Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ, তদন্তে সিবিআই

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, জমি বন্ধক রেখে তৈরি হয়েছিল চালকল। সেই চালকল সংস্থা বন্ধক জমি ‘উপহার’ দেয় এক আধিকারিককে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

অনাদায়ী ঋণ আদায় করতে নেমে ব্যাঙ্কের কর্তারা দেখেন, একই জমি দু’বার বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রতারণা হয়েছে চার কোটিরও বেশি টাকার। বর্ধমানে এমন প্রতারণার তদন্তের জন্য সিবিআইকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। যদিও প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কালনার লিচুতলার অভিযুক্ত সংস্থার আধিকারিকেরা।

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, জমি বন্ধক রেখে তৈরি হয়েছিল চালকল। সেই চালকল সংস্থা বন্ধক জমি ‘উপহার’ দেয় এক আধিকারিককে। দু’বছর পরে ওই জমি বন্ধক রেখেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি কার হয় ধান-পাটের গুদাম। অনাদায়ী ঋণ আদায়ে গিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বোঝেন, একই জমি দু’বার বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কের পাঁচ আধিকারিক, তিন কর্মী ও ব্যাঙ্কের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী জড়িত বলে সন্দেহ। ৭ ফেব্রুয়ারি গোটা ঘটনা সিবিআইয়ের আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় জানিয়ে ঋণগ্রহীতা সংস্থার পাঁচ জন আধিকারিক এবং ব্যাঙ্কের কর্তা, কর্মী ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য চিঠি দেন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অধিকর্তা (বর্ধমান ১) পুরুষোত্তম বেহেরা। সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা তার পরে ওই অভিযুক্ত সংস্থার কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কালনার কৃষি ব্যাঙ্কে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেয় একটি চালকল। ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি টাকা। সেই বছরেরই সেপ্টেম্বরে চালকলের কর্তা গোবিন্দ হালদার বন্ধক রাখা জমিটি ‘উপহার’ দেন ছেলে প্রসেনজিৎ হালদারকে। প্রসেনজিৎবাবু একটি কৃষিপণ্য বিপণন সংস্থা খোলেন। সেটির কর্তা হিসেবে তিনি ও তাঁর বাবা ছাড়াও ছিলেন পরিবারের আরও তিন জন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই জমি দেখিয়ে তিনি ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। বেশ কিছু দিন ঋণের কিস্তিও শোধ করা হয়। তার পরেই সংস্থাটি তা বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ।

এর মধ্যে ওই দু’টি সংস্থার ঋণ স্থানান্তর হয়ে আসে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বর্ধমানের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প শাখায়। ব্যাঙ্ককর্তাদের অভিযোগ, বারবার ঋণ শোধের জন্য চিঠি দিলেও সংস্থা তা গ্রহণ করেনি। তখন ঋণ আদায়ের জন্য কলকাতার ‘স্ট্রেস অ্যাসেট রিকভারি’ ব্রাঞ্চকে বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্যে ওই ঋণ দেওয়ায় ব্যাঙ্কের রিপোর্টে চিফ ম্যানেজার (‌ট্রেনিং), ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, ডেপুটি ম্যানেজার ও তিন জন ডেস্ক অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার পরেই সিবিআইকে বিষয়টি জানানো হয়।

ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, “গোবিন্দবাবু, প্রসেনজিৎবাবুদের নামে তিনটি সংস্থা রয়েছে। তাঁদের কাছে ব্যাঙ্কের ৪৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তার মধ্যে প্রতারণার জন্য কৃষিপণ্য সংস্থার আগে চালকলের বিরুদ্ধেও সিবিআইকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ২ কোটি টাকার বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটলেই সিবিআইকে জানানো নিয়ম।”

প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করে গোবিন্দবাবু দাবি করেন, “চারটি কিস্তিতে ঋণ শোধ করা হবে বলে ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। একটি কিস্তি শোধও করা হয়েছে। তার পরেও সিবিআইকে কেন বাড়িতে পাঠানো হল, জানি না!” অভিযোগকারী পুরুষোত্তমবাবু অবশ্য বলেন, “ঋণ শোধের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। নিয়ম মেনেই সিবিআইকে প্রতারণার ঘটনা জানিয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

bank defaulter Bank Investigation CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy