Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বেতন বন্ধ হয়েছিল অনেকেরই

তবে বেশ কিছু চাষিকে ধারে বীজ বিক্রি করে কিছুটা মূলধন বাঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন গোপাল পোদ্দারের মতো কিছু বীজ ব্যবসায়ী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share: Save:

ঠিক এক বছর আগের কথা। তখনও ছিল রবিশস্য চাষের মরসুম। খুচরা টাকার অভাবে হাটে গিয়েও আলু, পেঁয়াজ, কপির বীজ কিনতে পারছিলেন না চাষিরা। চরম সঙ্কটে পড়েছিলেন বীজ ব্যবসায়ীরাও। প্রভাব পড়েছিল চাষবাসে। কমেছিল আলু, কপি, পেঁয়াজ-সহ শীতকালীন আনাজ চাষ। বছর ঘুরতে গেল, তার মাসুল এখনও গুণতে হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিদের।

শুধু কৃষি ক্ষেত্রেই নয়, নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে এই জেলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পেও। খুচরো পয়সার অভাবে শ্রমিকের বেতন দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু কারখানাও। সব থেকে প্রভাব পড়ে দেগঙ্গা, দত্তপুকুরের মত এলাকাগুলিতে। দেগঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে জিনস্ সেলাই এবং সুতোর কাজের কারখানা। নোট বাতিলের জেরে একটা সময়ে এই সব জায়গায় কাজ হারিয়েছিলেন হাজারখানেক শ্রমিক।

এখন কেমন আছেন?

প্রশ্ন শুনেই ক্ষোভ উগরে দিলেন দেগঙ্গার ব্যবসায়ীরা। গাজিতলার বাসিন্দা, আনিরুল মোল্লা বলেন, “মাসখানেক বন্ধ ছিল কারখানা। ঘরেও খুচরো টাকা ছিল না। বাজারঘাট করতে পারছিলাম না। সে দিনের কথা মনে হলেই ভয় লাগে।’’ দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে ছোটবড় মিলে কমপক্ষে শতাধিক সেলাই কারখানা আছে। হাজার হাজার মানুষ কাজে যুক্ত। নোট বাতিলের ফলে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছিলেন না মালিক পক্ষ। বেকার হয়ে পড়েন গ্রামের বহু যুবক-যুবতী। সেলিম মণ্ডল বলেন, ‘‘কাজ চলে যাওয়ায় চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছিল।’’

হাড়োয়া রেলগেট-সংলগ্ন একটি জিনসে্র কাপড় সেলাই কারখানায় ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত বছর এই কারখানা দেড় মাস বন্ধ ছিল। মালিক রবিউল বিশ্বাস জানালেন, এক একজন শ্রমিকের বেতন দিনে ২৫০-৩০০ টাকা। নোট বাতিলের ফলে এটিএম থেকে মিলছিল দিনে ২ হাজার টাকার একটি নোট।

এক দিকে খুচরা নোটের অভাব। অন্য দিকে, ৫০ জন শ্রমিকের বেতনের এত টাকা মিলছিল না ব্যাঙ্ক থেকে। রবিউলের কথায়, ‘‘বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছিল কারখানা। আমাদেরও ক্ষতি হয়েছিল মাসে কয়েক লক্ষ টাকার মতো। সময়টা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো।’’ একই হাল হয়েছিল দত্তপুকুরের মৃৎশিল্পেও। খুচরো টাকার অভাবে মাটির প্রদীপ, মূর্তি তৈরির শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

দেগঙ্গা বাজারে আলু, পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ী পিয়ার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা অন্যবারের মতো আগাম আলু, পেঁয়াজের বীজ কিনে রেখেছিলাম। খুচরা টাকা চাষির কাছে না থাকা সঠিক সময়ে তা বিক্রি করতে না পেরে বীজ পচে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।’’

তবে বেশ কিছু চাষিকে ধারে বীজ বিক্রি করে কিছুটা মূলধন বাঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন গোপাল পোদ্দারের মতো কিছু বীজ ব্যবসায়ী।

তবে এক বছরে আগের সেই ধাক্কা সামলে নিয়েছেন কেউ কেউ। দেগঙ্গার বুড়িরহাট বাজারে দেখা গেল, পেঁয়াজ ও আলুর বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে চাষির ভিড়। সাবুর আলি নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘গত বছর ২ লক্ষ টাকার বীজ কিনেছিলাম। খুচরো টাকার অভাবে ক্ষতি হয়েছিল। যদিও এ বার চাষিরা যে হারে বীজ আলু ও পেঁয়াজ কিনছেন, তাতে ব্যবসা ভালই হচ্ছে।’’ এ মরসুমে ফলনও বাড়বে বলে তাঁর আশা।

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation নোটবন্দি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy