রাজ্যজোড়া বিতর্ক এবং ছাত্র-আন্দোলন এখনও থামেনি। যাঁকে নিয়ে বিতর্ক এবং যাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন, সেই অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হচ্ছেন। আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ওই পদে অভিজিৎবাবুর নামে সিলমোহর দিয়েছেন বলে রবিবার রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই দফতর চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
দুর্গোৎসবের কোলাহলের মধ্যেও অবশ্য অভিজিৎবাবুর ইস্তফা চেয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদী কলরব চাপা পড়েনি। যাদবপুরে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সল্টলেকের লাবণিতে একটি পুজো মণ্ডপের বাইরে আইন অমান্য করে গ্রেফতার হন এক দল পড়ুয়া। পরে তাঁরা জামিন পান। প্রতিবাদী জমায়েত হয় ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপ সংলগ্ন ফুটপাথেও।
এর মধ্যেই রবিবার উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, যাদবপুরের স্থায়ী উপাচার্য-পদের জন্য তিনটি নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রথমেই ছিল অভিজিৎবাবুর নাম। আচার্যের কাছে সেই ফাইল যাওয়ার পরে যাদবপুরে ঘেরাও ভাঙতে পুলিশি হামলা হয়। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের বড় একটি অংশ অস্থায়ী উপাচার্যের পদ থেকে অভিজিৎবাবুর ইস্তফা দাবি করেন। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য পাঠানো প্যানেল থেকে অভিজিৎবাবুর নাম বাদ দিতে হবে বলে রাজভবনে গিয়ে দাবিও জানিয়ে আসেন অনেকে।
এমনকী পুজোর ঠিক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক দল প্রতিনিধি রাজভবনে গিয়ে আচার্যের কাছে আবেদন জানান, তিনি যেন নিজের বিবেচনা প্রয়োগ করে স্থায়ী উপাচার্য বেছে নেন। প্যানেলে নাম থাকা তিন জনের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্যও রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। উপাচার্য হয়ে অভিজিৎবাবু যে-ভাবে পড়ুয়াদের পুলিশের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তার পরেও রাজ্যপাল কী ভাবে অভিজিৎবাবুর নামে সিলমোহর দিলেন, প্রশ্ন তুলেছেন যাদবপুরের শিক্ষকদের একাংশ।
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরাও এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত। আন্দোলনকারী এক ছাত্রের মন্তব্য, “আমাদের মূল দাবি, অস্থায়ী উপাচার্যের পদে ইস্তফা দিতে হবে অভিজিৎবাবুকে। ওই পদে স্থায়ী ভাবে ওঁর নিয়োগ আমরা মানছি না। আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
প্রতিবাদী পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের একাংশ যা-ই বলুন, রাজ্য সরকার অবশ্য বরাবরই অভিজিৎবাবুর পাশে। যাদবপুরের ঘটনায় বহিরাগত এবং মাওবাদীদের হাত দেখছে তারা। রাজ্যের শাসক দলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অভিজিৎবাবু দু’-দু’বার যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য মনোনীত হন। গত বছর তাঁর দ্বিতীয় দফার নিয়োগের সময়ে তৎকালীন রাজ্যপাল অবশ্য আপত্তি করেন বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। ওই সূত্রে জানানো হয়, সরকারের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অভিজিৎবাবুকে ফের অস্থায়ী উপাচার্য করা হয়। সেই অভিজিৎবাবুকেই স্থায়ী উপাচার্য করার সিদ্ধান্তে শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-ও বিস্মিত।
পড়ুয়ারা এ দিনই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পুজোর মধ্যেও তাঁরা আন্দোলন থামাননি। অভিজিৎবাবু স্থায়ী ভাবে উপাচার্য হলে আন্দোলন জোরদার করা হবে। পুলিশ জানায়, অভিজিৎবাবুর ইস্তফা চেয়ে ৩ অক্টোবর কিছু ছাত্রছাত্রী পোস্টার নিয়ে লাবণি আবাসনের পুজো মণ্ডপের বাইরে রাস্তার ডিভাইডারে বসে পড়েন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ১০ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দেড় ঘণ্টা পরে ব্যক্তিগত জামিনে সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ অক্টোবর একই দাবিতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপের বাইরে জড়ো হন কিছু পড়ুয়া। পুলিশ আসে। রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে পড়ুয়ারা নিজেরাই চলে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy