ইনদওরে বিরাট-মেজাজ। শনিবার। -পিটিআই
তখন ম্যাচ শুরুর আগে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। শুরু হল জনগণমন। হোলকার স্টেডিয়ামের বাইরে তখন হাজারো মানুষ। স্টেডিয়ামে ঢোকার বিশাল বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা। দেশের জাতীয় সঙ্গীত শুরু হতেই যেন মাঠের ভিতরের চেয়ে বাইরে থেকে বেশি উল্লাসের আওয়াজ ভেসে এল।
ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর ঘণ্টাখানেক পরও উত্তেজিত ভাবে বলছিলেন, ‘‘ওই সময় স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় দেখে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের বললাম, ওদের তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে। এখানকার আয়োজকদের অভিনন্দন জানিয়েছি। যা যা করেছে ওরা, সে সব দেখে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ধর্মশালা টেস্টেও অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করছে।’’
এই কথাগুলো যখন বলছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, তখনই আউট হয়ে গেলেন গৌতম গম্ভীর। ট্রেন্ট বোল্টের বলে পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। স্টান্সে বদল, স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফুটওয়ার্ক, ম্যাট হেনরিকে দু’বার পুল করে সোজা গ্যালারিতে আছড়ে ফেলার পরও গম্ভীরের এ ভাবে আউট হওয়াটা বেশ হতাশাজনক। কিন্তু দু’বছর পরে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা গম্ভীরের পারফরম্যান্স মনে রাখার মতোঅ।
কানপুর ও কলকাতায় প্রথম দিনই ভারতের টেল এন্ডাররা নেমে পড়েছিলেন। ইনদওরে কিন্তু সেটা হয়নি। হবে কী করে? বিরাট কোহালি যখন ক্রিজে স্বমহিমায়, আর সঙ্গে যখন ফর্মে থাকা অজিঙ্ক রাহানে, তখন তা হওয়া অসম্ভব। প্রথম দিনের শেষে ভারতের ২৬৭-৩ স্কোরই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ৩-০ সিরিজ জয়ের সংকল্প নিয়েই নেমেছেন তাঁরা।
যে মাঠে সচিন তেন্ডুলকর তাঁর দশ হাজারতম ওয়ান ডে রান করেছিলেন, সেই মাঠের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ন হলেন বিরাট কোহালি। সি কে নাইডুর পর শহরের সেরা দুই ক্রিকেটীয় গর্ব অনায়াসে হতে পারে এই দুই ঘটনা। অ্যান্টিগায় ২১ জুলাই ডাবল সেঞ্চুরির পর কোহালির ব্যাটে রান খরা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল দেশের গোটা ক্রিকেট মহল। ইডেনেই রানে ফেরার ইঙ্গিত ছিল তাঁর ব্যাটে। কিন্তু ইডেন উইকেটের চরিত্র বোকা বানিয়ে দেয় তাঁকে। এ বার আর কোনও ভুল করলেন না।
সিরিজেও এটাই প্রথম সেঞ্চুরি। ম্যাচ শুরুর আগের দিন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সিরিজে এখন পর্যন্ত একটাও সেঞ্চুরি হল না কেন বলুন তো? কোহালি বলেছিলেন, ‘‘ভাল বোলিং আর কিছু ভুলের জন্য’’। শনিবার নিউজিল্যান্ডের ভাল বোলিংটা এ দিনও ছিল ঠিকই। কিন্তু ব্যাটসম্যান কোহালির সেই ভুলগুলো উধাও। আগের কয়েকটা ইনিংসে এমন কতগুলো শট খেলেছিলেন, যেগুলো না খেললেও পারতেন। কিন্তু সেই শটগুলো নিতে গিয়ে চরম ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। এ দিন কিন্তু কোহালি ও রাহানের ১৬৭ রানের পার্টনারশিপে তেমন কোনও ঝুঁকির শটই ছিল না।
একশোয় পৌঁছনোর মুহূর্তে একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। জেমস নিশামের ডিরেক্ট থ্রোয়ে রান আউট প্রায় হয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু বেঁচে যান। একশোয় পৌঁছে তাঁর সেলিব্রেশনে ড্রেসিংরুমের দিকে থ্রো ডাউনের ইঙ্গিতে বোধহয় ধন্যবাদ দিলেন ট্রেনিং অ্যাসিসট্যান্ট রঘু ও ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বঙ্গারকে। এই নিয়ে টেস্টে ১৩ নম্বর সেঞ্চুরি তাঁর। টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে ছ’নম্বর। এ দিক থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও এমএস ধোনিকেও টপকে গেলেন।
লাঞ্চে ভারত ৭৫-২ হওয়ার পর উইকেটে বল ঘুরতে শুরু করেছে। যা দেখে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজারা নিশ্চয়ই বেশ চনমনে হয়ে উঠছেন। স্যান্টনারের যে বলটা চেতেশ্বর পূজারাকে ফেরৎ পাঠাল, সেটা উইকেটের মাঝখানে পড়ে এমন ভাবে অফ স্টাম্পের দিকে ঘুরে গেল যে, পূজারার মতো ব্যাটসম্যানও ধোঁকা খেয়ে গেলেন। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে অফ স্টাম্পে লাগল। দিনের শেষে পূজারা অবশ্য নিজের ভুলটা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘ওটা আমার ডিফেন্ড করা উচিত ছিল।’’ আর বললেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য বোর্ডে অন্তত চারশো তোলা। স্পিনাররা এই উইকেটে সাহায্য পাবেই।’’
ইঙ্গিতটা যে এই একবারই ব্যাট করার দিকে, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বোধহয়।
সুনীল গাওস্কর: বিরাট কোহালি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী এক ক্রিকেটার। এই সিজনেই ও ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার ১১ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
শেষ চার টেস্টে স্কোর
বনাম নিউজিল্যান্ড, কানপুর: ৯ ও ১৮
বনাম নিউজিল্যান্ড, কলকাতা: ৯ ও ৪৫
বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, গ্রস আইলেট: ৩ ও ৪
বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কিংসটন: ৪৪
ভারত (প্রথম ইনিংস) মুরলী ক ল্যাথাম বো পটেল ১০, গম্ভীর এলবিডব্লিউ বো বোল্ট ২৯, পূজারা বো স্যান্টনার ৪১, কোহালি ন আ ১০৩, রাহানে ন আ ৭৯, অতিরিক্ত ৫, মোট ২৬৭-৩। পতন: ১-২৬, ২-৬০, ৩-১০০। বোলিং: বোল্ট ১৬-২-৫৪-১, হেনরি ২০-৩-৬৫-০, পটেল ২৪-৩-৬৫-১, স্যান্টনার ১৯-৩-৫৩-১, নিশাম ১১-১-২৭-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy