গেইলের সেই বিধ্বংসী রূপ কি আটকানো যাবে?
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ মেগাযুদ্ধে নামা শুধু নয়, কাপ ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে দু’জনেরই। তাঁদের এক জন তিরাশি ফাইনালে গর্ডন গ্রিনিজকে যে ডেলিভারিটা করেছিলেন, তা ভারতীয় ক্রিকেটের লোকগাথায় ঢুকে গিয়েছে। দ্বিতীয় জন আবার লর্ডসের সেই ফাইনালে নিয়েছিলেন ভিভ রিচার্ডস সহ তিন উইকেট। বলবিন্দর সাঁধু এবং মদনলাল। এবং ওয়াংখেড়েতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টি সেমিফাইনালের আগের দিন বুধবার তাঁরা দু’জন এমএস ধোনির টিমকে গেইল-বধের যে প্রেসক্রিপশন ফোন মারফত আনন্দবাজারকে দিলেন তা এ রকম:
বলবিন্দর সিংহ সাঁধু
ভারতীয় বোলারদের প্রথমেই বলব, গেইলের বিরুদ্ধে কেউ জোরে বল করতে যেও না। যদি আমাদের পেসাররা ভাবে, গতি দিয়ে ওকে ক্রিজ থেকে উপড়ানো যাবে সেটা মারাত্মক ভুল হবে। বরং বলব যে বোলার বল মুভ করাতে পারবে, গেইলের সামনে তাকেই বেশি দেওয়া উচিত। যেমন আশিস নেহরার মতো কেউ। ওয়াংখেড়ে উইকেট ব্যাটিং ট্র্যাক যদি বা হয়ও, সুইং বোলারের জন্য কিছু না কিছু থাকবেই। নেহরা যদি অফ স্টাম্প লাইনে রেখে মুভ করায়, গেইলকে পেয়ে যেতে পারে। পয়েন্ট বা কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দানবীয় ক্যারিবিয়ান বিগ হিটার চলে যেতে পারে। যতটুকু যা দেখেছি, ওপেনার গেইলকে মারার একটাই উপায় বোলারের। বলটার গতি কমাও আর যত পারো মুভ করাও।
শুনলাম, ম্যাচের আগে গেইল অনেক হুঙ্কারটুঙ্কার দিয়েছে। ভারতীয় বোলারদের বলব, ও সবে কান না দিতে। গেইল বড় ব্যাটসম্যান। কিন্তু অবধ্য তো নয়। কে কতটা ভয়ঙ্কর, সে সব ভুলে তার দুর্বলতাটা দেখতে হবে। গর্ডন গ্রিনিজকে যে বলটা আমি তিরাশির ফাইনালে করেছিলাম, সেটা কিন্তু অনেক হোমওয়ার্ক করে করা। পরে ওই ডেলিভারিটা এতটাই বিখ্যাত হয়ে গেল যে, আমি ভুলতে চাইলেও সম্ভব হত না কারণ লোকে মনে করিয়ে দিত। কিন্তু গ্রুপেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ম্যাচে আমি গর্ডনকে নিয়েছিলাম। ওই একই ডেলিভারিতে।
আসলে ফাইনালের আগে বুঝে গিয়েছিলাম যে, ও আমার ভেতরে আসা ডেলিভারিটা ধরতে পারছে না। মনে আছে, লর্ডস ফাইনালে প্রথম ওভারে শুধু আউটসুইং করে গিয়েছিলাম গ্রিনিজের বিরুদ্ধে। পরের ওভারে এসে আচমকা ইনসুইঙ্গার দিই আর গ্রিনিজ বোল্ড। বৃহস্পতিবার ভারতীয় বোলাররাও এটা করুক। প্রথমে গেইলকে একটু ফেলে দিক বিভ্রান্তিতে। তার পর বার করুক সেই বলটা যা ওকে তুলে নিয়ে চলে যাবে। ভারতীয়দের বুঝতে হবে যে, গেইল আর যাই হোক ভিভ রিচার্ডস নয়। গেইল নিয়ে দেখছি চারদিকে একটু বেশিই কথা হচ্ছে। বরং আমি তো বলব, ওয়াংখেড়েতে ভারতই এগিয়ে। জেতা ওদেরই উচিত। কারণ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে যে টিম চাপ বেশি ভাল সামলাতে পারে, তারাই জেতে। আর সে দিক থেকে ধোনির টিম অনেক ভাল জানে চাপ কী ভাবে ম্যানেজ করতে হবে।
মদনলাল
গেইলের বিরুদ্ধে বল করতে গেলে প্রথমেই বোলারকে ভাবতে হবে যে, আমি ওকে আউট করে ছাড়ব। সাধারণ প্লেয়ার আর গ্রেট প্লেয়ারের মধ্যে তফাতটা হল, গ্রেটরা যদি দেখে বোলার ওকে আউট করার জন্য নয়, শুধু থামাতে চাইছে, ম্যাচ থেকে সে-ই তখন বোলারকে আউট করে দেবে! গেইলও কিন্তু তাই করে ছাড়বে।
আসলে ক্যারিবিয়ানদের ভাবনাচিন্তার ধরনটাই ওই রকম। তিরাশির বিশ্বকাপ ফাইনালে রিচার্ডস সহ তিনটে উইকেট আমি তুলেছিলাম। বাকি দু’জন তো বটেই, ভিভের বিরুদ্ধে বল করার সময়ও আমি ভাবতে ভাবতে রান আপের মাথায় গিয়েছি যে, একে আউট করে তবে ছাড়ব! আসলে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে কোনও নরমসরম মনোভাব চলবে না। যদি ওরা এক বার বোঝে বোলার ভয় পেয়ে আছে, তা হলে তার হয়ে গেল। তবে আমি বলছি না, শুধু মানসিক ভাবে পোক্ত থাকলেই গেইলকে পাওয়া সম্ভব। তার সঙ্গে প্ল্যান করে বলটাও করতে হবে।
যেমন গতির হেরফের ঘটিয়ে বল মুভ করানো। নেহরা একজন। তবে আমার মনে হয়, অশ্বিনই ওর সেরা ওষুধ হতে পারে। আর ধোনি হয়তো গেইলের সামনে ওকে শুরুতে আনবেও। গেইলের ইচ্ছেমতো রান তোলা যদি আটকে দিতে পারে অশ্বিন, বলের গতির হেরফরে করতে থাকে, উইকেটটা পেয়ে যেতে পারে। জানি না ওয়াংখেড়ে উইকেট কেমন দাঁড়াবে শেষ পর্যন্ত। যদি টার্ন থাকে, পরিষ্কার অ্যাডভান্টেজ ভারত। পাটা হলে ফিফটি-ফিফটি। তবে কেন জানি না মনে হচ্ছে, ওয়াংখেড়েতে জেতাবে আসলে ব্যাটসম্যানরা নয়। বোলাররা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy