Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

নিঃশব্দ পর্ষদ, শব্দবাজি সচেতন করবে কে?

চকোলেট বোমা, দোদমা, ‘শেল’-এর পিলে চমকানো, কান ফাটানো শব্দ। এ সব ঠেকাতে মূলত মানুষের সচেতনতাই তাঁদের ভরসা বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্তৃপক্ষ।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ১৮:৩৭
Share: Save:

চকোলেট বোমা, দোদমা, ‘শেল’-এর পিলে চমকানো, কান ফাটানো শব্দ। এ সব ঠেকাতে মূলত মানুষের সচেতনতাই তাঁদের ভরসা বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সচেতনতা প্রচার ও প্রসারে উদ্যোগটা কোথায়, রাজ্যের পরিবেশপ্রেমী ও পরিবেশকর্মীদের একাংশ সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, একটি বাণিজ্যিক সংস্থাও যা পারে, আইনি ও আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান পর্ষদ তা পারে না।

বস্তুত, হোর্ডিংটা এ বার অনেকেরই চোখে পড়েছে, মনে ধরেছে। পুজো উপলক্ষে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, কয়েকটি বড় রাস্তা এক ধরনের হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছিল। যেখানে দুর্গার নামে শপথ করে কী করব, কী করব না, বলা ছিল সে কথা। যার মধ্যে একটি— ‘মা দুগ্গার দিব্যি, শব্দবাজি পোড়াব না।’ বাজির শব্দদূষণ নিয়ে সাধারণ ওই হোর্ডিং দিয়েছিল একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। পর্ষদ নয় কিন্তু।

অথচ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র রবিবার বলেন, ‘‘আমি আশা করছি, শব্দবাজির দৌরাত্ম্য অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হবে। সাধারণ মানুষই সচেতন হয়ে শব্দবাজি ব্যবহার করবেন না।’’ শব্দবাজির রুখতে পুলিশকে নিয়ে অভিযানের বদলে এ বার শুধু মানুষের সচেতনতার উপরে পর্ষদকে নির্ভর করতে হচ্ছে কেন?

পরিবেশ ভবনের একটি সূত্রের খবর, রাজ্যে শব্দবাজি (যে সব বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি) অনুমোদিত নাকি নিষিদ্ধ, সেই বিষয়টি যখন এখনও বিচারাধীন বলে দাবি করে পর্ষদ এই সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞপ্তিই জারি করেনি। পর্ষদ নিজে শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযানেও নামেনি। পুলি‌শও বুঝতে পারছে না, কী করা উচিত। এ দিকে, সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির দাবি অনুযায়ী, দেড়শো টনেরও বেশি শব্দবাজি তৈরি হয়ে পাইকারদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে ও প্রায় ৮০ জন খুচরো বিক্রেতাও বাজি কিনেছেন।

পর্ষদের অসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক ও বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা লজ্জার যে, শব্দবাজি ব্যবহারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে একটি বাণিজ্যিক সংস্থা এগিয়ে আসতে পারে, কিন্তু পর্ষদ ঘুমিয়ে থাকে। অথচ এই দায়িত্বটা পর্ষদের উপরে আইনি ভাবেই ন্যস্ত। তা ছাড়া, দুর্গাপুজোয় বিপুল মানুষের সমাগম হয়। তখন এই রকম প্রচার করলে সুফল পাওয়া যেত।’’

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর পক্ষে নব দত্ত বলেন, ‘‘এমন নয় যে পর্ষদের টাকার অভাব। তার পরেও শব্দবাজির বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রচার করতে পর্ষদের এ বার সমস্যা হল কেন, বুঝতে পারছি না।’’

পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণবাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ ও গঙ্গা দূষণের বিরুদ্ধে প্রচারমূলক একশোর বেশি ফ্লেক্স তাঁরা এ বার বিভিন্ন মণ্ডপে দিয়েছেন। তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার, বড় রাস্তায় হোর্ডিং দিলে জনমানসে যতটা প্রভাব বিস্তার করা যায়, সেই রকম প্রচার পর্ষদ এ বার করেনি। তা ছাড়া, নির্দিষ্ট ভাবে শব্দবাজির বিরুদ্ধেও পর্ষদের প্রচার ছিল না। পর্ষদ সূত্রের খবর, হোর্ডিং দিয়ে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রচারের পরিকল্পনা প্রাথমিক ভাবে করা হলেও শেষমেশ নানা টালবাহানায় তা কার্যকর করা যায়নি।

পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের একটি সাম্প্রতিক নির্দেশ পর্ষদকে শব্দবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করে দিলেও পর্ষদ সে ক্ষেত্রে টালবাহানা করছে। গত ১৬ অক্টোবর জাতীয় পরিবেশ আদালত বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদকে। কিন্তু সেই ব্যাপারে পর্ষদের এখনও হেলদোল নেই বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ।

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বাজির প্যাকেটের গায়ে উৎপাদকের নাম ও ঠিকানা লেখা বাধ্যতামূলক। সেটা না থাকলে ওই বাজি বাজেয়াপ্ত করা যাবে। আর উৎপাদক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকলেও তালিকা মিলিয়ে যদি দেখা যায়, সেটি বেআইনি উৎপাদক, তা হলে সেই বাজিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এই সুযোগেই বিপুল শব্দবাজি আটক করা যাবে বলে বিশ্বজিৎবাবুর অভিমত।

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়ও জানাচ্ছেন, উৎপাদিত সাড়ে তিনশো টন বাজির প্রায় অর্ধেকই শব্দবাজি। আর তাঁর হিসেবেই রাজ্যের ছোটবড় ছ’লক্ষ বাজির কারখানার মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থার সব রকম প্রয়োজনীয় অনুমতি আছে মাত্র সাত-আটটির।

পরিবেশকর্মী নববাবুর মতে, পর্ষদ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন ও বড় বড় হোর্ডিং দিয়ে অবিলম্বে শব্দবাজির বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করুক, সেই সঙ্গে যে বাজি কেনা হচ্ছে, তার উৎপাদকদের আইনি বৈধতা আছে কি না, সেটা দেখে নিতে হবে বলে জানিয়ে দিক। কোন কোন উৎপাদকের সব রকম অনুমতি আছে, তার তালিকাও প্রকাশ করুক পর্ষদ।

এটা করতে পারবেন কি না, পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র এখনই নিশ্চিত নন। তবে তিনি বলছেন, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশ হাতে এলেই তার কপি কলকাতা ও প্রতিটি জেলার পুলিশকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। পুলিশকে বুঝিয়েও দেওয়া হবে, কী ধরনের বাজি আটক করতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy