ফেডারেশনের সম্মেলনে যাওয়া সিইও অফিসের কর্মী জিষ্ণু সরকার। ইনসেটে আর এক কর্মী সৌমেন গায়েন। —নিজস্ব চিত্র।
দু’জনেই কাজ করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরে। যে দফতরের তত্ত্বাবধানে রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া চলছে। তার মাঝেই শুক্রবার ওই দুই কর্মচারী কাজের সময়ে হাজির হলেন শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সম্মেলনে। মহাজাতি সদনে সেই ‘মর্যাদা পুনরুদ্ধার সম্মেলন’-এ উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী ও বেহালা (পশ্চিম) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবং সম্মেলনের উদ্বোধনের পরে সংগঠনের পক্ষে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ১৩ মে-তেই পাঁচ বছর আগে রাজ্যে পরিবর্তন হয়েছিল। আগামী ১৯ মে আবার জনাদেশ আসবে। তা যে দিকেই যাক, আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই থাকব।’’
বাম আমলে যেমন ছিল শাসক সিপিএমের প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটি। মমতার আমলে তেমনই তৈরি হয়েছে ফেডারেশন। নির্বাচনের শুরুতে শাসক দলের প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ফেডারেশনের এক নেতা এ বার প্রার্থীও হয়েছেন। খোলাখুলি ভাবেই তৃণমূলের পক্ষে থাকা এই সংগঠনের সম্মেলনে সিইও দফতরের দুই কর্মচারীর উপস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, ভোট গণনা এখনও বাকি। তার আগে ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেউ রাজনৈতিক কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিলে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। অথচ সিইও দফতরের কর্মী হিসেবে তাঁরা নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনা করবেন, এটাই কাম্য।
সিইও অফিসের ওই দুই কর্মীর নাম সৌমেন গায়েন এবং জিষ্ণু সরকার। এঁদের এক জন আপার ডিভিশন ক্লার্ক, অন্য জন হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট। তাঁদের সহকর্মীরা জানান, এ দিন দুপুরে সৌমেন ও জিষ্ণু দু’জনেই চা খেতে যাওয়ার কথা বলে অফিস থেকে বের হন। ফেরেন দীর্ঘ সময় পরে। এই সময়ে তাঁদের দেখা যায় মহাজাতি সদনে। ফেডারেশনের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা অস্বীকারও করেননি ওই দুই কর্মী। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে গিয়েছে। এখন গেলে ক্ষতি নেই। তা ছাড়া অফিসের বাইরে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি।’’ দু’জনেরই দাবি, অফিসে ছুটি নিয়েই ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।
তাঁর দফতরের দুই কর্মীর ফেডারেশনের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে’’, বলেছেন মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত। অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার শৈবাল বর্মনও বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে।’’ আর পার্থবাবুর আশ্বাস, ‘‘এমন হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেব।’’
সিপিএম নেতা রবীন দেব এবং কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘কমিশনের যাঁরা কর্মী, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সভায় যোগ দিতে পারেন না। তাঁদের কাছে নিরপেক্ষতাই কাম্য।’’ যদিও কমিশনের এক অফিসারের দাবি, ‘‘এখানে কাজ করলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না— কমিশনের নিয়মে এমন বলা নেই।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সিইও অফিসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভোট প্রক্রিয়া যখন চলছে। তখন এই ধরনের কাজ নীতিগত ভাবে অনুচিত।
ভোট চলাকালীন সিইও দফতরে কর্মরত ফেডারেশনের কয়েক জন নেতা-কর্মী শাসক দলের হয়ে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। এ দিনের ঘটনা সেই অভিযোগকেই পোক্ত করল বলে তাঁদের দাবি। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো আগেও বহুবার মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। এ বার সেটা সঠিক প্রমাণিত হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy