Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
৩-০ করে সিরিজ ধোনিদের

অধিনায়ক আর টিমের ভারসাম্য বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতকে

ওয়ার্ল্ড কাপ ফেভারিটস! ভারতকে এ ভাবে ওয়ান ডে সিরিজটা জিততে দেখে ঠিক এটাই মনে হচ্ছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের যদি লড়ে, যুদ্ধ করে সিরিজটা জিততে হত তা হলে বোধহয় সংশয় থাকত একটু। ভাবতে পারিনি, ইংল্যান্ডকে ওদের দেশেই এ ভাবে ওয়ান ডে-তে নাকানিচোবানি খাইয়ে দেবে ধোনিরা। ভাবতে পারিনি, টেস্ট সিরিজে ১-৩ উড়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে স্বপ্নের এমন একটা সিরিজ জয় দেখতে পাব। এক ম্যাচ বাকি থাকতে স্কোর যেখানে ৩-০।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

ওয়ার্ল্ড কাপ ফেভারিটস!

ভারতকে এ ভাবে ওয়ান ডে সিরিজটা জিততে দেখে ঠিক এটাই মনে হচ্ছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের যদি লড়ে, যুদ্ধ করে সিরিজটা জিততে হত তা হলে বোধহয় সংশয় থাকত একটু। ভাবতে পারিনি, ইংল্যান্ডকে ওদের দেশেই এ ভাবে ওয়ান ডে-তে নাকানিচোবানি খাইয়ে দেবে ধোনিরা। ভাবতে পারিনি, টেস্ট সিরিজে ১-৩ উড়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে স্বপ্নের এমন একটা সিরিজ জয় দেখতে পাব। এক ম্যাচ বাকি থাকতে স্কোর যেখানে ৩-০।

অনেকে বলেবেন, বিশ্বকাপের এখনও ছ’মাস বাকি। এখন থেকে অন্যতম ফেভারিট কী ভাবে বলছি ভারতকে? কারণ যথেষ্ট যুক্তি পাচ্ছি। বিশ্বের আর কোন ওয়ান ডে টিমের এমন দুর্ধর্ষ কম্বিনেশন আছে? ক’টা টিমে অজিঙ্ক রাহানের মতো একটা কপিবুক ক্রিকেটারের সঙ্গে বিরাট কোহলির মতো এক জন এক্স ফ্যাক্টর আছে? ক’টা টিমে দু’জন স্পিনার আছে যাদের ভূমিকাটা টিমে অলরাউন্ডারের? ক’টা টিমে এমএস ধোনি-সুরেশ রায়নার মতো চনমনে ফিনিশার পাওয়া যাবে? ক’টা টিমে একটা ক্যাপ্টেন কুল আছে?

দিন কয়েক আগে কাকে যেন বলতে শুনলাম, অস্ট্রেলিয়া জিম্বাবোয়ের কাছে হেরে গিয়েছে বলে ভারত নাকি ওয়ান ডে-তে এখন এক নম্বর। হাস্যকর। ধোনির এই টিম যে কোনও দেশের যে কোনও পিচে যে কোনও ওয়ান ডে টিমকে মেরে দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটেও। ওর হাতে সেই মশলা আছে। ওর পেস ব্যাটারিতে একজন উমেশ যাদব আছে যে কি না ঘণ্টায় একশো পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটারে বল করতে পারে। আবার একজন ভুবনেশ্বর কুমার আছে, যে কি না বল দু’দিকে মুভ করানোর ক্ষমতা রাখে। ইংল্যান্ডকে পরপর তিনটে ম্যাচে দাঁড় করিয়ে হারানোটা এমনি এমনি সম্ভব নয়। লোকে যতই বলুক, অ্যালিস্টার কুকের টিমটা ওয়ান ডে-তে তেমন দরের নয়। আরে, প্রায় একই টিমটা তো ওদের টেস্ট খেলেছে। স্টুয়ার্ট ব্রড বাদে। ভারতের টেস্ট টিমে একমাত্র রায়না ছিল না। তা হলে?

ফারাকটা আসলে মানসিকতায়। ইন্ডিয়া সাদা ছেড়ে নীল জার্সি একবার পরে ফেলা মানে, অন্য টিম। অন্য চেহারা। অন্য শরীরীভাষা। সিরিজটা দেখে মাঝেমাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, এরাই এক সপ্তাহ আগে কোনও টেস্ট তিন দিনে, কোনও টেস্ট সাড়ে তিন দিনে হেরেছে কি না। একই তো শিখর ধবন। একই তো রাহানে। একই তো ধোনি। টেস্টের বদলে ওয়ান ডে-তে নামলে ইন্ডিয়া তিনটে জায়গায় বদলে যায়।

ফিল্ডিং।

কমফোর্ট জোন।

ধোনির ক্যাপ্টেন্সি।

বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট বলে দেওয়ার মতো এটাও বলব যে, ওয়ান ডে ফিল্ডিংয়ে ভারতই বিশ্বসেরা। দলে এমন কিছু ফিল্ডার আছে যারা তিরিশ থেকে চল্লিশ রান বাঁচিয়ে দেবে। তাতে সুবিধে হল, বোলারদেরও মারাত্মক লাগবে। কারণ রান তো বেরোচ্ছে না। আর কোথাও গিয়ে আমার মনে হয়, ভারতের এই টিমটা যত না টেস্ট খেলতে পছন্দ করে, তার চেয়ে বেশি পছন্দ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলতে। অধিনায়কও তাই। ক্যাপ্টেন ধোনির কমফোর্ট জোনও সীমিত ওভারের ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেট নয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে যে ভাবে ওকে ক্যাপ্টেন্সি করতে দেখলাম, তাতে মনে হল ও খেলাটার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ভাবছে। প্রতিপক্ষ ক্যাপ্টেন ম্যাচ রিডিংয়ে ওর ধারেকাছে পৌঁছতে পারছে না। আগের ম্যাচটায় দেখুন। মোহিত শর্মার লাগল। ও বল করতে নিয়ে এল অম্বাতি রায়ডুকে। কারও পক্ষে ভাবা সম্ভব হবে? এ দিন জো রুট খেলে দিচ্ছে দেখে একটা শর্ট লেগ দাঁড় করিয়ে তুলে নিল। ডেথ ওভারে বিশ্বের নব্বই শতাংশ ক্যাপ্টেন মাঝে স্পিনার এনে পেসার দিয়ে শেষ করে। কিন্তু ধোনি কী করবে, কেউ জানে না। ওর যদি মনে হয়, আজ উমেশের চেয়ে অশ্বিনকে দিয়ে বেশি কাজ হবে, অশ্বিনকে রাখবে শেষ ওভারের জন্য। মাঝের ওভারগুলো করাবে পেসার দিয়ে। ওয়ান ডে-তে ওর মতো প্রো-অ্যাকটিভ অধিনায়ক আর নেই। এমন কেউ নেই যে কি না ধরাবাঁধা প্যাটার্ন ছেড়ে অন্য ভাবে ভাবতে পারে।

আর ক্যাপ্টেন এমন হলে টিমের পারফরম্যান্সে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। ওয়ান ডে সিরিজটা যে যে কারণে বেরোল, এক নম্বর অবশ্যই ধোনির ক্যাপ্টেন্সি। দ্বিতীয়, নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস। টিমটা জানে, ওরা টেস্টে এক রকম। ওয়ান ডে-তে আলাদা। রায়নার মতো চনমনে একজন ওয়ান ডে টিমে থাকাতে সেটা আরও বেড়েছে। এবং অবশ্যই রবি শাস্ত্রী। টিম ডিরেক্টর হিসেবে ওকে আনার সময় অনেকে নাক কুঁচকেছিল। কিন্তু ও কেমন মোটিভেটর একটা উদাহরণ দিই। মনে আছে, ওয়াংখেড়েতে বছর আটেক আগে যখন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আমরা নামছি, তার আগের দিন মুম্বই ড্রেসিংরুমে এসে একটা পেপ টক দিয়েছিল রবি। মুম্বই ড্রেসিংরুমে তখন সচিন, জাহির সবাই ছিল। আমি ওদের ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম কী বলে। আর ম্যাচে কী দাঁড়িয়েছিল, স্কোরকার্ড দেখলেই পেয়ে যাবেন। আসলে যে লোকটা হার্ডকোর পারফর্মার, যে ক্রিকেটজীবন ব্যাটিং অর্ডারে দশ নম্বরে শুরু করে ওপেনিংয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছে, সে কোনও টিমে থাকা মানে চোয়াল শক্ত করে যুদ্ধ করার ব্যাপারটা এসেই যাবে।

মঙ্গলবার অজিঙ্ক রাহানের মধ্যে যার একটা ছাপ পেলাম।

শিখর ধবন টাচে ফিরেছে, প্রায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছিল, পঁচিশ পেরোতেই ওকে খুনে ধবন মনে হয়েছে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওর ফিট মুভমেন্টে আজও খুঁত দেখলাম। মুগ্ধ করে গেল বরং রাহানে। এত নিখুঁত টেকনিক খুব একটা দেখা যায় না। রাহানের ব্যাটিংয়ের মধ্যে দু’টো ব্যাপার সব সময় কাজ করে। মুম্বইমার্কা একটা রানের খিদে। মেরে না ফেললে উইকেট থেকে বার করা যাবে না। যাকে আমরা ‘খারুশ ক্রিকেট’ বলে জানি। প্লাস ক্যালকুলেটেড রিস্ক। একটা শট খেলার সময় রাহানে জানে, তাতে ঝুঁকির পার্সেন্টেজ কতটা। পার্সেন্টেজ কম হলে খেলবে, নইলে না। ওর আগ্রাসনটাও তাই শতাংশ ধরে হয়। আর কোনও কিছুতেই রাহানে প্রভাবিত হয় না দেখেছি। অর্থ, যশ, গ্ল্যামার কিছুই ওর উপর কোনও প্রভাব তৈরি করে না। এ ছেলে সেঞ্চুরি করবে না তো কে করবে?

কখনও কখনও মনে হয় অজিঙ্ক রাহানে ভারতীয় ক্রিকেটের এক্স ফ্যাক্টর হবে না। ফ্যাশনদুরস্ত হবে না। বিরাট সমর্থককুলও ওর পিছন-পিছন হয়তো কখনও যাবে না। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী মহাতারকা বোধহয় ও-ই হবে।

টেস্ট। ওয়ান ডে। টি-টোয়েন্টি। তিনটে ফর্ম্যাটই যে কি না নিখুঁত ভাবে খেলে দিতে পারবে।

অন্য বিষয়গুলি:

deep dasgupta MS Dhoni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy