ভারতের টেস্ট দল। — ফাইল চিত্র
দু’বছর আগে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে সিরিজ় শেষ হওয়ার পর তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলি বদলের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সিরিজে খারাপ খেলার পর চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রাহানের বাদ পড়া কার্যত নিশ্চিত ছিল। তার আগের বছরে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে গো হারা হারের পরেও একই ডাক উঠেছিল। দেখা গেল, ২০২৩-এ এসেও সেই ‘বদল’ হয়নি, যা রহস্যজনকই নয়, অবাক করার মতোই।
কোহলির সেই ডাকের ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে সীমিত ওভারের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে কোহলি নিজেই টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যান। রাতারাতি কোহলির সেই ডাকের ঠাঁই হয় পিছনের সারিতে। মনে হয়েছিল রোহিত শর্মা এবং রাহুল দ্রাবিড় হয়তো নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসবেন। বাস্তবে দেখা গেল, কাউন্টির দ্বিতীয় ডিভিশনে তৃতীয় শ্রেণির বোলারদের খেলা নির্বাচকদের বোকা বানানো পুজারা আবার ফিরে এলেন দলে। নেওয়া হল অজিঙ্ক রাহানেকেও। গোটা ক্রিকেটজীবনে অজস্র বার চোট পাওয়া (নিজেও বোধহয় ভুলে গিয়েছেন সংখ্যাটা) উমেশ যাদব বিশ্ব টেস্ট ফাইনালের মতো ম্যাচে নেমে পড়লেন। ভারতীয় ক্রিকেটে নির্বাচকদের অদূরদর্শিতা কতটা, এই প্রতিটি ঘটনা তার সাক্ষী।
বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে হারের পর রাতারাতি বিরাট ঝাঁকুনি হয়তো হবে না। কিন্তু কিছু ক্রিকেটারের মৌরসিপাট্টা হয়তো শেষ হতে চলেছে এ বার। সবার আগে কোপ পড়তে পারে পুজারা এবং উমেশের উপরেই। প্রশ্ন রয়েছে আরও একাধিক ক্রিকেটারকে নিয়ে। শ্রেয়স আয়ার (ঘন ঘন চোট পান), রোহিত শর্মা (হয়তো স্রেফ অধিনায়ক বলে টিকে রয়েছেন), কেএল রাহুলকে (কবে ফিরবেন ঠিক নেই) নিয়ে আগামী দিনে নির্বাচনী বৈঠকে ঝড় উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এমন নয় যে তরুণ ক্রিকেটাররা তৈরি নেই। হাতের কাছে রয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, অভিমন্যু ঈশ্বরণ, রজত পাটীদার, সরফরাজ খান, মুকেশ কুমাররা। টেস্ট দলে আসার মতো অভিজ্ঞতা এঁদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। কিন্তু এত দিন পরেও তাঁদের নেওয়া হয় না, অথবা থেকে যেতে হয় ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসাবেই।
সোমবার থেকে ঠিক এক মাস পরে পরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের লড়াই শুরু হচ্ছে। বিশ্বকাপে রোহিত ভারতের অন্যতম অস্ত্র। তাই তাঁকে হয়তো বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। একই জিনিস প্রযোজ্য বিরাট কোহলি, মহম্মদ শামি-সহ আরও কিছু ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেও। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ভারতের কাছে নতুন ক্রিকেটারদের দেখে নেওয়ার সবচেয়ে ভাল সুযোগ।
রোহিত না খেললে শুভমনের সঙ্গে ওপেন করানো যেতে পারে যশস্বীকে। নির্বাচকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন শুভমনকে মিডল অর্ডারে খেলানোর। সে ক্ষেত্রে রুতুরাজ গায়কোয়াড় রয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলা অভিমন্যুকে তিনে নামানো যেতে পারে। যদি ভারতের ‘এ’ দলের সফর আবার চালু করা হয়, তা হলে তিলক বর্মা, সাই সুদর্শন, রিঙ্কু সিংহ, অভিষেক শর্মা, যশ ধুলকেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের জন্যে তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।
বস্তুত, ‘এ’ দলের সফর দীর্ঘ দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। এ বছর একটিও হয়নি। তরুণ ক্রিকেটারদের তৈরি করার ব্যাপারে এই সফরের কোনও বিকল্প নেই। সেখানে বোর্ড ঠিক উল্টো কাজই করেছে। ক্ষুব্ধ ভারতের প্রাক্তন এক নির্বাচক। সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “উমেশের মতো বোলার কেরিয়ারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যদি এ দলের সফরও না করানো হয়, তা হলে বুঝবেন কী করে কারা তৈরি। একটা সময় ছিল যখন মায়াঙ্ক আগরওয়াল, ঋষভ পন্থ, হনুমা বিহারি, মহম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনিরা একের পর এক ‘এ’ সফর খেলে উঠে এসেছে। এখন আপনি জানেনই না কে তৈরি আছে।”
ব্যাটারদের মতো বোলিং বিভাগেও ভারতের হাতে ক্রিকেটার রয়েছে। আবেশ খান, আরশদীপ সিংহ, উমরান মালিক, মুকেশ কুমারের উপর সময় দিলে এবং সঠিক ভাবে তৈরি করলে তাঁরাও ভবিষ্যতে তারকা হতে পারেন। কিন্তু সেই সুযোগই দেওয়া যাচ্ছে ‘এ’ দলের সফর না থাকায়।
প্রাক্তন নির্বাচক দেবাং গান্ধী বলেছেন, “একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। নির্বাচন মানেই কিছু ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া। তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার একটা মিশেল থাকতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী ভাবনাচিন্তা দরকার। আগামী দু’বছরের জন্যে ভাবতে হবে। যশস্বী এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যে তৈরি। রঞ্জি, ইরানি, দলীপ ট্রফিতে দ্বিশতরান রয়েছে। এখন ওকে নেবেন না তো কবে নেবেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy