দোকানে শোভা গুপ্তা। —নিজস্ব চিত্র।
এ এক অন্য দুর্গার কাহিনি। বছর আষ্টেক আগে পুজোর মুখে হারিয়েছিলেন ছেলেকে। এখন প্রতি বার দুর্গাপুজো এলে খোঁচা লাগে সেই ক্ষতে। সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা জীর্ণ শরীর নিয়েই লড়াই চালাচ্ছেন শোক, দারিদ্রের বিরুদ্ধে। সংসারের হাল ধরতে শুরু করেছেন স্টেশনে বসে ঘুঘনি-রুটি বিক্রি।
বর্ধমান স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি সিঁড়ির নিচে ছোট্ট দোকান। সকলে চেনে ‘ঠাকুমার দোকান’ হিসাবে। ঠাকুমা মানে শোভা গুপ্ত। বয়স ৬৮। থাকেন বর্ধমানের লোকো কলোনিতে। তাঁর দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। তিনিই শোনালেন তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি। জানালেন, ২০১৩ সাল নাগাদ মহালয়ার দু’দিন আগে তাঁর বড় ছেলে সঞ্জীবের মৃত্যু হয়। স্টেশনে দোকান চালাতেন শোভার বড় ছেলে। শোভা বলছেন, ‘‘মহালয়ার দু’দিন আগে স্টেশনের এই দোকানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার ছেলে মারা যায়। ও প্রতিবন্ধী ছিল। ওর জন্ম হয়েছিল বৃহস্পতিবার। আর মৃত্যু শুক্রবারে। এখন ছোট ছেলে, বউমা এবং নাতনিকে নিয়ে সংসার। সংসার চালাতে সেই দোকান আমি চালাতে শুরু করেছি।’’
শোভার স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। বাড়ি ভাড়া দিয়ে ,সন্তানদের মানুষ করা তাঁর কাছে ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি বদলাতে বর্ধমান স্টোশনে দোকান দিয়েছিলেন শোভার বড় ছেলে। বড় ছেলের মৃত্যুর পর সেই দোকান এখন সামলান শোভা নিজেই। দোকানে রুটি, ঘুগনি, চপ, মুড়ি, কচুরি— এমন নানা খাবার বিক্রি করেন। দামেও সস্তা। জীবনযুদ্ধে একটু একটু করে শোভা যখন সব চ্যালেঞ্জ একটু একটু করে জিততে শুরু করেছেন ঠিক তখনই ধাক্কা দেয় সন্তানের মৃত্যু। ধাক্কা দিয়েছে করোনা অতিমারিও। বছর দু’য়েক বন্ধ ছিল তাঁর দোকান। দারিদ্র্র, শোক— সব ‘অসুর’-এর বিরুদ্ধে অশক্ত শরীর নিয়েই শক্ত হাতে লড়াই চালাচ্ছেন শোভা। তিনি চান, কেউ পাশে দাঁড়ালে ভাল হয়। বলছেন, ‘‘ছোট ছেলেটার একটা কাজ হলে ভাল হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy