ফাইল চিত্র।
শাসক দল তৃণমূল এত দিন যা বলছিল, সেই সুরেই এ বার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ‘বিজেপির লোক’ বলে চিহ্নিত করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বামফ্রন্টেরও অভিযোগ, বর্তমান রাজ্যপাল সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করছেন। বাম শরিক সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মপরিষদ আরও এক ধাপ এগিয়ে বাংলার রাজ্যপালকে অপসারণের (কল ব্যাক) দাবি তুলেছে।
বস্তুত, রাজ্যপালের এমন ভূমিকা নিয়ে ‘উষ্মামূলক’ চিঠি কেন্দ্রের কাছে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে রাজ্যের তরফে। এই রাজ্যপালের সঙ্গে যে কাজ করা যায় না, সেই কথা বারবারই বলা হয়েছে শাসক দলের তরফে। রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার ভাবনাও রয়েছে শাসক শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে বামেদের অবস্থান রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে আরও জোরালো করছে। এরই মধ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের টুইটে কটাক্ষ, ‘‘আঙ্কল্জি দিল্লি গিয়েছেন। রাজ্যপাল সাহেব একটা উপকার করুন। দয়া করে আর ফিরবেন না!’’
সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মপরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে যে নৈতিক ও সরকারি ‘প্রোটকল’ মেনে রাজ্যপালের চলার কথা, ধনখড়ের আচরণে তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাংলায় নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময়ে এবং নির্বাচনের পরেও তাঁর ভূমিকা একই রয়েছে। তিনি ‘বিজেপির হয়ে কাজ’ করছেন। এমন রাজ্যপালকে পদে রেখে দিলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক আরও ‘বিষিয়ে যাবে’ বলে মনে করে সিপিআই। তাই তাদের দাবি, রাষ্ট্রপতির দাবি রাজ্যপালকে ফিরিয়ে নেওয়া।
আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবারই বামফ্রন্টের বৈঠকে সিপিআইয়ের রাজ্যপাল সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তার পরে বুধবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল যে ভাবে চলছেন, তা ঠিক নয়। রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করে কাজ করছেন। রাজ্যপাল তো বিজেপি-র কেউ নন। কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে দিচ্ছে, তিনি বিজেপির লোক! এটা রাজ্যপালের ভূমিকা হতে পারে না।’’ রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফরের প্রসঙ্গ তুলে বিমানবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তিনি নিজে কোথাও যেতেই পারেন। কিন্তু রাজ্যপাল বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে যাবেন কেন?’’ সম্প্রতি বিজেপির ৫০ জন বিধায়কের সঙ্গে রাজভবনের বারান্দায় বসে রাজ্যপাল যে ভাবে বৈঠক করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। বামফ্রন্ট ও তার বাইরের বাম দল মিলে ১৬ দলের আলোচনায় রাজ্যপালের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কর্মসূচি ঠিক হবে বলে বিমানবাবু জানান।
তাঁর ভূমিকা নিয়ে যখন সমালোচনার ঝড়, রাজ্যপাল ধনখড় তখন দিল্লিতে নানা দরবারে ঘুরছেন। কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর সঙ্গে এ দিন দেখা করেন তিনি। একটি সূত্রের মতে, রাজ্যের কয়লা কেলেঙ্কারি, সেই দুর্নীতির সঙ্গে বিনয় মিশ্রের যোগাযোগ ও তাঁর আত্মগোপন করে থাকার মতো বিষয়গুলি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। জোশীর পরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রহ্লাদ পটেলর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। তিনি টুইট করে জানান, কলকাতা মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, এশিয়াটিক সোসাইটির মতো সংস্থাগুলির বিষয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর পরে বিকালে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ মিশ্রের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল। দু’জনের মধ্যে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তবে সূত্রের মতে, রাজ্যের ভোট-পরবর্তী হিংসার বিষয়ই আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ দিন বৈঠক হয়নি রাজ্যপালের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy