ইয়াসিন পাঠানের সঙ্গে বাড়ি ফিরছেন মানসিক ভারসাম্যহীন সঞ্জয় মালাকার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ন’বছর ধরে নিখোঁজ এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি বাড়ি ফিরলেন ইয়াসিন পাঠানের হাত ধরে।
পাথরার প্রাচীন মন্দির সংরক্ষণের জন্য পরিচিত ব্যক্তিত্ব ইয়াসিন পাঠানই সোমবার সকালে সঞ্জয় মালাকার নামে বছর চুয়াল্লিশের এই ব্যক্তিকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের লক্ষ্মণপুরের মালাকার পরিবারের সন্তান সঞ্জয়বাবু বহরমপুর থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয়বাবুকে সেখানে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মেজো জামাইবাবু দ্বীপনারায়ণ মালাকার। একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়ার পরে সঞ্জয়বাবুকে সেখানেই বসিয়ে রেখে একটু উঠেছিলেন তিনি। কয়েক মিনিট বাদে ফিরে এসে আর সঞ্জয়বাবুর খোঁজ পাননি। সেই থেকে সঞ্জয়বাবু নিখোঁজ। হন্যে হয়ে ঘুরেও খোঁজ মেলেনি। তাই তাঁর ফেরার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা।
মাস দু’য়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতয়ালি থানার হাতিহলকায় দেখা যায় ছেঁড়া পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে। বেশিরভাগ সময় তিনি রাস্তাতেই থাকতেন। এলাকার লোকেদের থেকেই জুটে যেত খাবার। গ্রামের মানুষ কিছু জানতে চাইলেই বিড়বিড় করতেন। সোমবার সকালে তাঁকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ইয়াসিন পাঠানই তাঁর চুল-দাড়ি কাটানোর ব্যবস্থা করেন। স্নান করান। পোশাক পরান। খেতে দেন। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যান। তারপরে সঞ্জয়বাবু নিজের নাম ও বাড়ির গ্রামের নাম জানান। এরপরই ইয়াসিন পাঠান ফোন করেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তকে। সব শুনে অমিতাভবাবু তাঁকে পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ইয়াসিন পাঠানের কথায়, “এক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে যে কতটা ভাল লাগছে, বলে বোঝাতে পারব না।” অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষাকর্মী ইয়াসিন পাঠান জানান, তাঁর কাছে জেলা পরিষদের একটি ডায়েরি ছিল। সেই ডায়েরি থেকেই ফোন নম্বর পেয়ে মালদহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে হরিশচন্দ্রপুর থানার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। হরিশচন্দ্রপুর থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়, লক্ষ্মণপুরে সঞ্জয় নামে একজন নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু দু’জনে যে একই ব্যক্তি তা বোঝা যাবে কী করে? হরিশচন্দ্রপুর থানার সাহায্যে লক্ষ্মণপুরের বাসিন্দা আতাউর রহমান নামে একজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় ইয়াসিন পাঠানের। ই-মেলে সঞ্জয়বাবুর ছবি আতাউরকে পাঠান তিনি। ছবি দেখেই সঞ্জয়বাবুকে চিনে ফেলেন আতাউর। তিনিই খবর দেন সঞ্জয়বাবুর বাড়িতে।
সোমবার রাতে মালদহ থেকে ট্রেনে হাওড়া রওনা দেন আতাউর-সহ লক্ষ্মণপুরের তিন বাসিন্দা। সকালে হাওড়ায় পৌঁছন। সেখান থেকে মেদিনীপুর হয়ে হাতিহলকা। সঞ্জয়বাবুকে নিয়ে হাতিহলকা ছাড়ার সময় আতউর বলছিলেন, “সঞ্জয়বাবুর মা-ই সব থেকে বেশি খুশি হবেন।”
কিন্তু মালদহ থেকে সঞ্জয়বাবু কী ভাবে হাতিহলকায় এলেন? প্রশ্নের উত্তরে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন সঞ্জয়।
সঞ্জয়বাবুরা পাঁচ ভাই-বোন। বোনেদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা মারা গিয়েছেন। মায়েরও বয়স হয়েছে। সঞ্জয়বাবু অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় আর পড়া হয়নি। তারপর থেকে বহরমপুরে তাঁর চিকিৎসা চলত। সঞ্জয়বাবুর ভাই রঞ্জন মালাকার বলেন, “দাদাকে আর কোনওদিন ফিরে পাব ভাবতে পারিনি।” তাঁর ছেলে অসুস্থ বলে দাদাকে নিয়ে যেতে তিনি আসতে পারেননি। আতাউর জানান, অনেক খোঁজ হয়েছে সঞ্জয়বাবুর। বছর খানেক আগে তাঁরা একবার জানতে পেরেছিলেন সঞ্জয়বাবু দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে রয়েছেন। সেখানে গিয়েও কিন্তু সঞ্জয়বাবুর খোঁজ পাননি।
এ বার সন্ধান সফল হল ইয়াসিন পাঠানের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy