—প্রতীকী ছবি।
লটারির নামে প্রতারণা করে সেই টাকা হাওয়ালা পথে পাকিস্তান পাঠানোর একটি আন্তর্জাতিক চক্রের হদিশ পেল রাজ্য পুলিশের সিআইডি। চক্রে জড়িয়ে গেল বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক ফলজাত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থার। সিআইডি গ্রেফতার করেছে ওই কোম্পানির এক ডিরেক্টর এবং এক পদস্থ কর্মীকে।
সিআইডি সূত্রে খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁরা অভিযোগ পাচ্ছিলেন একটি নতুন প্রতারণার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই একটি +৯২ নম্বর থেকে ফোন পাচ্ছিলেন। ভারতের যে কোনও নম্বর যেমন শুরু হয় ৯১ দিয়ে তেমনি আন্তর্জাতিক টেলিকম রীতি অনুযায়ী পাকিস্তানের কোড ৯২। সেই কারণে পাকিস্তান থেকে আসা যে কোনও ফোন নম্বর শুরু হয় +৯২ দিয়ে।
সিআইডি কর্তারা বলেন, অনেকেই এরকম নম্বর থেকে ফোন পাচ্ছিলেন। ফোনে তাঁদের বলা হত তাঁরা বড় অঙ্কের লটারি জিতেছেন। অনেকেই সেই লটারির লোভে ফাঁদে পা দিত। তারপরই বলা হত লটারির চেক তৈরি রয়েছে। কিন্তু সেই টাকা পেতে গেলে একটি প্রক্রিয়াকরণ বা প্রসেসিং ফি দিতে হবে। মোটা টাকার লোভে অনেকেই সেই টাকা দিয়ে দিতেন। বিভিন্ন ভারতীয় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া থাকত। সেখানে টাকা জমা হত। তার পর সেই লটারির টাকা কোনও দিনই আসত না। এক সিআইডি আধিকারিক বলেন,“ এই ধরণের প্রতারণা করে থাকে সাধারণত নাইজেরিয়ান জালিয়াত গ্যাংরা। তার সঙ্গে আমরা পাকিস্তানের নম্বর মেলাতে পারছিলাম না। সেই মিসিং লিঙ্কটা পাওয়া গেল চেক জালিয়াতি চক্রের অন্যতম পাণ্ডা দিল্লির উমরকে গ্রেফতার করার পর।” সিআইডি আধিকারিকরা পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানা এলাকার এ রকমই একটি অভিযোগের ভিত্তিতে হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন।
পাকিস্তানের নম্বর থেকে ফোন করে কী বলে প্রতারণা, শুনুন:
সিআইডি সূত্রে খবর, দিল্লির উমরকে জেরা করেই জানা গিয়েছিল, দেশ জুড়ে চলা চেক জালিয়াতির টাকা হাওয়ালা পথে চলে যাচ্ছে পাকিস্তান এবং দুবাইতে। উমরকে জেরা করেও জানা যায়, মালয়েশিয়াতে বসে থাকা এক এজেন্টের কাছে সে টাকা পাঠাত। আবার সরাসরি হাওয়ালাতে সে নিজেও পাকিস্তানে টাকা পাঠিয়েছে। ডিআইজি সিআইডি অপারেশনস্ নিশাত পারভেজ বলেন,“ উমর এবং তার শাগরেদ গুড্ডুকে জেরা করে আমরা এই লটারি গ্যাং সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য পাই।”
আরও পড়ুন: ভারতরত্ন-কে অসম্মানের অভিযোগ, জুবিন গর্গের বিরুদ্ধে এফআইআর বিজেপি-র
আরও পড়ুন: মোদীর সভা ঘিরেও মাঠ-সঙ্কট, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আটকায় কে! চ্যালেঞ্জ বড়মার নাতির
সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই কোন কোন অ্যাকাউন্টে লটারি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রসেসিং ফি জমা পড়ত তার হদিশ করা শুরু করেন গোয়েন্দারা। প্রথমে তাঁরা হতাশ হন। কারণ প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যেত যার নামে অ্যাকাউন্ট তিনি কিছুই জানেন না। মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট গুলো ব্যবহার করছে অন্য কেউ। কে ব্যবহার করছে সে সম্পর্কেও কোনও তথ্য নেই যাদের অ্যাকাউন্ট তাঁদের কাছে। কার্যত অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে হঠাৎই একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের একটি হদিশ পান গোয়েন্দারা। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন,“ টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে টাকা উঠে যেত ওই ভাড়ার অ্যাকাউন্ট থেকে।” সেই টাকা জমা হত অন্য কয়েকটি অ্যাকাউন্টে। সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন কয়েকটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের টাকা জমা হওয়ার পরই সেই টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর পাঠানোতে সাহায্য করছেন রাজেশ ঘোষ এবং বিধান কির্তনীয়া নামে দুই ব্যক্তি।
ওই দুই ব্যাক্তিকে জেরা করতে গিয়ে জানা যায় রাজেশ হলেন প্রাণ বেভারেজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টর। বাংলাদেশের ফলজাত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা প্রাণ ফুড লিমিটেডের ভারতীয় শাখা এটি। ধৃত বিধান ওই সংস্থারই পদস্থ কর্তা। সিআইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওই সংস্থার সরাসরি কোনও যোগ ওই প্রতারণায় আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ওই দুই ব্যক্তি গত কয়েক মাসে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা হাওয়ালা পথে পাকিস্তানে পাচার করেছে এমন প্রমাণ হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। চেক জালিয়াতি থেকে শুরু করে এই লটারি প্রতারণা, পাকিস্তান থেকে বসে কে এর কলকাঠি নাড়ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পিছনে যে বড় চক্র আছে নিশ্চিত গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও এই চক্রের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাঁরা এই প্রতারণার পিছনে আইএসআই-ডি কোম্পানির যোগসাজশ উড়িয়ে দিতে পারছেন না। কারণ এর আগে মহারাষ্ট্রে এ রকমই একটি লটারি প্রতারণা সামনে এসেছিল যার পিছনে সরাসরি দাউদের ডি-কোম্পানির যোগ খুঁজে পেয়েছিলেন ইডির গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy