ফাইল চিত্র।
এ বার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে সরাসরি আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে ধনখড়ের নামে চার্জশিট হয়েছিল বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। পাশাপাশি, বঙ্গভঙ্গের হিড়িক তোলার নেপথ্যে রাজ্যপালের ‘ইন্ধন’ রয়েছে—এই অভিযোগও এ দিন তুলেছেন মমতা। ধনখড় অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অশান্তিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণের দিন মমতার সামনেই ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল ধনখড়। তার পর থেকেই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের নিশানা করছে রাজভবন। এ নিয়ে বারংবার নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেও রাজভবনকে শান্ত করতে পারেনি রাজ্য। এ বার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কার্যত খড়গহস্ত হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই রাজ্যপালের নাম হাওয়ালা জৈন কেসে ছিল। ১৯৯৬ সালের হাওয়ালা-জৈন মামলা। চার্জশিটে নাম ছিল। তার পর কোর্টে গিয়ে ক্লিয়ার করে। ক্লিয়ার করার পরে আবার পিআইএল বা রিট পিটিশান কিছু একটা হয়। সেটা এখনও পর্যন্ত পড়ে আছে কোর্টে। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। আমি দুঃখিত এটা বলার জন্য।” এর আগে রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একাধিক চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। দুর্নীতির প্রসঙ্গে টেনে, রাজ্যপালের নিয়োগ নিয়েই প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “কেন কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের এক জনকে রাজ্যপাল করেছে? কেন্দ্রীয় সরকার যদি না জানে, তা হলে আমি বলে দিচ্ছি, আপনি চার্জশিট বার করুন। ওঁকে সরাতে আমি তিনটি চিঠি লিখেছি। কেন্দ্রের এটা ভেবে দেখা উচিত।”
রাজভবনে এ দিন ধনখড় বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে রাজ্যপালকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলেছেন এবং হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে তাঁকে চার্জশিটপ্রাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে তিনি ‘স্তম্ভিত’! রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, এত অভিজ্ঞ রাজনীতিক, কী ভাবে এমন কথা বলে দিলেন? মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা সত্যের থেকে বহু দূরে। আমার নামে কখনওই ওই ঘটনায় চার্জশিট হয়নি, নথিপত্র দেখলেই জানা যাবে। চার্জশিট থেকে নাম ছাড়াতে আমাকে আদালতেও যেতে হয়নি। কেউ যদি বলেন নিল আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে জগদীপ ধনখড় চাঁদে গিয়ে নেমেছিলেন, বিনা প্রশ্নে সেটাই কি মেনে নেওয়া হবে?’’ ধনখড় বরং পাল্টা দাবি করেছেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং অধুনা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিন্হার নাম হাওয়ালা মামলার চার্জশিটে ছিল, পরে তিনি মুক্তও হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘অসত্য অভিযোগ’ করার অভিযোগে রাজ্যপাল কি কোনও আইনি পদক্ষেপ করবেন? মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের দিক থেকে তীব্র আক্রমণের মুখেও দৃশ্যত সুর নরম করে ধনখড়ের মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিজ্ঞ রাজনীতিক, আমার ছোট বোনের মতো। ভারতীয় সংস্কৃতিতে দাদা কখনও বোনকে আদালতে টেনে নিয়ে যায় না। আমি বোঝানোর চেষ্টা করে যাব, কোনও প্রশ্ন তুললেই এমন সংঘাত বাঞ্ছনীয় নয়।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র ও সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় আবার পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘হাওয়ালা নিয়ে রাজ্যপাল অর্ধসত্য বলছেন। তাঁর নাম যে জড়ায়নি, এ কথা তিনি বলতে পারেননি!’’
সম্প্রতি রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন। সফর শেষ করে এ দিনই শহরে ফিরেছেন তিনি। বস্তুত, কিছু দিন আগে থেকেই উত্তরবঙ্গকে আলাদা মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন সেখানকার বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। এমন বিতর্কের মাঝে রাজ্যপালের সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গ ঘুরে এলেন। কী করতে গিয়েছিলন? কত জনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ আবার আর এক জনকে সেখানে রেখে দেওয়াও হয়েছে। কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন? হঠাৎ উত্তরবঙ্গ সফরটা বেছে নিলেন? আমি এটাও জানি, তাদের বলা হয়েছে আন্দোলন গড়ে তোলো। এটা রাজ্যপালের কাজ নয়।” রাজ্যপাল অবশ্য উত্তরবঙ্গে গিয়ে কোনও অশান্তিতে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। জিটিএ-তে সিএজি অডিটের কথা বলেছেন বলেই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন রাজ্যপাল।
নির্বাচনের আগে থেকেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের ‘প্রভাবিত’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও এক কদম এগিয়ে এ দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যপালকে ‘মদত’ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গোটা বিষয়ে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “দল-কেন্দ্রিক নির্বাচন আমি আগে দেখিনি। তার পরেও যখন তারা হেরে গেল, তখন সেটা হজম করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে প্রতিদিন রাজ্যপালকে ডেকে পাঠাচ্ছে। তাকে তথ্য দিচ্ছে। ইডি পাঠাচ্ছে এবং সিবিআই পাঠাচ্ছে। তারা কি দেশটাকে চালাতে পারছে? কতগুলো দেশ ভারতকে ‘ব্যান’ করেছে, কোভিডের জন্য? আপনারা কি মনে করেন না, এটা দেশের পক্ষে লজ্জার! আমরা আমাদের দেশ নিয়ে গর্ব করি। তাই আমরা অত্যন্ত বিব্রত বোধ করছি।”
রাজ্যপাল ফের দাবি করেছেন, কোনও অনিয়ম বা কেলেঙ্কারি যাতে ‘কার্পেটের নীচে চাপা না পড়ে’, সংবিধান মেনে সেই চেষ্টাই করছেন তিনি। নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যপালের প্রশ্ন, ‘‘অতিমারি মোকাবিলায় জিনিসপত্র কেনা নিয়ে দু’হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটি করেছিলেন। তাদের রিপোর্ট কোথায়? রিপোর্টের কথা আমি বলেছি, সাড়া পাইনি।’’ তৃণমূল নেতা সুখেন্দুবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যপাল আগে পিএম কেয়ার্স ফান্ডের অডিট এবং তার হিসেবটা চেয়ে নিন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy