Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
শাসকের দাপটে ভোট-ময়দানে নেই বিরোধীরা, তবু ঝরল রক্ত

জিতেও কেন খুন

নন্দীগ্রামের গোপালপুরে এ দিন ৮৪ নম্বর বুথ চত্বরে গুলিতে নিহত হয়েছেন যজ্ঞেশ্বর ঘোষ (৬৫) এবং বিশ্বজিৎ মান্না (২৮)। অভিযোগের তির শাসকদল তৃণমূলের দিকে।

শোকার্ত: যজ্ঞেশ্বর ঘোষের বৌমা।

শোকার্ত: যজ্ঞেশ্বর ঘোষের বৌমা।

কেশব মান্না
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০০:৪৩
Share: Save:

কয়েকদিন আগেই মারা গিয়েছেন দিদি। সোমবার, পঞ্চায়েত ভোটের দিন ছিল তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। হঠাৎ বোমা এবং গুলির বিকট শব্দ! মন্ত্রপাঠ শেষেই ছুটে যান সকলে। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ভাই। পাশেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন আরেক যুবক।

নন্দীগ্রামের গোপালপুরে এ দিন ৮৪ নম্বর বুথ চত্বরে গুলিতে নিহত হয়েছেন যজ্ঞেশ্বর ঘোষ (৬৫) এবং বিশ্বজিৎ মান্না (২৮)। অভিযোগের তির শাসকদল তৃণমূলের দিকে। এ দিন যজ্ঞেশ্বরবাবুর দিদি সীতা ঘোষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। তাঁর ভাগ্নে চন্দন ঘোষ বলেন, ‘‘শ্রাদ্ধের কাজে বসেছিলাম। আওয়াজ শুনলেও মন্ত্র ছেড়ে প্রথমে যেতে পারেনি। পরে গিয়ে দেখি এই কাণ্ড।’’

ওই অনুষ্ঠানস্থলের কয়েকটি বাড়ির পরেই যজ্ঞেশ্বরবাবু বাড়ি। সেখানে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী। বারেবারে তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘‘তোমরা (শাসকদল) তো ভোট জিতেই গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো বলেছিলেন শান্তিতেই ভোট হবে। তাহলে এ সব কেন?’’ বাড়িতে রয়েছেন যজ্ঞেশ্বরবাবুর ছেলে, বৌমা এবং নাতি। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য বাপের বাড়িতে এসেছিলেন তাঁর মেয়ে। সাংবাদিকের কাছে প্রশ্নের শুনে তাঁদের একটাই উত্তর, ‘‘আর এ সব করে কী হবে!’’

যজ্ঞেশ্বরবাবুর বাড়ির দৃশ্য দেখা গিয়েছে বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতেও। গোপালনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছিল, সেই ৮৪ নম্বর বুথের পাশেই বিশ্বজিতের বাড়ি। ওযুধ দোকানের কর্মী বিশ্বজিতের পরিবারে রয়েছেন বাবা মনোরঞ্জন মান্না, মা ভক্তি মান্না, স্ত্রী জয়ন্তী এবং দুই শিশুসন্তান অরণ্য এবং অপরাজিতা।

এদিন দুপুরে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, অঘোরে ঘুমোচ্ছে বছর তিনেকের অরণ্য। বাবার মৃত্যুর কথা বোঝার মতো তাঁর বয়স হয়নি। আ কান্নায় বারবারা জ্ঞান হাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী জয়ন্তীদেবী। বিশ্বজিতের মাসি বলেন, ‘‘সকালে ওরা সকলে মিলে ভোট দিতে গিয়েছিল। বাকিরা ফিরে এলেও বিশ্বজিৎ থেকে গিয়েছিল। বলেছিল দুপুরে ফিরে বাড়িতে খাবে। মানুষটা আর ফিরল না।’’

এমন ঘটনায় হতবাক গ্রামবাসীরাও। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বুথের ভিতরে থাকা নির্দল প্রার্থী মানস ঘোষের এজেন্ট মঙ্গলেন্দু শীকেও মারধর করা হয়েছে। ছিনতাই করা হয়েছে ব্যালট। বোমায় আহত হয়েছেন বুথের পাশের বাড়ির দুই মহিলা।’’

দিনের শেষে থমথমে গোপালপুরবাসীর একটাই মন্তব্য, ‘‘কই আগে তো কখনও এমন হয়নি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy