উদয়: ভারতীয় পেস বোলিংয়ের নতুন তারা উমরান মালিক।
স্কুল থেকে ফিরে কোনও রকমে বাড়িতে ব্যাগ রেখেই দৌড়তেন গুজ্জর নগরের মাঠে। হাতে উঠত টেনিস বল। ১২ ওভারের প্রতিটি ম্যাচেই শুরুতে বল করতে পাঠানো হত এই তরুণ পেসারকে। প্রথম দু’ওভারের মধ্যে ওপেনারদের ফিরিয়ে দিতে পারলেই একশো টাকা! শেষের দিকে উইকেট পেলে সে রকম মূল্য দেওয়া হত না। পাড়ার খেলায় নজর কাড়ার পরেই তাঁর সামনে খুলে যায় অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ খেলার রাস্তা।
ম্যাচ-প্রতি সাতশো টাকা আয় করার জন্য ছুটতে হত জম্মুর বিভিন্ন প্রান্তে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে কখনও ঘরে আনতেন মিক্সার, কখনও হেয়ার ড্রায়ার। উমরান মালিক হয়তো তখনও ভাবেননি এগোতে এগোতে এক দিন তাঁর সামনে খুলে যাবে আইপিএলের দরজা। সেখান থেকেই সুযোগ পেয়ে যাবেন ভারতীয় ‘এ’ দলে। ছোটবেলা থেকে বড় পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন না দেখা ছেলেটাই এখন আগামী পেস প্রজন্মের ব্যাটন হাতে দৌড়চ্ছেন।
২০১৭ সালে প্রথম বারের মতো লাল বল হাতে তুলেছিলেন উমরান। ২০১৮-তে ভারতীয় জুনিয়র দলের তখনকার নির্বাচকেরা বৈষ্ণ দেবীর মন্দির ঘুরতে যাওয়ার পথে দেখেন গুজ্জর নগরের মাঠে একটি ছেলে প্রচণ্ড জোরে বল করছে। রাতারাতি জম্মু ও কাশ্মীরের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। টেনিস বল ছেড়ে লাল বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। শুরুর দিকে বেশ সমস্যায় পড়েছিলেন। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গতির সঙ্গে কোনও আপস করেননি।
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে একটি ম্যাচ খেলার পরে উমরানের বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে যান গুজ্জর নগরের একমাত্র কোচিং সেন্টারে। সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন রণধীর সিংহ মানহস। তাঁর কাছেই পাঠ নিতেন আব্দুল সামাদ। রণধীর সিংহের কোচিংয়ে যাত্রা শুরু হয় উমরানেরও। মাত্র ১৮ বছরের একটি ছেলের গতি মুগ্ধ করেছিল জম্মু ও কাশ্মীরের কর্তাদের। অনূর্ধ্ব-২৩ ম্যাচ চলাকালীন মাঠে এসেছিলেন ইরফান পাঠান। প্রাক্তন বাঁ-হাতি পেসারই তখন ‘মেন্টর’ হন সামাদদের। উমরানকে বল করতে দেখে সামাদ ও পরভেজ রসুলের কাছে ইরফান জানতে চেয়েছিলেন, ছেলেটি কে? ওরাই তখন উমরানের পরিচয় দেন। সে দিন থেকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
তরুণ এই পেসারের অ্যাকশন পরিবর্তন করে গতির সঙ্গেই সুইং করাতে সেখান ইরফানই। প্রাপ্তি? ভারতীয় বোলার হিসেবে আইপিএলে দ্রুততম ডেলিভারির নজির (১৫২.৯৫ কিমি-প্রতি ঘণ্টায়)! সেই সঙ্গেই ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার টিকিট হাতে পাওয়া। ১৬ নভেম্বর রাতে জম্মু থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা দেবেন উমরান। কিন্তু কী করে এত দ্রুত উত্থান হল তাঁর?
আইপিএলে তাঁর কীর্তির সাক্ষী প্রত্যেকে। কিন্তু তার পরেও একটি বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে ২১ বছর বয়সি পেসারকে। ভারতীয় দলের নেট বোলার হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ছিলেন প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে। সেখানে আরও একটি কীর্তি গড়েন উমরান। একটিও নো-বল অথবা ওয়াইড বল করেননি নেটে। আউট করেছেন হার্দিক পাণ্ড্য, কে এল রাহুলদের। পাক দ্বৈরথের আগে উমরানের গতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিরাটরা। যাতে হ্যারিস রউফের ইয়র্কার, বাউন্সার সামলাতে তাঁদের সমস্যা না হয়। জাতীয় দলের নেটে তাঁর ছন্দ দেখেই মুগ্ধ হয়ে বিরাট বলেছিলেন, ‘‘বিরিয়ানি খাওয়া ছেড়ে ফিটনেসের উপরে আরও জোর দিতে হবে।’’ সে সব গল্প বাবার সঙ্গে করেন উমরান। তরুণ পেসারের বাবা আব্দুল রশিদ মালিক আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরার থেকে ও অনেক পরামর্শ পেয়েছে। নতুন সাদা বল কী ভাবে ব্যবহার করলে সব চেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেই শিক্ষাও নিয়ে এসেছে। এমনকি গতির সঙ্গে নাক্ল বল মিশিয়ে ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করার পাঠও পেয়েছে ভারতীয় দলের নেটে।’’ গর্বিত বাবা বলে চলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আগেও বহু ক্রিকেটার উঠে এসেছে। কিন্তু কেউ চিরস্থায়ী হয়নি। আমি চাই, উমরান যেন দীর্ঘদিন ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে পারে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই উমরানের জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। তরুণ পেসারের এক্সপ্রেস গতি তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে পৌঁছে দিতে পারে কি না তা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy