Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

টাকা কম বলেই কি খাতা দেখতে গড়িমসি

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখলে খাতা-পিছু মেলে মাত্র আট থেকে বারো টাকা! পারিশ্রমিক বলা হোক বা সম্মান-দক্ষিণা, পরিমাণটা যে অত্যন্ত কম, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের বড় অংশের মধ্যে দ্বিমত নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখলে খাতা-পিছু মেলে মাত্র আট থেকে বারো টাকা! পারিশ্রমিক বলা হোক বা সম্মান-দক্ষিণা, পরিমাণটা যে অত্যন্ত কম, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের বড় অংশের মধ্যে দ্বিমত নেই। তাঁদের বক্তব্য, প্রাপ্তিটা নগণ্য বলেই শিক্ষকেরা খাতা দেখার ব্যাপারে উৎসাহ হারাচ্ছেন। ফল প্রকাশে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

এখানেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষা শিবিরের অন্য একটি অংশ। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণা যে কম, সেটা মেনে নিলেও সেই সুবাদে খাতা দেখায় গড়িমসির ব্যাপারটা কি সমর্থন পেয়ে যায়? নাকি, সেটা পাওয়া উচিত?

উচিত কি না, সেই বিতর্কের মধ্যেই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত সেনেটের বৈঠকে খাতা দেখার সমস্যা এবং যৎসামান্য পারিশ্রমিকের বিষয়টি ওঠে। ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কিছু সদস্য। খাতা দেখার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অধ্যক্ষদের একাংশ। মুশকিল আসানের জন্য অধ্যক্ষদের কাছে পরামর্শ চান অস্থায়ী উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ।

এ দিন সেনেটের বৈঠকে বাজেট নিয়েই আলোচনা করার কথা ছিল। তার মধ্যেই খাতা দেখার পারিশ্রমিক এবং ফল প্রকাশে দেরি নিয়ে সরব হন কয়েক জন সদস্য। তাঁরা জানান, এখন পাশ কোর্সের খাতা দেখলে আট টাকা আর অনার্সের উত্তরপত্রের ক্ষেত্রে মেলে মাত্র বারো টাকা। এটা সম্মানজনক পারিশ্রমিক নয়। বাগবাজার উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষা মহুয়া দাস বলেন, ‘‘খাতা দেখার টাকা একটু বাড়ালে শিক্ষকেরা এই কাজে আরও উৎসাহিত হতে পারেন।’’

ফল প্রকাশে দেরি নিয়ে সব থেকে সরব ছিলেন চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষে শুধু স্নাতক স্তরের পরীক্ষার্থীদের থেকেই সাড়ে তেরো কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। অথচ নির্ধারিত সময়ের দু’মাস পরেও স্নাতকের প্রথম বর্ষের পাশ ও অনার্স এবং দ্বিতীয় বর্ষের পাশ কোর্সের ফল প্রকাশ করা যায়নি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে খাতাই জমা পড়েনি!’’

এর পরেই স্বচ্ছতা ও কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কথা তোলেন ওই অধ্যক্ষ। মাইকেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে শ্যামলেন্দুবাবু জানান, পরীক্ষকদের মধ্যে কী ভাবে খাতা বণ্টন করা হবে এবং নির্দিষ্ট ২১ দিনের মধ্যে খাতা ফেরত না-পেলে কী করা যাবে, সেই সব সমস্যার ক্ষেত্রে কোনও দিশা দেখায় না বি‌শ্ববিদ্যালয়। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে তৃতীয় বর্ষের টেস্ট। কিন্তু এখনও দ্বিতীয় বর্ষের পাশ কোর্সের ফলই প্রকাশ করা যায়নি। যে-সব পরীক্ষক খাতা দেখে নির্জিষ্ট সময়ে ফেরত দেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষদের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতাও নেই। শিক্ষায় এমন অনিয়ম কেন?’’

বৈঠকে তখন জোর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন উপাচার্য। আসরে নামেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার উপযুক্ত জায়গা নয়। তবু বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ব্যাপারে কিছু বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’’ তিনি জানান, পরীক্ষকেরা যাতে সময় মেনে খাতা ফেরত দেন, সেটা অধ্যক্ষদেরই দেখতে হবে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, স্নাতক স্তরে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষ মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ৩০ লক্ষ। সেই তুলনায় শিক্ষক-পরীক্ষক খুবই কম। এটা ফল প্রকাশে দেরির অন্যতম প্রধান কারণ। শিক্ষকদের প্রত্যেককে অনেক বেশি খাতা দেখতে হয়। সেই জন্যই সময়ে উত্তরপত্র ফেরতের ব্যাপারে তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা চলে না। তাঁদের পারিশ্রমিক বাড়ানো যায় কি না, সেই বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Result delayed controversy calcutta university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy