বিরাট কোহলি (বাঁ দিকে) এবং সুনীল ছেত্রী। — ফাইল চিত্র
বয়স ৩৮ হয়ে গিয়েছে। দেখে কে বলবে! এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলের এক নম্বর তারকা যদি কেউ থেকে থাকেন, তা হলে সেটা সুনীল ছেত্রীই। দেশের ফুটবলে নজিরের ছড়াছড়ি। একের পর এক কীর্তি। দেশের ও ক্লাবের হয়ে খেলে প্রচুর খেতাব, সম্মান জিতেছেন সুনীল। মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তা এখন মাঠের বাইরেও বাড়ছে। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্ব থেকে তাঁর কাছে হাজার হাজার বার্তা রোজ আসে। অসংখ্য মানুষ তাঁর ভক্ত।
কিন্তু সুনীল নিজে কার ভক্ত? অনেকেই হয়তো সেই তথ্য জানেন না। সেই উত্তর পাওয়া গেল এ বার। তাঁকে নিয়ে একটি ধারাবাহিক সিরিজ ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সুনীল বলেছেন, “আমি অনেকেরই ভক্ত। তবে সব সময় তাঁদের কাছে গিয়ে ‘আমি আপনার বিরাট ফ্যান’, এই কথা বলার সময় বা সুযোগ হয় না। তাই আমার কাছে এসে যাঁরা এ কথা বলেন, তাঁদের আমি খুব নম্র ও ভদ্র ভাবে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করি।”
মাঠে সুনীলকে ক্ষিপ্র দেখালেও মানুষ হিসাবে তিনি খুবই সাধারণ। মুখচোরা, সহজে কথা বলতে পারেন না। এমনকি কথা বলতে গেলে তাঁর মুখের ভাষাও হারিয়ে যায়। তাই নিজের মনের কথা সবাইকে বলতেও পারেননি। বেশি সমস্যা হয় বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে। এই প্রসঙ্গে সুনীল বলেছেন, “জানি না কেন এমন হয় আমার। চেষ্টা করলেও ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারি না। নিজের মনের কথা খুব কমই বলতে পেরেছি আমার প্রিয় মানুষদের। যখনই মেরি কম দি-র সঙ্গে দেখা হয়, তখনই উনি বুঝতে পারেন একজন সমর্থক ওঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। অলিম্পিক্সে সোনা জিতে আসার পরে নীরজ চোপড়ার সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় ওরও আমার মতোই সমস্যা হয়েছিল। ওর স্বভাবও অনেকটা আমার মতো।”
খেলাধুলোর বাইরে থাকা মানুষদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে সুনীলের। তেমনই একজন অমিতাভ বচ্চন। সেই সময়েও কথা বলতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক। কী হয়েছিল সেই মুহূর্তে? সুনীলের উত্তর, “মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর শুরুর দিকে হোঁচট খেয়েছিলাম বটে। কিন্তু পরে অনেকটা সাহস জোগাড় করে একটা সিদ্ধান্ত নিই। ভেবেছিলাম ওঁকে বলে দিই, আমি ওঁর বড়সড় এক সমর্থক। তখন স্ত্রী-ও আমার সঙ্গে ছিল।”
একই জিনিস দেখা যায় সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে প্রথম দেখাতেও। স্মৃতি হাতড়ে সুনীল বলেন, “সচিন আর আমি একটা ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমার আর ওঁর প্রথম দেখা। উনি আমার সঙ্গে খুব হেসে, বিনয়ী হয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। আমি নিজেকে একটু গুটিয়ে রাখছিলাম। সব সময় যে একজন বড় মানুষকে দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলি তা নয়। আমি আসলে ওঁকে (সচিন) বোঝাতে পারছিলাম না যে, আমার কাছে বা সারা দেশের কাছে ওঁর গুরুত্ব কতটা। আইএম বিজয়নকে যখন প্রথম দেখি, তখনও এ রকমই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।”
এত জনের সঙ্গে সমস্যা হলেও সুনীলের সঙ্গে দিব্যি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে এক জনের। তিনি বিরাট কোহলি। অন্যদের মতো তাঁকে দেখে কখনও কথা হারিয়ে ফেলেননি সুনীল। গত এপ্রিলে বিরাটের আইপিএল দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর যখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন একদিন সুনীল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যান। শুধু যে আরসিবি-র ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁকে আড্ডা দিতে দেখা গিয়েছিল, তা নয়। তাঁদের সঙ্গে নানা শারীরিক কসরতেও অংশ নিয়েছিলেন।
ফেসবুক, টুইটারেও বিরাট ও সুনীল প্রায়ই একে অপরের সম্পর্কে মন্তব্য করেন। একে অপরের প্রশংসাও করেন। একে অপরের খুবই ভাল বন্ধু তাঁরা। ব্যস্ততার ফাঁকে কী করে এই বন্ধুত্ব বজায় রাখেন সুনীল? ভারত অধিনায়কের উত্তর, “সাধারণ কথাবার্তাই হয়। মাঝে সাঝে বোকা বোকা কথাবার্তাও বলি। প্রচুর মজার মজার কথা বলি। জানি না, এগুলো সবাইকে বলে দেওয়ায় ও আবার অসন্তুষ্ট হবে কি না। এটাও ঠিক যে, মাঝে মধ্যে কিছু গুরুতর আলোচনা হয়। তবে বেশিরভাগই ঠাট্টা-ইয়ার্কি। অবশ্য সারা ক্ষণ আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হতেই থাকে এমনটা নয়। কখনও কখনও মাসের পর মাস কোনও কথাই হয় না।”
কেন বিরাটের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এত দৃঢ়? এ প্রসঙ্গে সুনীলের উত্তর, “আমরা একে অপরকে ভাল বুঝি। দেখা হলেই আগের বার যেখানে কথা শেষ করেছিলাম, সেখান থেকেই ফের কথা শুরু করি। দু’জনকেই অনেক চাপ নিতে হয়। প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেদের পারফরম্যান্স সব সময়ই সেরা জায়গায় রাখার দায় রয়েছে। এ সব নিয়েও আলোচনা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy