স্বামীর সঙ্গে সঙ্গীতা। নিজস্ব চিত্র
জামাইয়ের ফোন পেয়ে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা। এসে দেখেন শ্বশুরবাড়ির খাটে শোয়ানো মেয়ের মৃতদেহ। তবে পরিবারের লোকজন ‘উধাও’। এর পরেই খণ্ডঘোষের বাদুলিয়ায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও খুনের অভিযোগ করেন হাওড়ার সাঁকরাইলের হাটগাছা গ্রামের বাসিন্দা শিবনারায়ণ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, টানা মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারেই বুধবার রাতে মারা গিয়েছেন পেশায় নার্স সঙ্গীতা দত্ত (২৮)।
পুলিশ জানায় মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম ‘সুস্বাস্থ্য’ কেন্দ্রের ‘কমিউনিটি হেলথ অফিসার’ সঙ্গীতা গত দু’বছর ধরে এই জেলায় কর্মরত। ক্ষীরগ্রাম যাওয়ার আগে গলসির পুরসা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে খুন না আত্মহত্যা, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্টে বোঝা যাবে, দাবি পুলিশের।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সঙ্গীতাদেবীর ময়না-তদন্ত হয়। তাঁর পরিজনেরা জানান, বাদুলিয়ারক সৌরভ সামন্তের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয়েছিল সঙ্গীতার। প্রণয়ের সম্পর্ক থেকে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি বিয়ে হয় তাঁদের। এক বছরের এক সন্তানও রয়েছে ওই দম্পতির। শিবনারায়ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় জামাই ফোন করে বলে, ‘বাবা আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন, আপনার মেয়ে মারা গিয়েছে’। রাতেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আসি। এসে দেখি, মেয়ের দেহ খাটে শোয়ানো রয়েছে। বাড়ি ফাঁকা। এক বয়স্ক মহিলা নাতিকে আমাদের কাছে দিয়ে চলে যায়।’’ লিখিত অভিযোগেও তিনি জানিয়েছেন, সৌরভ ও তাঁর মা শক্তি সামন্ত অনেকদিন ধরেই সঙ্গীতার উপর নির্যাতন করত।
তাঁর দাবি, বিয়ের আগে ‘ক্যালকাটা নার্সিং ইনস্টিটিউট’ থেকে পাশ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন সঙ্গীতা। তবে কয়েক মাস পরে হাসপাতালে চাকরি পান। শিবনারায়ণবাবুর অভিযোগ, “শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে চাকরি করতে দিতে চাইত না। তা সত্ত্বেও জোর করে চাকরি করত। কিছু দিন আগে সল্টলেকে পদোন্নতির জন্য একটি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার পরে অত্যাচার ও নির্যাতন বাড়ে আরও।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার দৃঢ় ধারণা, মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।’’ মৃতার কাকা শম্ভুনাথ দত্ত বলেন, “আমরা যাওয়ার আগেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে, সঙ্গীতার মৃত্যুর পিছনে ওঁদের হাত রয়েছে। না হলে দুধের শিশুকে রেখে কেউ পালিয়ে যায়?”
ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গীতাদেবীর সহকর্মীরা মর্মাহত। তাঁরা জানিয়েছেন, নার্স ও মানুষ হিসেবে সঙ্গীতা খুব ভাল ছিলেন। তবে ক্ষীরগ্রাম সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার পর থেকে কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে থাকতেন। মঙ্গলকোটের বিএমওএইচ জুলফিকার আলি বলেন, “সহকর্মীদের কাছে ঘটনাটি শুনলাম। খুবই বেদনাদায়ক।’’
খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ জানিয়েছে, বধূ নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে অভিযুক্তেরা পলাতক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy