হার্দিক পাণ্ড্য। ছবি: পিটিআই।
শনিবার সকালেই এল দুঃসংবাদটা। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন হার্দিক পাণ্ড্য। ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা আড়মোড়া ভেঙে ঠিক করে উঠে বসার আগেই খারাপ খবরটা দেখলেন। আইসিসি বিবৃতি দিয়ে হার্দিকের ছিটকে যাওয়ার খবর জানিয়ে দিল। বদলি ক্রিকেটার, সহ-অধিনায়ক, টিম কম্বিনেশন ইত্যাদি নিয়ে শনিবার গোটা দিনজুড়েই চলল অনেক কথা। দিনের শেষে অবশ্য ‘স্বস্তি’ ভারতীয় ক্রিকেটের, এবং স্বস্তি বাংলারও।
হার্দিক ছিটকে যাওয়ায় গত তিন ম্যাচে খেলেছেন বাংলার পেসার মহম্মদ শামি। তিন ম্যাচে অসাধারণ বল করে ১৪টি উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের সফলতম বোলার হয়েছেন। কিন্তু প্রতিযোগিতার শেষে হার্দিক ফিরলে হয়তো তাঁকে বসতে হত। এখন আর চিন্তা নেই। শামির যা ফর্ম তাতে দল তাঁকে বসানোর দুঃসাহস হয়তো দেখাবে না। ফলে রবিবার ইডেনে তো বটেই, প্রতিযোগিতার বাকি পর্বেও সসম্মানে খেলার কথা শামির।
স্বস্তিতে ভারতের দল পরিচালন সমিতিরও। হার্দিক ফিরলে দলের প্রথম ১১ জনের মধ্যে থেকে কাউকে বাদ দিতে হত। আপাতত সেই নিয়ে ভাবতে হবে না রোহিতদের।
হার্দিকের বার্তা
শনিবার সকালে হার্দিক সমাজমাধ্যমে লেখেন, “ভাবতেই পারছি না যে আমি আর এ বারের বিশ্বকাপে খেলতে পারব না। তবে আমি দলের পাশে আছি। প্রতিটা ম্যাচে, প্রতিটা বলের জন্য গলা ফাটাব। সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করেছেন। সকলকে ধন্যবাদ। এই দলটা সকলকে গর্বিত করার ক্ষমতা রাখে। আমার তরফে ভালবাসা রইল।”
হার্দিকের বদলি
হার্দিকের জায়গায় ভারতীয় দলে যোগ দেবেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। হার্দিক পাণ্ড্য এ বারের বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না। তাঁর জায়গায় ভারতীয় দলে যোগ দেবেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। প্রসিদ্ধ ভারতের হয়ে ১৭টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন। ২৯টি উইকেট আছে তাঁর। ২৭ বছরের এই পেসারের অভিষেক হয় ২০২১ সালে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। শেষ বার ভারতের হয়ে এক দিনের ক্রিকেট খেলেছিলেন বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তিনিও দীর্ঘ দিন চোটের কারণে খেলতে পারছিলেন না। চোট সারিয়ে কিছু দিন আগেই মাঠে ফিরেছেন প্রসিদ্ধ। এ বার তিনি সুযোগ পেয়ে গেলেন বিশ্বকাপে।
কেন প্রসিদ্ধই দলে
কলকাতায় খেলার আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে হার্দিকের পরিবর্ত ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় দ্রাবিড়কে। দলের কোচ বলেন, ‘‘আমাদের রিজার্ভে তিন ধরনের পরিবর্ত ছিল। এক জন স্পিনের, এক জন ব্যাটারের ও এক জন বোলিং অলরাউন্ডারের। আমরা ঠিক করেছিলাম, কোনও ক্রিকেটার চোট পেলে যাকে দরকার তাকেই পরিবর্ত হিসাবে নেওয়া হবে। দলের ভারসাম্য ঠিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ এই ভারসাম্যের কারণেই প্রসিদ্ধকে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দ্রাবিড়। ভারতীয় দলে হার্দিক ছাড়াও এক জন পেস বোলার অলরাউন্ডার রয়েছেন। শার্দূল ঠাকুর। এ ছাড়া রবিচন্দ্রন অশ্বিনও স্পিনার-অলরাউন্ডার। তাই আর অলরাউন্ডারের দিকে তাকায়নি ভারতীয় দল। পরিবর্তে এক জন বোলারকে নিয়েছে তারা। দ্রাবিড় বলেন, ‘‘শার্দূল আর অশ্বিন তো অলরাউন্ডার হিসাবে আছেই। তা হলে আর অলরাউন্ডার নিয়ে কী লাভ? সেই কারণেই প্রসিদ্ধকে নেওয়া হয়েছে।’’
পরিবর্ত সহ-অধিনায়ক
এক ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, কেএল রাহুলকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে চলেছে। সেই ওয়েবসাইটে বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, “বাকি বিশ্বকাপের জন্যে সহ-অধিনায়ক হিসাবে কেএল রাহুলকে নির্বাচিত করা হয়েছে। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান অজিত আগরকর দলের সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি শনিবার সকালেই রাহুলকে সে ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন।” বিশ্বকাপে এত দিন রাহুল বিশেষজ্ঞ কিপার হিসাবে বোলারদের বৈঠকে হাজির থাকছিলেন। এ বার থেকে বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটারদের বৈঠকেও থাকবেন তিনি। দল পরিচালন সমিতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তেও মত থাকবে তাঁর। অনেকে ভেবেছিলেন, যশপ্রীত বুমরাকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু উইকেটকিপার হিসাবে ম্যাচের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাহুলের মতামত বেশি কার্যকরী হতে পারে ভেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে। চলতি বিশ্বকাপে ভাল ফর্মে রয়েছেন রাহুল। ব্যাট হাতে যেমন মিডল অর্ডারে এসে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছেন, তেমনই স্টাম্পের পিছনেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ডিআরএস নেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা নিচ্ছেন। তাঁর নেওয়া ডিআরএস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে দু’টি নির্ভুল ডিআরএস নিয়েছেন। রোহিত জানিয়ে দিয়েছেন, ডিআরএস নেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি রাহুলের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।
হার্দিকের চোট-রহস্য
বল করা শুরু করেও কেন হার্দিক ছিটকে গেলেন তার উত্তরও পাওয়া গিয়েছে শনিবার। সংবাদ সংস্থাকে বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, “আগেই বলা হয়েছিল হার্দিকের হাড়ে কোনও চিড় ধরেনি। স্রেফ সামান্য পেশি ছিঁড়েছে। বেশ কিছু দিন আগেই ও অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু ওর বাঁ পায়ের গোড়ালি হঠাৎ করেই ফুলে যায়। তার পর থেকে আর বল করতে পারেনি। পরের দিকে বল করতে পারবে বলেও মনে হচ্ছিল না।” তাঁর সংযোজন, “এটা এমন কোনও চোট নয় যে ইঞ্জেকশন দিলেই চট করে সেরে যাবে। এই চোট নিয়ে সাবধানে এগোতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে ওর পা ফুলতে শুরু করছে। যত ক্ষণ না সেটা কমবে, তত ক্ষণ অনুশীলন করতে পারবে না।” নতুন করে পা ফোলার পর থেকেই বোঝা গিয়েছিল, বিশ্বকাপের পরের দিকেও হার্দিকের পক্ষে আর খেলা সম্ভব নয়। কারণ এই চোট সারতে সময় লাগবে। ঠিক কত দিন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ভারতের স্বস্তি
হার্দিকের মতো ক্রিকেটার চোট সারিয়ে দলে ফিরে এলে প্রথম একাদশে সুযোগ পেতেন। তখন বাদ দিতে হত কোনও এক জন পেসারকে। অথবা কোনও ব্যাটারকে। কারণ দলে অলরাউন্ডার বলতে শুধু রবীন্দ্র জাডেজা। যিনি স্পিন বল করেন। তাই তাঁকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। ভারতের সব ব্যাটারই রানের মধ্যে রয়েছেন। বোলারেরাও উইকেট পাচ্ছেন। কাকে রেখে কাকে ছাড়বেন, সেই চিন্তা আপাতত করতে হবে না ম্যানেজমেন্টকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে চোট পেয়েছিলেন হার্দিক। পরের তিনটি ম্যাচে হার্দিক খেলতে না পারায় দলে আসেন মহম্মদ শামি। তিনি সেই তিন ম্যাচে ১৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। দু’টি ম্যাচে নিয়েছেন পাঁচটি করে উইকেট। এমন অবস্থায় তাঁকে বাদ দেওয়া কঠিন। যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজও ফর্মে রয়েছেন। কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন তা নিয়ে রীতিমতো মাথার চুল ছিঁড়তে হত দ্রাবিড়দের। অলরাউন্ডার হার্দিক খেলতে না পারায় ভারত পাঁচ জন বোলার নিয়ে খেলছে। বাড়তি ব্যাটার হিসাবে খেলছেন সূর্যকুমার যাদব। তিনিও রান পেয়েছেন। এমন অবস্থায় সূর্যকে বাদ দেওয়াও কঠিন হত। বিশ্বকাপের শুরুর দিকে রান পাচ্ছিলেন না শ্রেয়স আয়ার। তাঁকে বাদ পড়তে হত হার্দিক ফিরে এলে। কিন্তু তিনিও শেষ ম্যাচে ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলে জায়গা পাকা করে ফেলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy