হতাশ: ঘরের মাঠেও ব্যর্থ মনোজরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
রবিবারের দুপুরে কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি মাঠে দেখা গেল তিনটি দৃশ্য।
দৃশ্য এক: ওয়াসিম জাফর ও শ্রীবৎস গোস্বামী মুখোমুখি। জাফরের কাছে ব্যাটিং টিপস নিচ্ছেন শ্রীবৎস।
দৃশ্য দুই: বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বিপক্ষের ক্যাপ্টেন ফৈয়জ ফজলকে অভিনন্দন জানানোর পরে ফৈয়জকে বলতে শোনা গেল, ‘‘তোমাদের ব্যাটিং, বোলিং কোনওটাই খারাপ নয়। তবে আসল সময়ে সেটা করতে পারোনি।’’
দৃশ্য তিন: বাংলার কোচ সাইরাজ বাহুতুলে, বিদর্ভের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও তাঁদের বোলিং কোচ সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এক জায়গায়। দূর থেকে দেখা গেল, পণ্ডিত হাত নেড়ে কী যেন বোঝাচ্ছিলেন সাইরাজকে। এক সময় তাঁর কোচ ছিলেন পণ্ডিত। সেই দিনই যেন ফিরে এল আবার।
গত চার দিন ধরে মাঠে বিদর্ভের কাছে এত কিছু শেখার পরেও বোধহয় আরও কিছু শেখা বাকি সাইরাজ, মনোজ, শ্রীবৎসদের।
এটা ঠিকই যে, এ বার সহজতম গ্রুপে থেকেও রঞ্জি ট্রফির নক আউটে পৌঁছনো যখন কঠিন হয়ে উঠেছে বাংলার পক্ষে, তখন অঘটন ঘটিয়ে তা সম্ভব করতে হলে সত্যিই তাঁদের এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে।
কী ভাবে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বিপক্ষকে চাপে ফেলে ম্যাচ জেতা যায়, কী ভাবে নিজেদের শক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে জিততে হয়, কী ভাবে পরিবেশ অনুযায়ী দল বাছতে হয়, বাংলাকে এ সবই কল্যাণীতে এসে এই ক’দিনে শিখিয়ে দিয়ে গেল বিদর্ভ।
এ দিন ঋদ্ধিমান সাহার ৯৭, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ৮২ ও মনোজ তিওয়ারির ৪৩ রানের ইনিংস সত্ত্বেও তাঁদের চেষ্টা বিফলে গেল। আনফিট হয়েও মাঠে নামা কণিষ্ক শেঠ (৩২), আমির গনি (২২) শেষ দিকে দলকে ২৯২ পার করিয়ে দিয়ে ইনিংস হার বাঁচান ঠিকই। তবে বিদর্ভের সাত পয়েন্ট আটকায়নি দ্বিতীয় ইনিংসে তারা মাত্র ১৫ রানের লক্ষ্য বিনা উইকেটে তুলে, দশ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেওয়ায়।
রবিবার দুপুরে ইনিংস হার বাঁচিয়েও দশ উইকেটে হেরে বিদর্ভকে সাত পয়েন্ট দেওয়ার পরে ঋদ্ধিমান সাহা বলছিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ জিততে হলে কী কী করা দরকার, সেটাই এই ম্যাচ থেকে শিখলাম আমরা।’’ মরসুমের চার নম্বর ম্যাচের পরেও দলের অন্যতম সেরা তারকা এই কথা বলছেন! এতেই বোঝা যাচ্ছে, এ বার রঞ্জিতে বাংলার নক আউট ভবিষ্যৎ কেমন।
বাকিটা বুঝতে হবে লিগ টেবলের দিকে তাকিয়ে। বিদর্ভের চার ম্যাচে ২১ পয়েন্ট। পঞ্জাব পেয়েছে ১৫। হিমাচল ও বাংলার ১৩। তবে হিমাচলের এক ম্যাচ বাকি, বিদর্ভের বিরুদ্ধে। বাংলার শেষ দুই ম্যাচ পঞ্জাব ও গোয়ার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে পঞ্জাবের অপর প্রতিপক্ষ সার্ভিসেস। বাংলার যা অবস্থা, তাতে তারা শেষ দু’ম্যাচে কী করবে, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্যরা বাকি ম্যাচগুলোতে কী করবে। শেষ দু’ ম্যাচে অন্তত ন’পয়েন্ট না পেলে মনোজ তিওয়ারিরা নক আউটের দরজা খুলতে পারবেন বলে মনে হয় না।
শামি দল থেকে বেরিয়ে যেতেই যেমন বঙ্গ বোলিংয়ের কদর্য দিকটা বেরিয়ে পড়ে প্রথম দিনেই। রবিবার তেমনই শেষ দিন ঋদ্ধিমান সাহা ৯৭ করে রান আউট হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ব্যাটিংয়ের শক্তিটাও বোঝা গেল। সারা দিন ক্রিজে টিকে থাকতে নামা ব্যাটিং লাইন আপ ২৪১-৪ থেকে ২৬৬-৮ হয়ে গেলে আর কী-ই বা আশা থাকে? শেষে বিদর্ভকে জয়ের জন্য ১৫ রানের টার্গেট দেওয়ার পরে ফৈয়জ ফজলরা তা মাত্র ছ’মিনিটেই তুলে নেন।
এই শক্তি নিয়ে শামি-ঋদ্ধিহীন বাংলা সন্দীপ শর্মা, মনপ্রীত গোনি, বারিন্দার স্রানদের সামলে পঞ্জাব-বধ করতে পারবে তাঁদের মাঠে? পারলে সেটা বড় অঘটনই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy