Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
বেলাগাম গতিতে বাড়ছে দুর্ঘটনা

নজর এড়িয়ে রাতে ট্রাক, সহায় এজেন্ট

দিনের বেলা ধরা পড়লে গুণতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। তাই রাতের অন্ধকারে কালনার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি। সে সব গাড়ি পার করতে কাজে লাগানো হয় স্থানীয় ‘এজেন্ট’দের।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০০:৩০
Share: Save:

দিনের বেলা ধরা পড়লে গুণতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। তাই রাতের অন্ধকারে কালনার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি। সে সব গাড়ি পার করতে কাজে লাগানো হয় স্থানীয় ‘এজেন্ট’দের। তারাই রাস্তার হালচাল, পুলিশের নজরদারি এ সব বুঝে গাড়ি পার করিয়ে দেয়। এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।

শনিবার গভীর রাতে কালনার নিরলগাছি এলাকায় একটি অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক সজোরে ধাক্কা মারে সেতুতে। এরপরই সেতু ভেঙে ট্রাকটি পড়ে যায় ৪০ ফুট নীচের গুরজোয়ানি নদীতে। এই উদহারণ সামনে রেখে এলাকাবাসীর ব্যাখ্যা: রাতেও পুলিশ, প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি থাকলে এমনটা হত না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাকে অতিরিক্ত বালি, পাথর নিয়ে বেশি যাতায়াত হয় এসটিকেকে রোড, কালনা-বর্ধমান রোড, কুসুমগ্রাম-মেমারির মতো রাস্তাগুলিতে। আলু, পেঁয়াজের ট্রাকগুলিতেও অতিরিক্ত মাল বোঝাই করা থাকে। প্রশাসনের হিসেবে, একটি ছ’চাকার ট্রাকে ৯ টন মাল চাপানো যায়। অভিযোগ, সেখানে ২২ থেকে ২৫ টন পাথর, বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ধরনের গাড়িতে আলু, পেঁয়াজ চাপানো হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টন। একই ভাবে ১০ চাকার ট্রাকে যেখানে ১৬ টন মাল নিয়ে যাওয়া নিয়ম, সেখানে নেওয়া হয় ৩৮ থেকে ৪২ টন পাথর, বালি। এই ধরনের বেআইনি কারবারের জেরে ক্ষতি হচ্ছে রাস্তার।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, তারা হাত গুটিয়ে নেই। এক কর্তার কথায়, ‘‘অভিযানে ক়ড়াকড়ির ফলে পরিবহণ দফতর জানুয়ারি মাসে কালনা থেকে জরিমানা বাবদ ১১ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। যা রেকর্ড।’’

স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, পরিবহণ দফতর একটু কড়া হলেই কৌশল পাল্টায় কারবারিরা। রাতে অভিযান কম হওয়ায় তারা অতিরিক্ত মাল বোঝাই গাড়ি পার করতে এই সময়কেই বেছে নেয়। যার হাতেনাতে উদাহরণ শনিবার রাতের ঘটনা। প্রশাসনও মানছে, উল্টে যাওয়া ট্রাকটি ওভারলোডেড ছিল।

একই সঙ্গে বেআইনি কারবারিদের ‘নেটওয়ার্ক’ও চিন্তায় রাখছে প্রশাসনকে। কেমন?

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন রাস্তায় চেকিং রয়েছে, অভিযানে কড়াকড়ি কতটা সে সব আগেভাগে জানতে ‘এজেন্ট’ রাখা হয়। তারাই জানিয়ে দেয় রাস্তার হালচাল। নিখুঁত সেই খবরে সহজে হাসিল হয় কাজ। প্রয়োজনে চেকিংয়ের কিছু আগে কিছু সময় ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। নজরদার গাড়ি অন্য রাস্তা নিতেই পার হয়ে যায় ওভারলোডেড গাড়ি। যেন লুকোচুরি খেলা! বিনিময়ে এজেন্টরা গাড়িপিছু অর্থ পায় বলেও জানা গিয়েছে। কোথাও আবার গাড়ির সঙ্গে মাসিক চুক্তি থাকে।

ধাত্রীগ্রাম এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘যে সেতুটিতে শনিবার রাতে দুর্ঘটনা হয় তার কিছু দূরেই সন্ধ্যা নামার পর বেশ কিছু অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। এজেন্টদের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই গাড়িগুলি রাতের অন্ধকারে এক থানা থেকে অন্য এলাকায় বেরিয়ে যায়।’’

অনেকেরই অভিযোগ, রাতে পুলিশের টহলদারি ভ্যান থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাড়িগুলিকে পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। এই অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ।

তবে মহকুমার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াতের কথা অস্বীকার করেনি মহকুমা প্রশাসন। কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া সোমবার জানান বিষয়টি নিয়ে মহকুমা প্রশাসন বসে নেই। লাগাতার অভিযান চলছে। তার পরেও বেশ কিছু গাড়ি অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে। এ ব্যাপারে একটি তালিকাও তৈরি হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতের অভিযান আরও জোরদার করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Transport Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy