Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সিলেবাস শেষ হবে কবে, প্রশ্নে স্কুলের ‘গরমের’ ছুটি

চড়া রোদ-গরমে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধের কথা ভেবে এপ্রিলের গোড়াতেই স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও সেই নিয়মই চলছে। শিক্ষিক-শিক্ষিকারা এলেও পড়ুয়ারা না আসায় পঠনপাঠন বন্ধ।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও সুচন্দ্রা দে
কালনা ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০২:২৮
Share: Save:

চড়া রোদ-গরমে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধের কথা ভেবে এপ্রিলের গোড়াতেই স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও সেই নিয়মই চলছে। শিক্ষিক-শিক্ষিকারা এলেও পড়ুয়ারা না আসায় পঠনপাঠন বন্ধ। এ দিকে, মে মাসের শেষে আবার গরমের ছুটি পড়ে যাবে বলেও জানা গিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় দু’মাসের টানা ছুটিতে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম শেষ করা যাবে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। অনেক অভিভাবকদেরও দাবি, ক’দিনের বৃষ্টিতে একটু রেহাই মিলেছে। এ বার স্কুলের সময় বদলে বা কমিয়ে পঠনপাঠন চালিয়ে গেলেই ভাল।

জেলার একাধিক স্কুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, স্কুল খুললেই বেশির ভাগ শ্রেণির পরীক্ষা। মাধ্যমিকের মতো প্রথম বড় পরীক্ষার প্রস্তুতিও শিয়রে। ফলে এত দিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে বলেও দাবি একাধিক শিক্ষকের। কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের গণিতের শিক্ষক রঞ্জিত মাঝি যেমন বলেন, ‘‘পড়াশোনায় কিছুটা অসুবিধে তো হচ্ছেই। পরীক্ষাও সামনে।’’ ওই স্কুলেরই সহকারী প্রধান শিক্ষক দেবানন্দ গোস্বামী আবার বলেন, ‘‘গরমের ছুটি যদি পিছিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে একটা উপায় হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা সুষ্ঠু ভাবে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করব।’’

বর্ধমান ও কালনার স্কুলগুলির শিক্ষকেরাও একই কথা বলছেন। বর্ধমান শহরের সিএমএস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এপ্রিল থেকে ছুটি চলছে। আবার গ্রীষ্মের ছুটি পড়বে। সিলেবাস শেষ করা সত্যিই মুশকিল। পড়ুয়াদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, স্কুল খোলা নিয়ে এখনও কোনও নোটিস আসেনি। আবার পরীক্ষা বা অন্য কোনও কারণে যে সব স্কুল খুলছে তাদের তালিকা তৈরি করে সরকারি নির্দেশ না মানার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনারও বলেন, ‘‘১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত নবম ও দশম শ্রেণির প্রথম টার্মের পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। বুঝতে পারছি না পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না। আমাদের মতো পড়ুয়ারাও দোটানায়।’’ সিলেবাস শেষ করা যাবে না বলে মনে করছেন কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না।’’ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছে স্কুল খোলার দাবি জানিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। ওই স্কুলের আর এক শিক্ষকের আবার দাবি, কোনও স্কুল যদি খোলা থাকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নির্দেশ এসেছে। ফলে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। নাদনঘাটের এক শিক্ষকও জানিয়েছেন, গরমে প্রায় দু’মাস ছুটি চললে সিলেবাস শেষ করতে মুশকিল হবে।

এ দিকে, ক্লাস হচ্ছে না অথচ প্রতিদিন স্কুলে এসে হাজিরা দিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের একাংশও। তাঁদের ক্ষোভ, এক দিকে, প্রতিদিন এসে কয়েক ঘণ্টা খালি বসে থাকতে হচ্ছে। আবার ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশোনাও পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরু করার দাবিও তুলেছেন তাঁদের অনেকে। অনেকে আবার বলছেন, কলকাতার বেসরকারি স্কুলগুলোর মতো সকালে স্কুল হলে সমস্যা মিটবে। মাটিয়ারি রামপদ সেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজীবনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ও যেমন অনির্দিষ্টকালের ছুটি নিয়ে খানিক ক্ষুব্ধই। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশ তো গরমের দেশ। কম-বেশি গরম থাকেই। এ বার একটু বেশি। তবে তার জন্য অনির্দিষ্টকাল ছুটি চলায় পাঠ্যক্রম শেষ করতে না পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে।’’ পরীক্ষা নিতেও সমস্যা হবে বলেও তাঁর দাবি। একই কথা বলছেন ওকড়সা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্ত সরকারও। তিনি জানান, ওকড়সা স্কুলে ২৬ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছুটি চলায় তা নেওয়া যায়নি। জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। তাঁর অভিযোগ, ভোটের বছরে রাজনীতির জালে জড়ানো হচ্ছে পড়ুয়াদেরও। সকালে স্কুল চালানোর দাবি করেছেন তিনিও।

আর যাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা সেই পড়ুয়ারা কী বলছে? কাশীশ্বরী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নন্দিতা মাঝির কথায় ‘‘আর কবে স্কুল খুলবে? স্কুল খুললেই তো পরীক্ষা। কিছুটা চিন্তা তো আছেই।’’ রোদে-গরমে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে না হলেও তাদের লেখাপড়ার ভাবনা পিছু ছাড়ছে অভিভাবকদেরও। তাঁদের দাবি, এই ক’দিনে বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছে। এখন স্কুল খুলে গেলেই ভাল। মাধবীতলা এলাকার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তীর্থ দাসের মা রূপা দাসের কথায়, ‘‘স্কুল চালু থাকলে পড়াশুনারও নিয়মানুবর্তিতা বজায় থাকে।’’ কাটোয়ার কাছারি রোডের আর এক অভিভাবকও বলেন, ‘‘ইংরাজি মাধ্যম স্কুলগুলি তো দিব্যি খোলা রয়েছে। পড়াশোনাও চলছে। অসুবিধে শুধু সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের।’’

পরিস্থিতির কথা শুনে জেলা স্কুল পরিদর্শক খগেন্দ্রনাথ রায় শুধু বলেন, ‘‘আজ, শুক্রবার এ নিয়ে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানেই আলোচনা হবে।’’

(সহ প্রতিবেদন উদিত সিংহ)

অন্য বিষয়গুলি:

summer vacation School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy