বিজেপির অন্দরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। প্রতীকী চিত্র
বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল না হলেও ৭৭ আসন পেয়েছিল বিজেপি। যদিও পরে মুকুল রায়-সহ পাঁচ বিধায়ক চলে গিয়েছেন তৃণমূলে। উপনির্বাচনে ভবানীপুরে হার প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু জেতা দিনহাটা ও শান্তিপুরও হাতছাড়া হয়। খুবই খারাপ ফল খড়দহ, গোসাবার উপনির্বাচনে। এর পরে পুরভোটে বিপর্যয়। আর সব শেষ শনিবারের ফলে বিজেপির অন্দরেই জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। জয় নিয়ে আশাবাদী না হলেও বালিগঞ্জে জমানত জব্দ হবে বা আসানসোলে হারের ব্যাবধান তিন লাখের বেশি হবে এমনটা ভাবেনি গেরুয়া শিবির। তাই ফল ঘোষণার পরে দলের ভিতরেই আঙুল তোলা শুরু হয়েছে। বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে সেই সব প্রশ্ন।
১। প্রার্থী বাছাই নিয়ে আগেই উঠেছিল প্রশ্ন। হারের পরে সে প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে সেটা ততটা নেই আসানসোল নিয়ে যতটা বালিগঞ্জের প্রার্থী কেয়া ঘোষকে নিয়ে। বাবুল সুপ্রিয়ের মতো ওজনদার প্রতিপক্ষের সামনে নির্বাচনে অনভিজ্ঞ কেয়াকে ঠেলে দেওয়া কি ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? কেয়া আবার বালিগঞ্জ বিধানসভার ভোটারও নন।
২। প্রার্থী কেয়া অনেক ঘোরাঘুরি করলেও দলের অনেক নেতা, কর্মীই তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির তিনটি সাংগঠনিক মণ্ডলের সভাপতিও প্রচারে নামেননি। কিছু দিন আগেই বিজেপি দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি বদল করেছে। নতুন সভাপতি সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী আগে কখনও বড় দায়িত্ব পালন না করলেও তাঁর উপরেই কেন ভরসা রেখেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব?
৩। বালিগঞ্জের ভোটে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন রাণাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। দক্ষিণ কলকাতা সম্পর্কে তেমন ধারণাই নেই এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া কি ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? যেখানে নিজের আসন রাণাঘাটই উপনির্বাচনে ধরে রাখতে পারেননি জগন্নাথ।
৪। কেয়া এবং জগন্নাথ দু’জনেই এক অর্থে বালিগঞ্জে ছিলেন বহিরাগত। এমন অভিযোগও উঠেছে যে স্থানীয় অনেক নেতা, কর্মীকে দায়িত্ব না দিয়ে বেহালা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ থেকে নেতা ধরে এনে নির্বাচনের কমিটি তৈরি করা হয়। এক তৃতীয়াংশ বুথে এজেন্টই দিতে পারেনি বিজেপি। এটা কি রাজ্য নেতৃত্ব দেখেননি?
৫। বালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সে ভাবে প্রচারেই যাননি প্রার্থী কেয়া। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতোই নাকি প্রচার কর্মসূচি সাজানো হয়েছিল। রাজ্য নেতৃত্ব কি বুঝতে পারেনি এর ফলে তৃণমূল বিরোধী ভোটের বড় অংশ সিপিএমের ঝুলিতে চলে যেতে পারে?
৬। বালিগঞ্জের মতো আসানসোলেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি তৃণমূল থেকে আসা জিতেন্দ্র তিওয়ারির উপরে কেন এত নির্ভরতা দেখালেন রাজ্য নেতৃত্ব? বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে কোনও সাফল্যই কি দেখাতে পেরেছেন জিতেন্দ্র?
৭। শুভেন্দু, জিতেন্দ্র ছাড়াও আসানসোলের দায়িত্বে ছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। দলের একাংশের প্রশ্ন, অতীতে বিজেপি কর্মীরা যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসানসোলে জিতেছিল তেমন তিন দলবদলে গেরুয়া শিবিরে আসা নেতায় ভরসা করা হল কেন? দাবি, এর ফলে দলের আদি কর্মীরা যেমন প্রচারে নামেননি তেমনই বিজেপির নিজস্ব ভোটারদের বড় অংশ পদ্ম প্রতীক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন।
৮। আসানসোলে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের সময়ে কর্মীরা নেতৃত্বকে পাশে পায়নি বলে অভিযোগ ছিলই। বাবুল দলবদল করায় দীর্ঘ দিন অভিবাবকহীন হয়ে ছিলেন আসানসোলের কর্মীরা। সংগঠনও দুর্বল হয়ে যায়। প্রার্থী হওয়ার পরে সংগঠন নড়বড়ে বলে জানান অগ্নিমিত্রাও। তা সত্ত্বেও কেন বাড়তি নজর দেওয়া হল না?
৯। প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়র ভূমিকা নিয়েও। তিনিই নাকি, একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে এসে প্রচার করিয়েছেন আসানসোলে। এখন প্রশ্ন, বাংলায় অপরিচিত সেই নেতাদের প্রচারে যে লাভ হবে না সেটা কি ভাবা হয়নি? গত বিধানসভা নির্বাচনে ভিন্রাজ্যের নেতাদের নিয়ে এসে যে লাভের লাভ হয়নি সেই অভিজ্ঞতা কেন কাজে লাগানো হল না?
১০। জেতা আসানসোলে লজ্জাজনক ব্যবধানে হারের জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে দায়ী করে এমন প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে প্রার্থী অগ্নিমিত্র বলার পরেও অগোছালো সংগঠনকে কেন সাজানোর চেষ্টা করা হল না? বিজেপি সূত্রে খবর, আসানসোলে এক হাজারের বেশি বুথে বিজেপি এজেন্ট বসাতেই পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy