এই ধরনের সফরই বাড়াচ্ছে ঝুঁকি।—ছবি পিটিআই।
করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতেই লকডাউন। দেশজোড়া তালাবন্দিদশা। পুরোপুরি থমকে গণপরিবহণ। কিন্তু সংক্রমণের যাবতীয় আশঙ্কা উপেক্ষা করে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যাতায়াত করেছেন যাত্রীদের একাংশ। সারা দেশের ৪০০টি শহর এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এক সপ্তাহ ধরে সমীক্ষা চালিয়ে যাত্রীদের সফরের ধরন বিচার করে এই তথ্য পেয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-র সমীক্ষকেরা।
প্রভূত আশঙ্কা বাড়িয়ে সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, লকডাউন হোক বা না-হোক, শিক্ষিত এবং ওয়াকিবহাল অংশের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ যে-কোনও পরিস্থিতিতেই তাঁদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সফর করতে চান। বিমান ও দূরপাল্লার ট্রেনে সফর করতে স্বচ্ছন্দ ওই অংশ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ‘উত্তম-বাহক’ বলে মনে করছেন সমীক্ষকেরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই অংশের মধ্যে বাইরের শহরে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মী ও পড়ুয়াদের একাংশ রয়েছেন। ঘরবন্দিদশার সময় তাঁরা অন্য শহরে থাকার চেয়ে যে-কোনও পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
সামাজিক বিন্যাস অনুযায়ী অসংগঠিত শ্রমিকদের অনেকেই লকডাউনের ফলে প্রভূত আর্থিক ক্ষতি এবং বিপন্নতার মধ্যে পড়ছেন বলে অভিযোগ। দেশের বিভিন্ন শহরের অর্থ এবং খাদ্যের অভাবের মধ্যে তাঁদের আটকে থাকার ঘটনাও ঘটেছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় ভিন্ রাজ্যে কর্মরত কর্মী-শ্রমিকদের অনেকে হেঁটে বাড়ি ফিরতে মরিয়া। তাঁদের মধ্যে সকলেই যে ভাইরাস-ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল, এমন না-ও হতে পারে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েও ২০ শতাংশ যাত্রী যে-বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েছেন, সমীক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই প্রবণতা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সমীক্ষকদের বক্তব্য, ওই সব লোকের বেশির ভাগই বিমান বা ট্রেনের বাতানুকূল শ্রেণিতে সফর করেছেন বা করতে অভ্যস্ত। দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা-সংক্রমণের জন্য তাঁদের অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সমীক্ষকদের অন্যতম, খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষক কিঞ্জল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই যাত্রীদের বয়ঃসীমা ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। অনেকের ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রতিরোধক্ষমতার উপরে আস্থাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না-মানার মানসিকতা কাজ করেছে।’’
এমনকি কোনও একটি নির্দিষ্ট শহরে লকডাউন ঘোষিত হলেও এই ধরনের বেপরোয়া প্রবণতার লোকজন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। লকডাউন ভেস্তে দেওয়ার মানসিকতা তাঁদের মধ্যে প্রবল। তাঁদের থেকে সংক্রমণ ঠেকাতে শহর-গ্রামে সার্বিক লকডাউনই একমাত্র উপায় বলে জানাচ্ছেন সমীক্ষকেরা।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সাড়ে তিন হাজার মানুষের মধ্যে ৩০ শতাংশ মানুষ শহরকেন্দ্রিক লকডাউন এবং কোয়রান্টিন আশা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। সার্বিক লকডাউন তাঁদের ধারণার মধ্যে ছিল না। তবে তাঁরা ঘরে থাকতে আপত্তি করেননি। পরের দিকে অনেকেই পরিস্থিতির ব্যাপকতা বুঝে বাড়িতে থেকে কাজ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে প্রথম দিকে যেখানে মাত্র ৪০ শতাংশ বাড়িতে থেকে কাজ করার কথা ভাবলেও পরে সেই সংখ্যা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। সমীক্ষকদের অন্যতম, খড়্গপুর আইআইটি-র অধ্যাপক এবং পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্র বলেন, ‘‘বিশেষ পরিস্থিতিতে মানুষের যাতায়াতের প্রবণতা, তাঁদের মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব, সিদ্ধান্ত মান্য করার ক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতির মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করতে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy