এক দিনের বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেখান থেকেই শুরু করলেন মহম্মদ শামি। আইসিসি প্রতিযোগিতায় ফিরে আবার ছন্দে তিনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এক দিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বলে এই কীর্তি গড়েছেন ভারতীয় পেসার।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামার আগে ১৯৭ উইকেট ছিল শামির। ২০০ উইকেটে পৌঁছতে দরকার ছিল ৩ উইকেট। জাকের আলিকে আউট করে ২০০ উইকেটে পৌঁছে যান শামি। ২০০ উইকেট নিতে ৫১২৬ বল করেছেন শামি। বিশ্বে এত কম বলে কোনও বোলার ২০০ উইকেট নিতে পারেননি। এত দিন এই রেকর্ড ছিল মিচেল স্টার্কের দখলে। অস্ট্রেলিয়ার পেসার ২০০ উইকেট নিতে করেছিলেন ৫২৪০ বল।
সবচেয়ে কম ম্যাচের নিরিখে অবশ্য বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারেননি শামি। ২০০ উইকেট নিতে ১০৪ এক দিনের ম্যাচ নিয়েছেন তিনি। ১০৪ ম্যাচে ২০০ উইকেট নিয়েছেন সাকলিন মুস্তাকও। এই তালিকায় রেকর্ড রয়েছে স্টার্কের। ১০২ ম্যাচে ২০০ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার।
আইসিসির এক দিনের প্রতিযোগিতায় ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটও শামির দখলে। ৬০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জাহির খান নিয়েছিলেন ৫৯ উইকেট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে জাহিরকে ছাপিয়ে গেলেন শামি।
আরও পড়ুন:
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) চিকিৎসকেরা বাংলার বোলারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন চেনা ছন্দে। বলের সিম আগের মতোই সোজা থাকছে। সুইংও হচ্ছে আগের মতো। সঠিক লেংথে পড়ে ছুটে যাচ্ছে ব্যাটারের দিকে। বলের গতিও বেড়েছে। ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি শামি। মাঝের ১৪ মাসে গোড়ালির চোট সারাতে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন গত নভেম্বরে। বাংলার হয়ে খেলতে নেমে আর এক বিপত্তি হয়। বাঁ পায়ের হাঁটু ফুলে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বদলে আবার বেঙ্গালুরুর বিমান ধরতে হয় শামিকে। খেলা হয়নি বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। তৈরি হয় শামির দেশের জার্সিতে মাঠে ফেরা নিয়ে নতুন জল্পনা। শামি কিন্তু দ্বিধায় ছিলেন না। বরং বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ফিটনেস ট্রেনিং করে গিয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচদের কথা মতো অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। শুধুই কি তা-ই? না। ওজন কমাতে শেষ দু’মাস প্রিয় বিরিয়ানি মুখে তোলেননি। বদলে ফেলেছেন খাদ্যাভাস। একসঙ্গে মিটিয়েছেন প্রাতরাশ এবং মধ্যাহ্নভোজের খিদে। তা-ও শুধু ফল দিয়ে। নৈশভোজ সেরেছেন দুটো রুটি দিয়ে। সঙ্গে পরিমিত সব্জি এবং মুরগির মাংস। তা-ও সিদ্ধ।
সংযম। অথচ শামি কোনও দিন ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবে পরিচিত নন। মনের আনন্দে বল করেন। মনের আনন্দে খাসির মাংস, কাবাবও খান। ক্যালোরি মেপে চলা তাঁর অভিধানে ছিল না কখনও। তাঁর খাদ্যতালিকায় বিধিনিষেধের প্রবেশ নিষেধ। সেই শামিই দিনের পর দিন ফল, দই খেয়ে খিদে মিটিয়েছেন। বিরিয়ানির দিকে ফিরেও তাকাননি। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন চিকিৎসক, ট্রেনারদের নির্দেশ। এই সবই করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার জন্য। শামিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ওজন কমিয়েছেন বেশ খানিকটা। ইংল্যান্ড সিরিজ়ের আগে অর্শদীপ সিংহ বলেছিলেন, নেটে শামিকে দেখে ২২ বছরের যুবক লাগছে। খুব ভুল বলেননি সর্দার। নতুন শামি বেশ ছিপছিপে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ড সিরিজ়ে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন হয়েছে শামির। সেখানে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, প্রতি ম্যাচে উন্নতি হচ্ছে তাঁর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহ না থাকায় ভারতের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শামি। প্রথম ম্যাচে ভাল বল করলেন তিনি। প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারকে আউট করেন তিনি। প্রথম স্পেলে মেহেদি হাসান মিরাজেরও উইকেট নেন শামি। তৃতীয় স্পেলে ফিরে এসে সেই শামিই আবার বাংলাদেশের জুটি ভাঙেন। জাকেরকে আউট করেন তিনি। নিজের নবম ওভারে আউট করেন তানজিম হাসান সাকিবকে। শেষ ওভারে নেন তাসকিন আহমেদের উইকেট। ম্যাচে ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি।