Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

জাড্ডুর ফেরার লড়াইয়ে দিদির সমর্থন, চোখ এখন কাপ জয়ে

জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছিলেন জাডেজা। তার পরেই ছিটকে যেতে হয়েছিল। ‘বনবাস’-এ যাওয়ার আগে ওয়ান ডে-তে তাঁর শেষ উইকেটটি ছিল শাকিব আল হাসানের। ফিরে আসার পরে প্রথম শিকার বাংলাদেশের সেই শাকিব। ভাগ্যদেবতা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে একটা বৃত্ত পূর্ণ হল! 

রবীন্দ্র জাডেজা: প্রথমে স্কোয়াডে ছিলেন না। অক্ষর পটেলের পরিবর্ত হিসেবে দলে ঢুকে চার উইকেট নেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। স্পিন-সহায়ক পিচে আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহারণেও অন্যতম প্রধান অস্ত্র।

রবীন্দ্র জাডেজা: প্রথমে স্কোয়াডে ছিলেন না। অক্ষর পটেলের পরিবর্ত হিসেবে দলে ঢুকে চার উইকেট নেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। স্পিন-সহায়ক পিচে আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহারণেও অন্যতম প্রধান অস্ত্র।

কৌশিক দাশ
দুবাই শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

চোদ্দো মাসের বেশি সময় ‘বনবাসে’ কাটিয়ে ফিরেছেন তিনি। এই ভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের বাইরে থাকাটা প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ করেছে তাঁকে। কিন্তু রবীন্দ্র জাডেজা লড়াই ছাড়েননি। আর সেই লড়াই পাশে দাঁড়িয়ে শুধু দেখেননি, ভাইয়ের দিকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন দিদি।

জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছিলেন জাডেজা। তার পরেই ছিটকে যেতে হয়েছিল। ‘বনবাস’-এ যাওয়ার আগে ওয়ান ডে-তে তাঁর শেষ উইকেটটি ছিল শাকিব আল হাসানের। ফিরে আসার পরে প্রথম শিকার বাংলাদেশের সেই শাকিব। ভাগ্যদেবতা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে একটা বৃত্ত পূর্ণ হল!

ভাগ্যে বিশ্বাস করেন ভারতীয় অলরাউন্ডারের দিদি নয়নাও। রাজকোট থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘ভাইয়ের তো খারাপ পারফরম্যান্স ছিল না। তা হলে বাদ দেওয়া হল কেন? আমরা অনেক প্রার্থনা করেছি, পুজো দিয়েছি। যার ফল এত দিনে পাওয়া গেল। ভাগ্যে থাকলে কেউ কাউকে আটকাতে পারে না।’’

আরও পড়ুন: বিরিয়ানি ফেলে ইনজির ভাইপোর নজর এখন ফিটনেসে

জাডেজা নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এত দিন ওয়ান ডে দলের বাইরে থাকাটা তাঁর কাছেও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরে সাংবাদিকদের জাডেজা বলেন, ‘‘এই প্রত্যাবর্তনটা আমি সব সময় মনে রাখব। কারণ, আমি ওয়ান ডে দলে ফিরলাম প্রায় ৪৮০ দিন পরে। এত দিন আমি কখনও দলের বাইরে থাকিনি। এই দীর্ঘ সময়টার কথা আমি কোনও দিন ভুলব না।’’

জাডেজা এ ভাবে ফিরে আসায় ভারতীয় স্পিন বোলিংয়ের শক্তিও অনেক বেড়ে গিয়েছে। নতুন বলে তো ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা আছেনই। কিন্তু মরুশহরে এশিয়া কাপে ম্যাচের ভাগ্যে বেশি করে প্রভাব ফেলছেন স্পিনাররা। ভারত-পাকিস্তান স্পিন শক্তির দ্বৈরথে নিঃসন্দেহে এগিয়ে রোহিত শর্মার দল। রোহিতের হাতে আছে দুই রিস্ট স্পিনার— কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল। এর সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিনার জাডেজা এবং ব্যতিক্রমী অ্যাকশনে অফস্পিন করা কেদার যাদব। উল্টো দিকে পাকিস্তানের সেরা অস্ত্র, লেগস্পিনার শাদাব খানের চোট (রাত পর্যন্ত খবর, তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা চলছে। খেলার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে)। এ ছাড়া পাকিস্তানের হাতে আছে দুই বাঁ হাতি স্পিনার— হ্যারিস সোহেল এবং মহম্মদ নওয়াজ। সঙ্গে শোয়েব মালিকের অভিজ্ঞতা বা ফখর জামানের অনিয়মিত স্পিন।

বছর খানেক আগে আইপিএল ম্যাচের সময় জাডেজার দিদির দেখা পাওয়া গিয়েছিল, রাজকোটে তাঁদের রেস্তোরাঁ— জাড্ডু’স স্পোর্টস ফিল্ডে। যেখানে দেওয়ালে সাজানো ছিল ক্রিকেট মাঠে জাডেজার জেতা নানা ট্রফি। ছিল রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর পাওয়া ছয় উইকেটের বল। যে সব দেখিয়ে সে দিন গর্বিত ভাবে নয়না বলেছিলেন, ‘‘আমার ভাই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। দেখুন ও কতগুলো ট্রফি জিতেছে।’’ ভাইকে নিয়ে কথা বলার সময় শনিবার দুপুরে রীতিমতো উত্তেজিত শোনাল নয়নার গলা, ‘‘বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারকে কেউ কখনও বাদ দিতে পারে? আমি শুধু নিজের ভাই বলেই বলছি না, যে ভাল খেলবে তাঁকে তো দলে রাখতেই হবে।’’

ম্যাচের নায়ক জাডেজা আবার বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমার কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই। আমার যা দক্ষতা, সেটাই আরও পালিশ করে নিতে হবে। কাউকে আমি দেখাতে চাই না, আমি কী করতে পারি। আমি শুধু নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই।’’

জাডেজার কথাতে ধরা পড়ছে তীব্র একটা জেদের ছবি। যে ছবির পিছনে কাহিনিটা শোনাচ্ছেন তাঁর দিদি নয়না। বলছিলেন, ‘‘চোদ্দো মাসের ওপর দলের বাইরে ছিল আমার ভাই। ও প্র্যাক্টিসের সময় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিশেষ কথা-টথা বলতে চাইত না। কিন্তু দেখতাম, কী ভাবে পরিশ্রম করে চলেছে। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছে। বিশ্রাম কী জিনিস, যেন ভুলে গিয়েছিল।’’ আপনি এই সময়টায় কী ভাবে পাশে থেকেছেন? দিদির জবাব, ‘‘ভাইয়ের দুঃখটা আমি ভাল বুঝতে পারতাম। ওর চোখ দেখে, ওর চাল-চলন দেখে পরিষ্কার বোঝা যেত, কতটা আঘাত পেয়েছে। আমি মানসিক ভাবে যতটা পারি ওকে সাহায্য করেছি। ভাইকে বুঝিয়েছি, লড়াই ছাড়বি না। আসলে এই সময় আপন কেউ এক জন পাশে থাকলে মনোবল অনেক বেড়ে যায়।’’

সেটা অবশ্য জাডেজার খেলাতেই ধরা পড়ছে। এক বছরও নেই বিশ্বকাপের। তা হলে কি এ বার নিজেকে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করছেন? জাডেজার জবাব, ‘‘বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূরে। আমি এত দূরের জিনিস নিয়ে ভাবছি না। আমার এখন লক্ষ্য একটাই। ভারতের হয়ে যে ক’টা ম্যাচে খেলার সুযোগ পাব, এই রকম ভাবে খেলার চেষ্টা করে যাব।’’

তবে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে জাডেজা এখন একটু ফুরফুরে। ম্যাচের পরে বোর্ডের ওয়েবসাইটে নিজের লন্বা চুল নিয়ে বলেছেন, ‘‘দু-আড়াই মাস হয়ে গিয়েছে এই হেয়ারস্টাইলের। চুল ভীষণ লম্বা হয়ে গিয়েছে। মাথা নিচু করলেই চুলটা মুখের ওপর নেমে আসে। মাথা ঝাঁকিয়ে ওই চুল ঠিক করতে করতে আমার ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়।’’

ফুরফুরে মেজাজ রাজকোটের বাড়িতেও। কখন কী ভাবে জাডেজার এশিয়া কাপের দলে আসার খবরটা পেলেন? নয়না বললেন, ‘‘আমি এখন টিভি খুব কমই দেখি। এক বন্ধু মেসেজ করে খবরটা দেয়। এর পরে বাড়িতে অনেক লোক এসেছিল। জাড্ডুর সাফল্যে সবাই খুশি।’’

তবে দিদি থেকে ভাই— সবার পাখির চোখ এখন একটাই। এশিয়া কাপ জয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy