বিরক্ত: প্রথাগত টেস্টের পক্ষেই সওয়াল লায়নের। ফাইল চিত্র
আইসিসি প্রস্তাবিত চার দিনের টেস্ট নিয়ে চাপানউতোর অব্যাহত। নতুন বছরের প্রথম দিনেই এ নিয়ে মুখ খুলেছে অস্ট্রেলিয়া দল। অফস্পিনার নেথান লায়ন মন্তব্য করেছেন, চার দিনের টেস্টের ভাবনা হাস্যকর। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারও এই ভাবনার বিপক্ষে।
লায়নের মন্তব্য টেস্টের মেয়াদ ঘিরে তর্ক-বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) কেভিন রবার্টস জানিয়েছিলেন, তাঁদের বোর্ড চার দিনের টেস্টের ব্যাপারে আগ্রহী। তার পরেই লায়ন আইসিসি-র উদ্যোগকে তুলোধনা করায়, অস্ট্রেলিয়া বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যবধান প্রকট হয়ে উঠেছে। সিইও রবার্টস এমনও বলেছিলেন যে, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁরা চার দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেন। ‘‘আমি পুরোপুরি এর বিরুদ্ধে। আশা করব, আইসিসি এমন ধরনের কিছু করার কথা চিন্তাতেও আনবে না,’’ সোজাসাপটা ভঙ্গিতে বলে দিয়েছেন লায়ন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্বে সব বড় টেস্ট ম্যাচগুলো আপনারা দেখুন। দারুণ সব টেস্ট ম্যাচ একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত যায়। আমি নিজেই কত সে রকম টেস্ট দেখেছি।’’
মনে করা হচ্ছে, অতিরিক্ত ক্রিকেটের কারণে সূচি নিয়ে চাপে রয়েছে আইসিসি। তাই টেস্ট ম্যাচকে চার দিনের করে ফেলতে চাইছে তারা। তারকা স্পিনারের ঢঙে অস্ট্রেলীয় কোচও বলে দিয়েছেন, চার দিনের টেস্ট ম্যাচ করার ভাবনা পরখ করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে এই বদল চান না। ‘‘আমি প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, কখনওই বেশি বদলের পক্ষে আমি নই। আমি তাই পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ দেখলেই বেশি খুশি হব।’’ সঙ্গে অবশ্য যোগ করছেন, ‘‘তবে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে যদি চার দিনের করে ফেলতে হয়, তা হলে ভেবে দেখা যেতেই পারে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, পাঁচ দিনেরই থাকুক।’’
লায়ন অবশ্য ভেবে দেখতেও রাজি নন। তিনি ২০১৪ সালের অ্যাডিলেডে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া রুদ্ধশ্বাস টেস্ট ম্যাচের কথা টেনে আনছেন। যে টেস্ট একেবারে শেষ ঘণ্টায় গিয়ে জেতে অস্ট্রেলিয়া। ‘‘২০১৪-তে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সেই টেস্টের কথা মনে করুন। পঞ্চম দিনের শেষ আধ ঘণ্টায় গিয়ে ফয়সালা হল। ২০১৪-তেই কেপ টাউনের কথা ধরা যাক। মাত্র দু’ওভার বাকি থাকতে রায়ান হ্যারিস বোল্ড করল মর্নি মর্কেলকে আর আমরা জিতলাম। সেই ম্যাচটা তো শেষ দশ মিনিটে গিয়ে ফয়সালা হল।’’ তার পরেই সটান বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি চার দিনের টেস্টের ভক্ত নই। আমার তো মনে হয়, এর ফলে ড্র আরও বেড়ে যাবে।’’ চার দিনের টেস্ট হলে প্রত্যেক দিন ৯৮ ওভার করে হয়। পাঁচ দিনের টেস্টে যেখানে প্রত্যেক দিনে হয় ৯০ ওভার। অস্ট্রেলিয়ায় গত দশ বছরে যে ৪৩টি টেস্টের ফয়সালা হয়েছে, তার ৩৮টি ম্যাচ শেষ হয়েছে ৩৯২ ওভারের মধ্যে অর্থাৎ চার দিনের খেলা হলে যেমন হত, তার মধ্যে।
লায়ন কিন্তু অত সহজে মানতে রাজি নন এবং তিনি আবহাওয়ার কথাও টেনে আনছেন। ‘‘সেটা আর একটা চ্যালেঞ্জ,’’ বলছেন তিনি, ‘‘নানা রকম বাধাবিঘ্নের মধ্যে পড়তে হবে। এটা তো ঠিক পার্কে গিয়ে একটু হেঁটে আসার মতো নয়। এটা টেস্ট ক্রিকেট। শারীরিক এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ জিততে হয়।’’ টেস্ট চার দিনের হয়ে গেলে স্পিনারদের প্রভাব কমে যেতে পারে বলেও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারের গলায় উষ্মার ছাপ স্পষ্ট, ‘‘অনেক খেটেখুটেও দেখা যেতে পারে ফল পেলাম না, কারণ আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেল। আমি তাই চার দিনের টেস্টের বিরোধী।’’ অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক টিম পেন এবং সহ-অধিনায়ক ট্রাভিস হেডও টেস্টকে পাঁচ দিনের রাখার পক্ষে।
বৃষ্টির প্রার্থনা ল্যাঙ্গারের: নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টের আগে একটা অভাবনীয় প্রার্থনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। বৃষ্টির প্রার্থনা! এই প্রার্থনা করার পিছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। ভয়ঙ্কর দাবানলের কারণে সিডনির ক্রিকেট মাঠে একটা ধোঁয়াশার আস্তরণ ছেয়ে আছে। যে জন্য ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘‘আমাদের বাস্তবটা দেখতে হবে। আমাদের এই নিয়ে কিছুই করার নেই। অনেকে হয়তো অনেক কথা বলবেন। কিন্তু ঘটনা হল, এটা একটা ক্রিকেট ম্যাচ। তবে আমি জীবনে সম্ভবত প্রথম প্রার্থনা করছি, টেস্ট ম্যাচ চলার সময় যেন বৃষ্টি হয়। সিডনির এই বৃষ্টি প্রয়োজন আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy