Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সাফল্য ছুঁল বনগাঁর বীরাঙ্গনা

বুধবার ইন্টারনেটে ফলাফল দেখে দাদা ইমরান মণ্ডল যখন জানাল, প্রথম বিভাগে দু’টি বিষয়ে লেটার নিয়ে পাস করেছে বোন, তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে বনগাঁর গোপালনগর থানার উত্তর ব্যাসপুরের সুহিনা খাতুন।

সাহসী সুহিনা

সাহসী সুহিনা

সীমান্ত মৈত্র ও সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

পড়াশোনাই করবে— এই জেদ ধরে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল কিশোরী। বুধবার ইন্টারনেটে ফলাফল দেখে দাদা ইমরান মণ্ডল যখন জানাল, প্রথম বিভাগে দু’টি বিষয়ে লেটার নিয়ে পাস করেছে বোন, তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে বনগাঁর গোপালনগর থানার উত্তর ব্যাসপুরের সুহিনা খাতুন।

সালটা ২০১৬। ব্যাসপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা আব্দুল জাবের আলি মণ্ডল। স্ত্রী, তিন মেয়ে এবং দুই ছেলের সংসারে সুহিনা ছোট। বড় মেয়ে তানজিরা এবং মেজো মেয়ে আনজিরার অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ছোট মেয়েরও বিয়ে দিয়ে ‘নিশ্চিন্ত’ হতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেঁকে বসে সুহিনা। বাবা-মাকে বারবার বুঝিয়েও যখন লাভ হয়নি, তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বরূপরাজ রায়চৌধুরীর দ্বারস্থ হয় সে। এক শিক্ষিকা সুহিনার বাড়িতে যান। লাভ হয়নি। খবর যায় গোপালনগর থানা এবং চাইল্ড লাইনের কাছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিয়ে বন্ধ হয়। কিছু দিন পরে বাবা মুচলেকা দিয়ে জানান, মেয়ের আঠারো বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না। সুহিনাকে ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মান দেয় রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর।

সুহিনার বাবা এ দিন বলেন, ‘‘অনটনের সংসারে তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। ও বেঁকে বসায় প্রথমে খুব রাগ-অভিমান হয়েছিল। তবে মেয়ের উৎসাহ দেখে মত পরিবর্তন করি। আমরা স্বামী-স্ত্রী কেউই স্কুলে যায়নি। সুহিনা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ালে আমাদের বংশের তো বটেই, গ্রামের মুখও উজ্জ্বল হবে।’’ মেয়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা জাবেদা বিবি বলেন, ‘‘এত ভাল মাথা। মেয়ে পড়াশোনাই করবে।’’ পড়াশোনা চালাতে যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য স্কুল ছাত্রীর পাশে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মাধ্যমিকের পরে ব্যাসপুর স্কুলেই কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে চায় সুহিনা। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে ওর ভর্তির ফি মকুব করা হবে।’’ সুহিনার সাফল্য প্রসঙ্গে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, ‘‘মেয়েটির পড়াশোনার তাগিদ যে কতখানি, তা আজ প্রমাণিত হল। সেদিন সাহস করে ওই পদক্ষেপ না করলে সুহিনার মেধা অঙ্কুরেই নষ্ট হত।’’

আর যাকে নিয়ে এত কিছু, সেই সুহিনার কথায়, ‘‘পুরনো দিনের কথা ভুলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’’ কথা বলতে বলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেয়ে। বলে, ‘‘রমজান মাস তো। বাবা বাজার এনেছেন। মা তাড়াতাড়ি কেটেকুটে দিতে বলছে। এখন ফোন রাখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik মাধ্যমিক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy