কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙেছে, আর তার রাজনৈতিক সংঘর্ষের আওয়াজ এ দিন পাওয়া গেল সুদূর উত্তরে শিলিগুড়িতে।
সবে বৃহস্পতিবার উড়ালপুল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে। দিদি বললেন, বাম আমলে এই সেতু তৈরির চুক্তি হয়েছে। এতটা নির্লজ্জ আমি ভাবতে পারি না। দিদি, ওই সেতুর কাজ যদি শেষ হতো, আপনি উদ্বোধন করতেন, তখন কি বলতেন সেতু বাম আমলে তৈরি?’’ প্রধানমন্ত্রীর এমন আক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আঙুল তুললেন বাম আমলের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দিকে। এর পরপরই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের গলাতেও শোনা গেল এক সুর। যার শুনে ‘মোদি-দিদি গট আপের’ অভিযোগ তুললেন অশোক।
ঘটনাচক্রে কলকাতার বিবেকানন্দ উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়েছিল বাম আমলেই। তখন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য। উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দিনই অশোকবাবু দাবি করেছিলেন, যে পিলার বাম আমলে তৈরি হয়েছে এবং যে পিলার তৃণমূল আমলে হয়েছে, দুটোই পরীক্ষা করে দেখা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, কোন কাজ ঠিকঠাক হয়েছে আর কোন কাজে রয়েছে ভেজাল। উড়ালপুল তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে যদি কালো তালিকাভুক্তই করা হয়, তা হলে বাম আমলে দেওয়া বরাত কেন তৃণমূল বাতিল করেনি, উঠেছিল সেই প্রশ্নও।
এই প্রসঙ্গই আবার এ দিন ফিরে এল অশোক ভট্টাচার্যের খাসতালুকে। প্রথমে সকালে সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সাংবাদিক বৈঠকে। সিদ্ধার্থ সেখানে ঘটনার সিবিআই তদন্তেরও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখতে সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’’ বামেরা তথ্য লুকিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এক ঘণ্টার মধ্যে গৌতম দেব আক্রমণ করেন অশোককে। বলেন, ‘‘কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল বাম আমলেই।’’ এর পক্ষে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দেখাতে চান, কবে টেন্ডার ডেকে সংস্থাটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং কবে তাকে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড সরকার কালো তালিকাভুক্ত করে। দেখা যাচ্ছে, সবটাই হয়েছে ২০১০ সালের মধ্যে।
জোড়া আক্রমণের জবাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অশোকবাবু মুখ খোলেন। তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ম্যাচ ফিক্স হয়ে গিয়েছে। দিদিভাই আর মোদিভাই গট আপ গেম খেলছেন। ভোট যত এগোচ্ছে, মানুষের কাছে এদের মুখ আর মুখোশের তফাত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ বরাত দেওয়া নিয়ে অশোকের যুক্তি, ‘‘আমাদের সময় কাজই করা যায়নি। ওঁরাই (তৃণমূল) তো ক্ষমতায় বসে নিজেদের লোকজন দিয়ে সাব টেন্ডারে কাজ ও সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া শুরু করেন। তা এত নিম্নমানের হয়েছে যে উড়ালপুলটি ভেঙেই পড়ল।’’ একই সঙ্গে তিনি মানহানির মামলা দায়ের করারও হুঁশিয়ারি দেন। যা শুনে গৌতম বলেন, তিনি আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আর সিদ্ধার্থের দাবি, ‘‘বাম আমলের অনেক কিছুর খোঁজ আমরাও পাচ্ছি।’’ সিদ্ধার্থ অবশ্য মমতাকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সেতুর নকশায় ত্রুটির কথা জানতেন। প্রশ্ন ওঠে, তা সত্ত্বেও কাজ বন্ধ হয়নি কেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন?’’ সিদ্ধার্থের প্রশ্ন, স্টিফেন কোর্টে আগুন লাগার পরে মমতা যদি তৎকালীন দমকলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন, তা হলে বিবেকানন্দ সেতুর বেলায় তিনি দায় নেবেন না কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy