তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে। নিজস্ব চিত্র
সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা, দু’ঘণ্টায় শুধুমাত্র বর্ধমান ১ ব্লকে ১১টি দলীয় কার্যালয় বিজেপি দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। শুক্রবার দুপুরে দলের ব্লক সভাপতি কাকলি গুপ্তর দাবি, “প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। গোটা ২০টি মোটরবাইকে ৪০ জন যুবক গোটা ব্লক জুড়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করছে। আমরাও প্রতিরোধ করতে পারি। কিন্তু প্রশাসনের উপর ভরসা রেখেছি।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড়, রায়না, আউশগ্রাম, কালনা থেকেও ভাঙচুর, মারধর, দখলের বহু অভিযোগ এসেছে। তৃণমূলের দাবি, রাতারাতি দল ‘পাল্টানো’ কর্মী-সমর্থকেরাই বিজেপির হাত ধরে হামলা চালাচ্ছে। বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী বলেন, “দলের নিয়মশৃঙ্খলা না মেনে চললে তাঁকে ব্যাক্তিগত ভাবে দায় নিতে হবে। আমরা মানুষের সঙ্গে রয়েছি। কেউ যদি ভাবে ভোট দিয়েই নেতা হয়ে গিয়েছেন, সেটা ভুল ভাবছেন। কারা এই অভব্যতা করছে, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ জেলা পুলিশের দাবি, খবর পাওয়া মাত্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আধাসেনা টহল দিয়েছে বেশ কিছু জায়গায়।
বৃহস্পতিবার গণনা শেষে বিজেপির মোটরবাইক বাহিনী বর্ধমান ১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে হুঁশিয়ারি দেয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার তা মাত্রা ছাড়ায়। অভিযোগ, সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ দেওয়ানদিঘিতে কাটোয়া রোডের উপর তৃণমূলের অস্থায়ী ব্লক কার্যালয় ও দলের শ্রমিক সংগঠনের দফতরে ঢোকে বিজেপি কর্মীরা। সবাইকে বার করে দিয়ে পতাকা, ফ্লেক্স ছিঁড়ে বিজেপির পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই দলটিই মির্জাপুরে তৃণমূল শ্রমিক নেতা পতিতপাবন তা ও তাঁর ভাইপো বাপ্পা তায়ের বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জানলার কাঁচ ভাঙা। গোটা বাড়ি জুড়ে ছোট-বড় ইটের টুকরো পড়ে। বাড়ির কর্ত্রী অন্নপূর্ণা তায়ের দাবি, “১০ মিনিট অন্তর দু’ দফায় হামলা চলেছে। বিজেপির লোকেরা পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছিল। গেট না লাগালে বড় বিপদে পড়তাম।’’ তাঁর ছেলে প্রীতমের অভিযোগ, “ওই বাহিনীতে প্রচুর নাবালকও রয়েছে।’’ এর পরে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, সরাইটিকর অঞ্চলের সভাপতি গৌতম হাজরার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরে গৌতমবাবু ও তাঁর স্ত্রী ডালিয়াদেবীকে আটকে রেখে বাড়িতে ঢুকেও আসবাব, মোবাইল, টিভি তছনছ করা হয় বলে তাঁদের দাবি। গৌতমবাবু বলেন, “৫০ জনের মতো এসেছিল। বহিরাগতই বেশি। প্রত্যেকের হাতেই লাঠি-রড থেকে অস্ত্রশস্ত্র ছিল।’’
বর্ধমানের আউশগ্রামে তৃণমূল পার্টি অফিসে ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের ব্লক সভাপতির অভিযোগ, “গোটা ব্লক জুড়েই হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি। কাউকে রাস্তায় মারধর করা হচ্ছে, কারও বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হচ্ছে। মহিলাদেরও নিস্তার দেওয়া হচ্ছে না। দেওয়ানদিঘি, আলমপুর, জগদাবাদ, ভিটা, পিলকুড়ি, কপিবাগান, বিজয়রাম, সেহরাবাজার-সহ ১১টি জায়গার দলীয় কার্যালয়ের কোথাও বিজেপির পতাকা তোলা হয়েছে, কোথাও চাবি কেড়ে নিয়েছে।’’ বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, রথতলা, কুরমুন এলাকায় তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে।
কালনাতেও দু’পক্ষের গোলমালে হাসপাতালে ভর্তি পাঁচ জন। বড়ধামাস পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মুনমুন বাগের অভিযোগ, রান্না করার সময় এলাকার রাজু বাগের নেতৃত্বে মিতা সাঁতরা, রাকেশ সাঁতরা, বিশ্বজিৎ বাগ, স্বপন বাগ, কমল রায়, গৌড় মালিক-সহ কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধর করে। শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয়। বাড়ির লোক প্রতিবাদ করায় তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ব্লকের ময়নাগড় মল্লিক পাড়ার সাধনা দাস নামে এক মহিলার উপরেও হামলা হয় বলে অভিযোগ। রাকেশের মা মিতা দাসের পাল্টা অভিযোগ, পঞ্চায়েতের লোকেরাই তাঁর ছেলেকে মারধর করেছে। কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের অভিযোগ, ‘‘দুটি ক্ষেত্রেই বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে।’’ বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডের দাবি, তৃণমূলই ফল বেরনোরে পরে নানা জায়গায় হিংসা ছড়াচ্ছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘কালনা ১ ব্লকে কাঁকুরিয়া ও দেবপুর পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা আমাদের কর্মীদের পাঁচটি বাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার রাতে আউশগ্রামের দিগনগর গ্রামের রথতলায়, এড়াল পঞ্চায়েত এলাকার সাঁইপাড়ায় তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকাল থেকেও উত্তেজনা ছড়ায় দিগনগর, এড়াল, তেলোতা, সামন্তপাড়া, ভাল্কী, রঘুনাথপুর, নওয়াদা-সহ বিভিন্ন গ্রামে। তৃণমূলের আউশগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি শেখ সালেক রহমানের অভিযোগ, “ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই হুমকি, বোমাবাজি শুরু হয়েছে।’’ বিকেলে গুসকরা ২ পঞ্চায়েত প্রধান সুবীর মণ্ডলের বাড়ি এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। যদিও বিজেপির তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। আউশগ্রামের বিজেপি নেতা স্মৃতিকান্ত মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি হচ্ছে। আর তার দায় চাপানো হচ্ছে বিজেপির উপর।’’ তেলোতা গ্রামে দলীয় কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা নালি করেছে বিজেপিও। দুই মহিলার কর্মী জখম হন। যদিও তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। পুলিশ জানিয়েছে, দিগনগর থেকে কয়েকটি তাজা বোমা মিলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় টহল চলছে।
মন্তেশ্বরের মালডাঙায় ছবিটা একটু ভিন্ন। ওখানকার আইএনটিটিইউসি-র কার্যালয়ে তালা দিয়ে নিজেদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিকেলে বিজেপির মন্তেশ্বর মণ্ডলের সভাপতি রাজেশ রায় ও তফসিলি মোর্চার দুই নেতা সঞ্জীব হাজরা ও ঝুলন হাজরা গিয়ে কর্মীদের বুঝিয়ে তালা খোলান। রাজেশবাবু বলেন, ‘‘গোলমাল, অশান্তি বিজেপির সংস্কৃতি নয়। জোর করে কারও পার্টি অফিস দখল করা উচিত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy