বনগাঁ লোকসভার আসন্ন উপ নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুরের জন্য চাইলেই ভোটের খরচ বাবদ কেউ আর্থিক সাহায্য করতে পারবেন না। নগদ টাকাতে তো নয়ই, এমনকী কুপন ছাপিয়েও টাকা তোলা যাবে না। প্রার্থীকে আর্থিক সাহায্য করতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই তা করতে হবে। সম্প্রতি এমনই নির্দেশ দিয়েছেন দলের বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। উপেনবাবু বলেন, “যদি কেউ ওই নির্দেশ না মেনে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং তা যদি আমি জানতে পারি, তা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ?
তৃণমূল সূত্রের খবর, অতীতে দেখা গিয়েছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পরে দলীয় প্রার্থীকে বহু মানুষ আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। নগদ টাকা দেওয়া হয় প্রার্থীকে। ওই সব টাকার কোনও হিসাব থাকে না। অনেক সময়ে দল তা জানাতেও পারে না। অস্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন নিজেদের স্বার্থে প্রার্থী বা দলের নেতাদের নির্বাচনে খরচের নামে মোটা টাকা দিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। তাতে দলের ও প্রার্থীর সুনাম নষ্ট হয়। ভোটারদের মধ্যেও প্রভাব পড়ে।
সে কারণেই নতুন সিদ্ধান্ত। যাকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। তিনি বলেন, “এর থেকে ভাল সিদ্ধান্ত আর কিছু হয় না। আমরা স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন করি।”
কিন্তু অতীতে ভোটে কী এ ধরনের কোনও বেআইনি লেনদেন হয়েছে এই এলাকার ভোটে?
উপেনবাবু বলেন, “আগে কী হয়েছে বলতে পারব না।” পাশাপাশি তিনি বাগদা কেন্দ্রে নিজের ভোটে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতার কথাও বলেছেন। উপেনবাবু জানান, ওই সময়ে প্রত্যেক তৃণমূল প্রার্থীকে দলের পক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল। যা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও কম হয়নি। রাজ্য রাজনীতিতে প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেনবাবুই ছিলেন দলীয় প্রার্থী, যিনি ওই টাকা নেননি। তাঁর নির্বাচনের সময়ে দলের থেকে ব্যানার-পোস্টার-হোর্ডিং-পতাকা দেওয়া হয়েছিল। উপেনবাবুর কথায়, “নির্বাচনে আমার ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। আমার অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে আমার শুভানুধ্যায়ী ও অনুগামীরা আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। এ বার লোকসভার উপ নির্বাচনে আমি সেই বাগদা মডেলই অনুসরণ করব।”
সম্প্রতি উপেনবাবু বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। মন্ত্রী জানান, প্রার্থী মমতা ঠাকুরের নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে তিনি নিজের পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। কেউ প্রার্থীকে আর্থিক সাহায্য করতে হলে তাঁর ওই অ্যাকাউন্টে চেকে টাকা জমা দিতে হবে।
কী ভাবে আর্থিক সাহায্য করা যাবে প্রার্থীকে?
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ প্রার্থীকে আর্থিক সাহায্য করতে চাইলে স্থানীয় বিধায়কের মাধ্যমে আসতে হবে। নির্দিষ্ট একটি ফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আর্থিক সাহায্য করতে চাওয়া ব্যক্তির নাম-ঠিকানা-পেশা-প্যানকার্ড নম্বর সহ নানা তথ্য পূরণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখা হবে, যে ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, তাঁর এলাকায় ভাবমূর্তি কেমন। বিধায়ককে ওই ব্যক্তির থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, এই মর্মে অনুমোদন দিতে হবে। তারপর দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক জন দলীয় ব্যক্তি খুঁটিয়ে দেখবেন। শেষে উপেনবাবু ফের একবার নিজে দেখেশুনে সম্মতি দিলে তবেই একজন ব্যক্তি প্রার্থীর অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে টাকা রাখতে পারবেন। উপেনবাবু বলেন, “ক্যাশ টাকা নেওয়া তো হবেই না। চেকের মাধ্যমে কে কেন সাহায্য করতে চাইছেন বা তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিলে আইনগত দিক কী আছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। সর্বোপরি, তাঁর সততার দিকটিও খতিয়ে দেখে তারপরেই সাহায্য নেওয়া হবে।”
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মমতা ঠাকুরকে রাজ্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্যানার-পোস্টার-হোর্ডিং-পতাকা দেওয়া হবে। তা আসবে জেলা তৃণমূল দফতরে। সেখান থেকে দলীয় বিধায়কেরা তা সংগ্রহ করবেন। দলের পক্ষ থেকেও চেকের মাধ্যমে প্রার্থীর অ্যাকাউন্টে আর্থিক সাহায্য করা হবে। সাতটি বিধানসভা এলাকাতেই বিধানসভা ভিত্তিক নির্বাচন কমিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রার্থীর এক সপ্তাহের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy