শোকার্ত পরিজন। —নিজস্ব চিত্র।
চলন্ত গাড়ি থামিয়ে সরস্বতী পুজোর চাঁদা তোলার সময় লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সদাগর বাউড়ি (১৭)। কুলটি থানার রানিতলা লাগোয়া জিটি রোডে বৃহস্পতিবার ভোরের এই ঘটনায় আরও এক ছাত্র গুরুতর জখম হয়েছে। সে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ রানিতলার কাছে জিটি রোডে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তুলছিল এক দল কিশোর। তাদের জ়িজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, একটি পণ্যবোঝাই লরি দ্রুত গতিতে জিটি রোড ধরে বরাকরের দিকে যাচ্ছিল। তারা লরিটিকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেটি থামেনি। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সদাগর লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে যায়। সেখানেই দাঁড়িয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির আর এক ছাত্র। লরিটি তাকেও ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। অন্য ছাত্রেরা মৃত ও আহতকে রাস্তার পাশে সরিয়ে আনে। ইতিমধ্যে সেখান দিয়ে পেরোচ্ছিল পুলিশের একটি টহলদার জিপ। ওই দু’জনকে জিপে তুলে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা সদাগরকে মৃত বলে জানান। অন্য জনকে কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুলিশ ওই দুই ছাত্রের বাড়িতে খবর দেয়। তারা দু’জনেই কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র।
ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন রূপা বাউড়ি। পাড়ার মহিলারা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেখানে পুজোর মণ্ডপ তৈরির কথা ছিল, সেখানে বাঁশের খুটি পোঁতা হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, এই ঘটনার পরে অন্য ছাত্রেরা আর পুজো করতে চাইছে না। সদাগরের বাবা হলধর বাউড়ি নিজে হাসপাতালে যাননি। প্রতিবেশীদের ফোন করে বারবার জানতে চাইছিলেন, দেহের ময়না-তদন্ত শেষ হয়েছে কি না। ছেলে যে অত ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, সে কথা তাঁরা জানতেনই না বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “পুলিশের কাছে প্রথমে খবর পাই। পরে জানলাম, রানিতলায় বন্ধুরা সরস্বতী পুজো করবে। তাই চাঁদা তুলতে গিয়েছিল।”
দ্বাদশ শ্রেণির যে ছাত্রটি জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তার বাড়িতে রীতিমতো উদ্বেগ। বাড়ির অনেকেই হাসপাতালে গিয়েছেন। ওই ছাত্রের জ্যাঠা মন্মথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অন্য দিনের মতো বুধবার রাতেও ওই ছাত্র ঠাকুমার সঙ্গে শুয়েছিল। ভোরবেলা চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। ঘরের কেউ জানত না। সকাল ৬টা নাগাদ পুলিশের ফোনে সব জানতে পারি।” দুর্ঘটনার খবর ছড়াতেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা দুই ছাত্রের বাড়িতে যান। শোকসভার পরে এ দিনের মতো স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধুর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে মৃত ছাত্রের সহপাঠী ও শিক্ষকেরা। অঙ্কের শিক্ষক মলয় সরখেল বলেন, “আমাদের মন ভাল নেই। স্কুলের পুজো বন্ধ করা যাবে না। তাই কোনওমতে নিয়মরক্ষার পুজো হবে।”
এক পুলিশ আধিকারিক জানান, জিটি রোডে চলন্ত গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলার হিড়িক পড়েছে ইদানীং। নিয়ামতপুর থেকে বরাকর পর্যন্ত একাধিক জায়গায় এই ভাবে চাঁদা তোলার অভিযোগ এসেছে। পুলিশের গাড়ি দেখলেই চাঁদা আদায়কারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলেই ফের চাঁদা তোলা শুরু হয়। কুলটি থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy