প্রিয়-সুব্রত-সৌমেনের ‘লাস্ট অব দ্য মোহিকানস’ সুব্রত মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
সত্তরের দশকের ছাত্র যুব রাজনীতির যে তিনটি নাম সবার মুখে মুখে ফিরত, সেই প্রিয়-সুব্রত-সৌমেনের ‘লাস্ট অব দ্য মোহিকানস’ সুব্রত মুখোপাধ্যায় আজ চলে গেলেন। অফুরন্ত জীবনীশক্তির এই মানুষটি যে আচমকাই চলে যাবেন, আমার মতো অনেকেই তা কল্পনা করতে পারেননি। ৪০ বছরেরও বেশি সুব্রত’দার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আমার। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘প্রিয়-সুব্রত’— এই শব্দবন্ধটা ছাত্র-যুবদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। আমাদের মতো ছাত্র রাজনীতির কর্মীদের সে সময় যে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দূরের অতিমানব বলে মনে হত, তাঁকে আচমকাই কাছ থেকে পাওয়ার সুযোগ হয়ে গেল। সালটা ১৯৭৮।
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তখন আড়াআড়ি ভাবে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। ইন্দিরা গাঁধী তৈরি করলেন ইন্দিরা কংগ্রেস। ১৯৭৮ সালের সে রকম এক সময়ে রাজ্যের তাবড় কংগ্রেস নেতারা যখন ইন্দিরা-বিরোধিতায় নাম লেখালেন, তখন যে ক’জন নেতা ইন্দিরার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের এক জন হলেন সুব্রত’দা। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি এই নতুন দলের সংগঠন তৈরি করার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। ইন্দিরার আকর্ষণে এবং অবশ্যই সুব্রত’দার মতো মানুষের কাছাকাছি থাকার প্রবল ইচ্ছায় আমাদের মতো দূরে থাকা কর্মীরা ইন্দিরা কংগ্রেসে যোগদান করেছিলাম। সে সময় থেকেই শুরু হয়েছিল সুব্রত’দার রোজনামচায় আমার উপস্থিতি।
আশির দশকের গোড়া থেকে আমার দিনটা শুরু হত অনেকটা এ ভাবে— সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুব্রত’দার বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া। দুপুরে কিছু ক্ষণের জন্য বাড়ি ফিরে ফের তাঁর সঙ্গী হওয়া। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ইন্দিরা কংগ্রেসের নানা কাজে সুব্রত’দার সঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়ানো তখন আমার দৈনন্দিন কাজ। আমাদের বর্তমান নেত্রী তথা আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সে সময় সুব্রত’দার ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
চিরকালই ছাত্র-যুবদের পছন্দ করতেন সুব্রত’দা। পরবর্তী কালে সেই যুব ছাত্ররাই মমতা’দির সঙ্গে আজকের বাংলার রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
সাংগঠনিক সুব্রত’দাকে প্রায় ৪০ বছর ধরে দেখেছি। প্রশাসনিক সুব্রত’দাকে দেখার সুযোগ এসেছিল ২০০০ সালে। তখন আমি রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। সুব্রত’দা কলকাতার মহানাগরিক। দলের পাশাপাশি সুব্রত’দাও আমাকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর আপ্তসহায়ক হিসাবে। টানা তিন বছর কাছ থেকে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সুব্রত’দার কাজের ধরন, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা— সবই প্রমাণ করেছিল কতটা বিচক্ষণ প্রশাসক ছিলেন তিনি। এ কথা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না, সাম্প্রতিক কালের শ্রেষ্ঠ মহানাগরিক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বহু সিদ্ধান্ত অবলীলায় নিতে দেখেছি তাঁকে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কখনই খুব একটা দোটানায় ভুগতেন না। দ্রুততার সঙ্গে কাজ করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ সব কারণেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পাঁচ বছরের কার্যকালে বহু গৌরবের সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা মহানগরী। পরবর্তী কালে গত ১০ বছর রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসাবেও তিনি আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা’দির পাশে দাঁড়িয়েছেন অবিচল ভাবে।
ব্যক্তিগত জীবনে আমার অভিভাবকসম ছিলেন সুব্রত’দা। তাই তাঁর মৃত্যু আমাকে বেশি ভারাক্রান্ত করেছে। তাঁর প্রয়াণে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হল!
(লেখক মেয়র সুব্রত মুখাপাধ্যায়ের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক। অধুনা রাজ্য সমবায় আবাসন ফেডারেশনের সভাপতি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy