বদলি হিসেবে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নিজের চেনা মেজাজে তিনি। হারের মুখ থেকে দলকে রক্ষা করে ইতিহাসে লেখালেন নাম। তিনি- মিরোস্লাভ ক্লোজে। ঘানার বিরুদ্ধে গোল করে বড় রোনাল্ডোর বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডে ভাগ বসালেন এই জার্মান স্ট্রাইকার। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছু পরেই চলে এল স্বয়ং রোনাল্ডোর শুভেচ্ছাবার্তা। টুইট করলেন, “ওয়েলকাম টু দ্য ক্লাব। তুমি কতটা খুশি হয়েছ, সেটা আন্দাজ করতে পারছি।” এবং একটা, দুটো নয় তিন তিনটে ভাষাতে। স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং জার্মানে। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। রোনাল্ডো এরপর যা করেছেন, তাতে তার মনের কথাটাই প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে।
২০০২ বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার ব্রাজিল সাংবাদিকদের সামনে এসে বলে দেন, “সত্যি বলতে আমি চাই, এ বার যেন থেমে যায় ক্লোজে। চাই না ও আর গোল করুক।” এমনকী ভগবানে কাছে প্রার্থনায় ব্রাজিলীয় সমর্থকদেরও সামিল করতে চান রোনাল্ডো। ‘ও ফেনোমেনো’ বলেন, “তোমরা সবাই একটু তুকতাক করো যাতে ক্লোজে আর গোল করতে না পারে।” ঘটনাচক্রে রোনাল্ডোর মতোই জার্মান স্ট্রাইকারের রেকর্ড সংখ্যক গোল এসেছে ঘানার বিরুদ্ধেই।
ফস্কা গেরো। ‘বিশ্বকাপের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে’ আয়োজক ব্রাজিল আর ফিফার এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শনিবার সেই নিরাপত্তা ভেদ করে এক দর্শক ঢুকে পড়লেন মাঠে। জার্মানি-ঘানা ম্যাচ চলাকালীন। সেই দর্শক আবার মাঠে জার্সি খুলে নাৎসিদের সমর্থনে গায়ে লেখা স্লোগানও দেখান। তখনও কোনও নিরাপত্তাকর্মীর টিকি দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ঘানার ফুটবলার সুলে মুন্তারি তাঁকে মাঠের বাইরে বের করে দেন। ছবি: এএফপি।
তার উপরে আবার রোনাল্ডো রেকর্ড করেছিলেন জার্মানির মাটিতে। ক্লোজে সেটা ছুঁলেন ব্রাজিলে। অথচ এই ক্লোজেরই বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কিংবদন্তি ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার পর্যন্ত বলেন, “ক্লোজের ফর্ম ভাল নেই। দলে মাত্র একটা সেন্টার ফরোয়ার্ড নিয়ে যাওয়াটা বড় ঝুঁকি।” কিন্তু ঘানা ম্যাচের পরে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে ক্লোজে প্রমাণ করলেন, এখনও বড় ম্যাচ পরিস্থিতিতে জার্মানির তুরুপের তাস তিনি। যে প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার বলেন, “উফ আর কত বার দেখতে হবে ক্লোজে বড় ম্যাচে গোল করছে!”
ক্লোজের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে লো বলেন, “দু’মিনিটের জন্য মাঠে নেমেই গোল করল। ও এমন একজন ফুটবলার যে মাঠে নেমেই খেলার ছবি পাল্টাতে পারে। আর সেটা দলের জন্য খুব ভাল সংকেত।” বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেও কয়েক মাস আগেই চোটের সমস্যায় ভুগছিলেন ক্লোজে। এমনকী লাজিওর হয়ে নিয়মিত গোল করতেন না জার্মানির প্রবীণ স্ট্রাইকার। তবুও ক্লোজেকে বাছতে একটুও দ্বিধাবোধ করেননি লো। বলেন, “ক্লোজের খুব ভাল মরসুম কাটেনি জানি। লাজিওর হয়ে খুব বেশি গোলও করতে পারেনি ও। কিন্তু ক্লোজের মতো ফুটবলার যে কোনও দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওর উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।” ম্যাচ শেষেও প্রতিটা ঘানা ফুটবলার তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে থাকে। ফোর্তালেজার মাঠে জার্মান গ্যালারি থেকে শোনা যায় ‘ক্লোজে-ক্লোজে’ চিৎকার। তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন জার্মান স্ট্রাইকার। বরং প্রতিটা বিশ্বকাপেই যে দলকে কিছুটা সাহায্য করতে পারছেন, তাতেই সন্তুষ্ট লাজিও স্ট্রাইকার। “আগেও বলেছি রেকর্ডের জন্য খেলি না। কিন্তু বিশ্বকাপে ১৫ গোল খারাপ কথা না,” বলেন ক্লোজে।
কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে নাম লিখিয়েও একটাই আক্ষেপ রয়ে যাচ্ছে ক্লোজের সেলিব্রেট করার সময় ডিগবাজিটা ঠিকঠাক খেতে পারেননি। বলেন, “অনেক দিন বাদে এই ভাবে সেলিব্রেশনটা করার চেষ্টা করেছিলাম। ডিগবাজি দেওয়ার পর ল্যান্ডিংটা ঠিক মতো হল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy