বুথের পথে। বর্ধমানে নিজস্ব চিত্র।
জনপ্রিয় বাংলা টিভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শো-য়ে দাপটে একের পর এক টাস্ক শেষ করছে বাড়ির মেয়েটা। রোজকার চেনা মুখ দেখতে টিভির সামনে ভিড় জমিয়েছেন পরিবারের সকলে। কিন্তু যাঁকে নিয়ে সবার আগ্রহ সেই শুভলক্ষ্মী তখন ভোটের বুথ তৈরিতে ব্যস্ত।
শুভলক্ষ্মীর মতো জেলার দু’টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২৮টি বুথে মোট ১৯২ জন মহিলা ভোটকর্মী রয়েছেন এ বার। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের দাবি, এ রাজ্যে এতগুলো বুথে মহিলাদের দিয়ে ভোট প্রক্রিয়া চালানো আগে হয়নি।
বিভিন্ন ভোটের সরঞ্জাম দেওয়ার কেন্দ্রের (ডিসিআরসি) মহিলা ভোটকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলে জানা গেল, কেউ ছোট ছেলেকে বাড়িতে ফেলে এসেছেন, কারও স্বামী ডিসিআরসি কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। তবে সবারই এক কথা, শুধু চাকরি আর হেঁসেল সামলানোই নয়, প্রয়োজনে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রও সামলাতে পারি। সেটাই এ বার দেখিয়ে দেব। পুরুষ সহকর্মীরা আর আমাদের টিপ্পনি কাটতে পারবেন না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে বর্ধমানে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫০টি বুথ মহিলা কর্মীদের দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা নির্বাচন কমিশন। কাটোয়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান দক্ষিণ, কালনা মহকুমাতে ৮টি করে ও বর্ধমান সদরে ১০টি বুথে মহিলারা নির্বাচনের দায়িত্ব সামলাবেন। এর জন্য নির্বাচন কমিশন ২৫০ জন মহিলাকে ভোটকর্মী হিসাবে নিয়োগ করেছেন। যার মধ্যে ৫০ জনকে রাখা হয়েছে ‘রিজার্ভ বেঞ্চে’। তবে আজ, বুধবার বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দূর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৩৮টি বুথে মহিলা কর্মীরাই ভোট পরিচালনা করবেন। জেলা প্রশাসনের দাবি, ভোটকর্মী হিসাবে যে সব মহিলাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউই বুথের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান নি। বরং পুরুষ কর্মীদের নাম কাটানোর জেরে ভোটকর্মী কমই পড়ে গিয়েছিল। তখন আরও মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হয়। এমনকী এ হেন নজিরও মিলেছে যে, কর্তা নিয়োগপত্র পেয়েও ভোটের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যহতি চেয়েছেন অথচ তাঁর স্ত্রী ছোট ছেলেকে বাড়িতে রেখে বুথ সামলাতে এগিয়ে এসেছেন।
বর্ধমানের একটি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষিকা শুক্লা ঘোষাল বলেন, “বাড়িতে দুই ছেলে-মেয়েকে রেখে এসেছি। ছোট ছেলে অর্কপ্রভ কেঁদেই চলেছে। মনটা খারাপ করছে।” কাটোয়া ডিডিসি গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা বিদিশা সেন সরকারকে ডিসিআরসি কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর স্বামী সুদীপ্ত। তিনি নিজেও পেশায় শিক্ষক। স্ত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার পর থেকেই তাঁর চিন্তা, বিদিশা রাতে বা ভোটের দিন দুপুরে কী খাবে? মহিলা ভোটকর্মীদের নিয়ে বাড়ির লোকেরা যে একটু বেশিই চিন্তায় তা স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা নিজেই। কালনা ডিসিআরসি কেন্দ্র থেকে স্বপ্না দত্ত কিংবা বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের অতসী রায়দের কথায়, “এত দিন ভোটকর্মীদের নিয়ে কত গল্প শুনেছি, এ বার আমরা এসে গল্প বলব।”
এ দিন সকাল থেকে লাইন দিয়ে ইভিএমের ব্যাগ নিয়েছেন তাঁরা। সমস্ত সরঞ্জাম ঠিকঠাক আছে কি না মিলিয়ে দেখেও নিয়েছেন। ‘চূড়ান্ত পরীক্ষা’ দিতে যাওয়ার আগে প্রশাসনের তরফ থেকে যে বই দেওয়া হয়েছে, রাত জেগে অনেকে সেটাও পড়ে ফেলেছেন। এক ভোটকর্মী বললেন, “রীতিমতো হোমওয়ার্ক করেই ভোট করতে চলেছি।” কিন্তু বুথে যদি গোলমাল হয় বা বড় ধরনের কোনও সমস্যা হয়, তাহলে? ভয় করবে না? “ভয় পাব কেন? দেখবেন আমরা বেশ ভাল ভাবেই ভোট করাব।” বলতে বলতেই ইভিএম হাতে বুথের দিকে হাঁটা লাগালেন মৌসুমী দাস নামে এক শিক্ষিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy