Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

Babul Supriyo: অভিমান থেকেই সিদ্ধান্ত, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে ফেসবুকে অলবিদা ঘোষণা বাবুলের

এর পর বাবুল কী করবেন? তা তিনি নিজে ছাড়া কেউই জানেন না। তবে তিনি সর্বপ্রথমে সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তা-ও তিনি ঠিক করে ফেলেছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৬
Share: Save:

রাজনীতি ছাড়া নিয়ে যে ফেসবুক পোস্ট শনিবারের বারবেলায় করেছেন বাবুল সুপ্রিয়, তা অভিমান প্রসূত। নিজের ঘনিষ্ঠমহলে তেমনই জানিয়েছেন এই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। হিতৈষীদের এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মতান্তর এবং মনান্তরও তাঁর ওই সিদ্ধান্তের কারণ হয়ে থাকতে পারে। বস্তুত, বাবুল তাঁর ফেসবুক পোস্টটি করেছেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে। তাঁর গাড়িতে বসে। তাঁর পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বাবুলের বাবা এবং স্ত্রী তাঁকে বারবার ফোন করেছেন। কিন্তু বাবুল তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় বলেই তাঁরা জানাচ্ছেন।

এর পর বাবুল কী করবেন? তা তিনি নিজে ছাড়া কেউই জানেন না। তবে তিনি সর্বপ্রথমে সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তা-ও তিনি ঠিক করে ফেলেছেন। বাবুলের এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বললেও বাবুল ওর সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, এর আগেও বিজেপি-র প্রথমসারির নেতারা ওকে রাজনীতি ছাড়তে বারণ করেছেন। কিন্তু ও ওর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল।’’ তাঁর ওই ঘনিষ্ঠ আরও বলেছেন, ‘‘এই বাবুল সেই ১৯৯২ সালের বাবুল। যে মুম্বইয়ে গিয়ে লড়াই করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে গিয়ে বসেছিল। তখন অনেকে ওকে বারণ করেছিল। কিন্তু ও কারও কথা শোনেনি। এ বারেও ও কারও কথা শুনবে বলে মনে হয় না। এমনকি, যাতে বাবুলের ফেসবুক পোস্টের কোনও প্রভাব ওর বাবা এবং স্ত্রী-র উপর না পড়ে, তার জন্যই ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসে বিষয়টা লিখেছে।’’

গত বেশ কিছুদিন ধরেই বাবুল রাজনীতি ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। কথা বলছিলেন পরিবার, পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। বাবুলের ঘনিষ্ঠ সেই বৃত্তের দাবি, রাজ্যনেতৃত্বের একাংশের উপর অভিমান এবং ক্ষোভ থেকেই বাবুল ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দিলীপ-শিবিরের সম্পর্ক কোনওদিনই ভাল ছিল না। আবেগপ্রবণ বাবুল মনে করেছেন, বারবার তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে দিলীপ-শিবিরের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। ‘অন্যায্য’ ভাবে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। বাবুলের এক বন্ধুর কথায়, ‘‘কেন ও এ ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে কাউকে কৈফিয়ত দিতে যাবে! ও নিজেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। টাকাপয়সার জন্য রাজনীতি করেনি। এখনও ও মাসে একটা গান গাইলে বা কেউ ওকে মাসে একটা শো দিলে ওর জীবন চলে যাবে। কিন্তু এ ভাবে নিজের দলের কারও কারও কাছ থেকে কেন অযথা আক্রান্ত হতে হবে!’’

বিধানসভা ভোটে পরাজয় এবং পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ে বাবুল এমনিতেই ক্ষুন্ন ছিলেন। তখন থেকেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। বস্তুত, নিভৃতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি দিল্লি ছেড়ে মুম্বই চলে যান। মুম্বইয়ে নামার আগে মোবাইল থেকে ‘ডিলিট’ করে দেন ফেসবুক এবং টুইটারের দু’টি অ্যাপও। ঘনিষ্ঠমহলে বলেন, রাজনীতি থেকে কয়েকদিন ছুটি নিয়েছেন। মুম্বই থেকে বাবুল দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন। সংসদের বাদল অধিবেশনেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। এর পর তিনি আবার ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করেন। গত কয়েকদিনে তাঁর সে সব পোস্ট নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ফেসবুকে দীর্ঘ স্টেটাস লিখেই রাজনীতির ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন বাবুল।

তাঁর রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল মাঝ আকাশে, বিমানে বাবা রামদেবের পাশের আসনে বসে। নাটকীয় সেই উত্থান তাঁকে গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে নিয়ে গিয়েছিল জাতীয় রাজনীতির আঙিনায়। লোকসভা ভোটে আসানসোল থেকে জয় এবং তার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। পর পর দু’টি লোকসভা ভোটে জেতেন বাবুল। কেন্দ্রে মন্ত্রীও হন দু’দফায়। কিন্তু বাংলায় বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই বাবুলের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্ঘাত শুরু হয়েছিল। তার পরিণতিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বাবুলের ঘনিষ্ঠেরা। যাঁদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রাজনীতিকে ‘অলবিদা’ জানিয়েছেন বাবুল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy