প্রতারক: আদালতের পথে। নিজস্ব চিত্র
রেলের গ্রুপ সি পদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুয়ো পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল কিছু লোক। তাতে সামিল ছিল রেলের এক কর্মীও। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রেলের ভিজিল্যান্স টিম ও পুলিশের যৌথ হানায় পাকড়াও করা হয়েছে ওই রেলকর্মী-সহ দু’জনকে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র, মিলেছে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ডও।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গোপালনগর থানার মানিককোল হাইস্কুলে হানা দেয় তল্লাশি-দল। ছুটির দিন তালা খুলে সেখানেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল প্রতারকেরা। রেলের মুখ্য ভিজিল্যান্স ইন্সপেক্টর সুজয়কুমার পাল ওই রেলকর্মী-সহ তিনজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত রেলকর্মী শ্রীকৃষ্ণ রায় এবং মানিককোল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নাথুরাম মজুমদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শ্রীকৃষ্ণ রেলের হাওড়া ডিভিশনের গদাধরপুর স্টেশনে গেট কিপার হিসাবে কর্মরত। তাকে জেরা করে সোমবার সকালে মেদিয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় নাথুরামকে। স্কুলের এক মহিলা পার্শ্বশিক্ষককেও এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে খুঁজছে পুলিশ।
ধৃতদের সোমবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে ওই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা যুক্ত, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। তল্লাশিও চলছে।’’
রেল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে দূরদূরান্ত থেকে পরীক্ষার্থীরা মানিককোল স্কুলে নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে এসেছিলেন। কাউকে কাউকে হাতে হাতে আবার কাউকে ডাকঘরের মাধ্যমে অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বেলা ১১টা থেকে ছিল লিখিত পরীক্ষা।
পরীক্ষাকেন্দ্রে গার্ডের ব্যবস্থা কার্যত ছিল না। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে আগেভাগেই প্রশ্ন জেনে গিয়েছিলেন। জনা তিরিশ যুবক-যুবতী যখন উত্তরপত্র লিখতে ব্যস্ত, তখনই রেলের ভিজিল্যান্স ও পুলিশ হানা দেয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। গোটা ঘটনায় পরীক্ষার্থীরা হতবাক!
তাঁদেরই কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণ নিজের পরিচয় দিয়েছিল রেলের রিক্রুটমেন্ট বিভাগে কর্মরত বলে। দফতরে তার হাত অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো, এমনটাও দাবি করেছিল। চাকরি পেলে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেছিল শ্রীকান্তরা। কারও কারও ক্ষেত্রে দরদাম করে তা ১ লক্ষ ২০ হাজার পর্যন্ত নেমেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। শ্রীকৃষ্ণ বলেছিল, পরীক্ষাটা নাম-কা-ওয়াস্তে। সকলেই পাস করে যাবে। পরীক্ষায় বসার আগে টাকা গুণতে হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের অনুমান, ভুয়ো পরীক্ষার মতোই পরের ধাপগুলিতে ভুয়ো নিয়োগপত্রও আসত। তারপরেই শুরু হতো টাকার খেলা। এমনকী, পছন্দসই পোস্টিংয়ের জন্যও টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছিল প্রতারকেরা।
জানা যাচ্ছে, প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে পোস্টার সেঁটে খদ্দের ধরার ফাঁদ পেতেছিল শ্রীকান্তরা। তাদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে কেউ কেউ। চক্রের জাল বহু দূর বিস্তৃত বলে মনে করছে পুলিশ।
মানিককোল স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের স্কুলে রবিবার পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে বলে তাঁরা কিছু জানতেন না। নাথুরামই স্কুল খুলে দিয়েছিল। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বৈরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আমি বা প্রধান শিক্ষক পরীক্ষায় বিষয়ে কিছুই জানতাম না। খবর পেয়ে স্কুলে আসি।’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের এই দাবিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী এক অফিসার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy