি তাঁর, এ দিন তা বুঝিয়েই খড়্গপুর ছেড়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।

অন্য বিষয়গুলি:

By Election Kharagpur Dilip Ghosh BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy